বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

রূপকথার জয়ে ফাইনালে নিউজিল্যান্ড

রূপকথার জয়ে ফাইনালে নিউজিল্যান্ড

ওয়ানডে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হারিয়ে টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে তোলার নায়ক ড্যারেল মিচেলকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন -এএফপি

অবশেষে ঘুচল নিউজিল্যান্ডের ‘ইংলিশ-দুঃখ’! দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলায় হয়নি, ফিরিয়ে দিয়েছে লন্ডনের লর্ডসও, কিন্তু এবার আবুধাবি যেন ব্ল্যাক ক্যাপসদের উজাড় করে দিল। রূপকথার এক জয়ে প্রথমবারের মতো টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে গেল নিউজিল্যান্ড।

২০১৬ সালে টি-২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে দিল্লিতে ইংল্যান্ডের সঙ্গে হেরে বিদায়ঘণ্টা বেজে গিয়েছিল কিউইদের। ২০১৯ সালে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপেও ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গী হয় ‘ইংলিশ-দুঃখ’। মাঠের লড়াইয়ে না হেরেও বাউন্ডারির ‘অদ্ভুত’ নিয়মে শিরোপা হাতছাড়া হয়। কিন্তু তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের নকআউটে নিউজিল্যান্ডের সামনে আবারও সেই ইংল্যান্ড। কিন্তু এবার আর সুযোগটা হাতছাড়া করেনি কিউইরা। ইংল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়ে এগিয়ে গেল শিরোপার চূড়ান্ত পর্বে।

কালকের ম্যাচটি ছিল নাটকীয়তায় ভরা। শেষ ৪ ওভারে নিউজিল্যান্ডের দরকার ছিল ৫৭ রান। টপ অর্ডারের সেরা চার ব্যাটসম্যান তখন ড্রেসিংরুমে। এমন সময় কে ভেবেছিল এই ম্যাচটা জিতবে নিউজিল্যান্ড! ইংলিশ ভক্তরা যেন বিজয়ের আগাম উৎসব শুরু করে দিয়েছেন। সেরা বোলারের হাতে বল তুলে দিলেন ইংলিশ অধিনায়ক ইয়ন মরগান। কিন্তু কিউই ব্যাটসম্যান জিমি ওই ওভারকেই টার্গেট করলেন। ক্রিস জর্দানের সেই ওভার থেকে আসে ২২ রান। পরের ওভারে সেরা স্পিনার আদিল রশিদের বলে আসে ১৪ রান। ইনিংসের শেষ দুই ওভারে তখন জয়ের জন্য নিউজিল্যান্ডের দরকার ছিল ২০ রান। কিন্তু কিউইদের যেন তর সইছিল না। তাই তো ক্রিস ওকসের এক ওভারেই খেলা শেষ করে দিলেন। ৬ বল আগেই জয় নিশ্চিত হয়ে যায় কিউইদের। ৪৭ বলে ৭২ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস খেলে নায়ক হয়ে গেলেন কিউই ব্যাটসম্যান ড্যারিল মিচেল। এই ম্যাচে ৩৮ বলে ৪৬ রানের ইনিংস খেলা ডেভন কনওয়ের অবদানও কম নয়। কারণ, কাল ইংল্যান্ডের দেওয়া ১৬৭ রানের পাহাড় টপকাতে নেমে মাত্র ১৩ রানেই সেরা দুই ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ফেলে নিউজিল্যান্ড। মার্টিন গাপটিল ও অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন কাল দুই অঙ্কের কোটাতেই পৌঁছাতে পারেননি। কিন্তু তৃতীয় উইকেটে ওপেনার মিচেলের সঙ্গে ৮২ রানের দারুণ একটি জুটি গড়েন কনওয়ে। এই জুটিই নিউজিল্যান্ডকে গড়ে দেয় জয়ের ভিত। তারপর কনওয়ে আউট হওয়ার পর জিমি নিশাম বাইশ গজে গিয়ে মাত্র ১১ বলে ২৭ রান করে পথটা আরও সহজ করে দেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতে দিবা-রাত্রির ম্যাচে টস হচ্ছে ‘এক্স-ফ্যাক্টর’! যে দল আগে ফিল্ডিং করে ম্যাচের ভাগ্য যেন তাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু কাল ইংলিশরা টস হেরে ব্যাট করতে নেমেও করল ১৬৬ রানের চ্যালেঞ্জিং এক স্কোর। প্রথম ইনিংসেই তারা টেনশনকে যেন পাশের আরব সাগরে ছুড়ে ফেলে দিল। লো-স্কোরিং আমিরাতের উইকেটে ১৬৭ রানের পাহাড় টপকাতে যাওয়া যেন বাড়তি চাপ। সেই চাপে যেন শুরুতেই একটা ধাক্কা খায় নিউজিল্যান্ড। কিন্তু স্লগ ওভারে ব্যাটিং তান্ডব দেখিয়ে ঠিকই জয়টা তুলে নিল কিউইরা।  কাল ইংল্যান্ডের শুরুটাই ভালো হয়নি। এমনিতেই ‘পাওয়ার হিটার’ জেসন রয় নেই, তারপর আরেক ওপেনার জস বাটলারও আসল ‘পাওয়ার’ দেখাতে পারলেন না। হঠাৎ করে ওপেনিংয়ে সুযোগ পাওয়া জনি বেয়ারস্টো ১৭ বল থেকে করলেন মাত্র ১৩ রান, আর বাটলার আউট হওয়ার আগে করলেন ২৪ বলে ২৯ রান। দুই ওপেনারের ইনিংসে কোনো ছক্কাও নেই। তাই বলে ওপেনারদের ‘খারাপ দিনে’ কি মিডল অর্ডার হাত গুটিয়ে বসে থাকবে? মোটেও না। পাওয়ার হিটিংয়ের কাজটা শুরু করলেন তিনে নামা ডেভিড মালান ও চার নম্বর ব্যাটসম্যান মঈন আলী। মালান মাত্র ৩০ বলে খেললেন ৪১ রানের ইনিংস, আর মঈন এক প্রান্ত আগলে রেখে শেষ ৩৭ বলে ৫১ রান করে অপরাজিত রইলেন। ইংল্যান্ড ৪ উইকেটে হারিয়ে  করে ১৬৬ রান। কিন্তু বোলারদের ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত জিততে পারেনি ইংলিশরা। ম্যাচ শেষে কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন বলেন, ‘আমরা সব সময় একটি দল হিসেবে খেলার চেষ্টা করি। একে অন্যের জন্য খেলি। এটি একটি অবিশাস্য ম্যাচ। স্নায়ুচাপের এই ম্যাচে আমরা আমাদের সামর্থ্য সবার সামনে প্রদর্শন করেছি।’ এদিকে হারের পরও কারও দোষ খুঁজতে যাননি ইংলিশ অধিনায়ক ইয়ন মরগান। তিনি বলেন, ‘এই জয়ে পুরো কৃতিত্ব কেন এবং তার দলের। ওরা সত্যিই অসাধারণ খেলেছে। উইকেট যে খুব ভালো ছিল তা নয়। আমরা যখন ব্যাট করছিলাম তখন ছক্কার জন্য অনেক কষ্ট করেছি। অথচ মিচেল-নিশামরা কী দারুণভাবে একেকটি ছক্কা হাঁকালো। এমন জয় তাদের প্রাপ্যই ছিল।’

 

স্কোর কার্ড

ইংল্যান্ড :  ১৬৬/৪, ২০ ওভার ( জশ বাটলার ২৯, জনি বেয়ারস্টো ১৩, ডেভিড মালান ৪১, মঈন আলি ৫১*, লিয়াম লিভিংস্টোন ১৭, ইউয়ান মরগান ৪*। টিম সাউদি ১/২৪, অ্যাডাম মিলনে ১/৩১, আইএস সোধি ১/৩২, জেমস নিশাম ১/১৮)।

নিউজিল্যান্ড : ১৬৭/৫, ১৯ ওভার ( ড্যারেল মিচেল ৭২*, মার্টিন গাপটিল ৪, কেন উইলিয়ামসন ৫, ডেভন কনওয়ে ৪৬, গ্লেন ফিলিপস ২, জেমস নিশাম ২৭। ক্রিস ওয়ক্স ২/৩৬, আদিল রশিদ ১/৩৯, মার্ক ওড ০/৩৪, লিয়াম লিভিংস্টোন ২/২২)।

ফল : নিউজিল্যান্ড ৫ উইকেটে জয়ী।

ম্যাচসেরা : ড্যারেল মিচেল।

সর্বশেষ খবর