শুক্রবার, ১২ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

রুদ্ধশ্বাস জয়ে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া

রুদ্ধশ্বাস জয়ে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া

টানা ৩ ছক্কায় পাকিস্তানের স্বপ্ন ভেঙে দেন ম্যাথু ওয়েড। টি-২০ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে অবিশ্বাস্য জয়ের পর অস্ট্রেলিয়ার দুই নায়ক ম্যাথু ওয়েড ও মার্কাস স্টয়নিস। ১৪ নভেম্বর ক্রিকেট বিশ্ব পাবে নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন -এএফপি

একই চিত্রনাট্য। একই রকম উত্তেজনা। সেই একই রকম শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। ম্যাচের ফলও একই। কেবল দুই সেমিফাইনালে যেন ভিন্ন দুটি ভেন্যুতে ভিন্ন ভিন্ন দল অংশ নিল। দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে কাল রোমাঞ্চকর ম্যাচে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মতো টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে গেল অস্ট্রেলিয়া। আগের দিন আবুধাবিতে একইভাবে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল ব্ল্যাক ক্যাপসরা। টি-২০ বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ফাইনালে মুখোমুখি হচ্চে তাসমান পাড়ের দুই নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত এই ফরম্যাটে এবার নতুন চ্যাম্পিয়ন পেতে যাচ্ছে বিশ্ব। গতকাল জয়ের জন্য শেষ দুই ওভারে অস্ট্রেলিয়ার দরকার ছিল ২২। কিন্তু ম্যাথু ওয়েড শেষ ওভারের আগেই খেলা শেষ করে দেন। শেষ তিন বলেই তিন ছক্কা হাঁকান অসি তারকা। শাহিন আফ্রিদির বলে স্কুপ করে ফাইন লেগের ওপর দিয়ে উড়িয়ে বল পাঠিয়ে দেন গ্যালারিতে। পরের বলটি কাটার দেওয়ার চেষ্টা করেন শাহিন। কিন্তু ওয়েব বুঝতে পেরে মিড উইকেট দিয়ে বাউন্ডারির বাইরে পাঠান বল। ওভারের শেষ বলে স্কুপ করে আবারও ছক্কা। ৬ বল আগেই ম্যাচ শেষ। যে শাহীন আফ্রিদি প্রথম তিন ওভারে দিয়েছেন মাত্র ১৩ রান, তিনিই কিনা নিজের শেষ ওভারে দিলেন ২২ রান। এই ম্যাচে জিততে পারত পাকিস্তানও। কিন্তু ১৯তম ওভারের তৃতীয় বলে ডিপ মিড উইকেটে ওয়েডের ক্যাস মিস করেন হাসান আলী। এরপর তো ওয়েডের ছক্কার হ্যাটট্রিকে ফাইনালেই উঠে গেল অস্ট্রেলিয়া। গতকাল পাকিস্তানের দেওয়া ১৭৭ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে অস্ট্রেলিয়ার শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। পাওয়ার প্লেতে তারা ৫২ রান করে। এরপর ওয়ার্নারের এক ভুলে ম্যাচ পাকিস্তানের গ্রিপে চলে যায়। ৩০ বলে ৪৯ রান করে ক্যাচ হয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরেন অসি ওপেনার। পরে রিপ্লেতে দেখা যায়, বল ওয়ার্নারের ব্যাটেই লাগেনি। স্পিনার সাদাব খানের বল গ্রিপ করে সজোরে ক্যাচের আবেদন করলেন উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ রিজওয়ান। সঙ্গে সঙ্গেই নিউজিল্যান্ডের আম্পায়ার ক্রিস গ্যাফনি আউটের সিদ্ধান্ত দিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া জিতে যাওয়ায় আর কোনো বিতর্ক ওঠেনি। কাল ওয়ার্নারের আউটের পর পাল্টে গিয়েছিল ম্যাচের চিত্র। ১৬তম ওভার শেষে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ছিল ১২৭/৫। এরপর মার্কাস স্টয়নিস ও ম্যাথু ওয়েড ক্যারিশমায় দুর্দান্ত জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। মাত্র ১৭ বলে ৪১ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হয়েছেন ওয়েড। স্টয়নিস ৩১ বলে করেছেন ৪০ রান। দলের পরাজয়ের দিনে সাদাব খানের ২৬ বলে ৪ উইকেট শিকারের ক্যারিশম্যাটিক বোলিং ফিগারটা যেন আড়ালেই পড়ে গেল।

‘টস ফ্যাক্টর’-সংযুক্ত আরব আমিরাতে যেন ম্যাচ ফ্যাক্টর হয়ে গেছে। দিবা-রাত্রির ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করা দলের জন্য জয় যেন সোনার হরিণ! প্রথম সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে ১৬৭ রানের টার্গেট দিয়েও জিততে পারেনি ইংল্যান্ড। গতকাল অস্ট্রেলিয়াকে ১৭৭ রানের টার্গেট দিয়েও জিততে পারল না পাকিস্তান।

তবে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। খেলেছেন ৫২ বলে ৬৭ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। তবে দু-দুবার নতুন জীবন পেয়েছেন। রানের খাতা খোলার আগে তার ক্যাচ ফেলে দেন ওয়ার্নার, ২০ রানের মাথায় আউটের সুযোগ নষ্ট করেন জাম্পা। তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামা ফখর জামান খেলেছেন ৩২ বলে ৫৫ রানের এক সাইক্লোন ইনিংস। ৩টি চারের সঙ্গে ৪টি ছক্কা। হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন মাত্র ৩১ বলে। যদিও গতকাল একবার নতুন জীবন পেয়েছেন ফখর জামান। ৪০ রানের মাথায় লং অফে সহজ ক্যাচটি মিস করেন স্টিভেন স্মিথ। তবে অস্ট্রেলিয়ার তিন ক্যাচ মিসের বিপরীতে পাকিস্তানের এক ক্যাচ মিসের জন্য দিতে হয়েছে চরম মূল্য। টি-২০ বড় বিচিত্র এক ক্রিকেট ফরম্যাট। এখানে কখন যে কী ঘটবে তা বলা কঠিন। নাটকীয় দুই সেমিফাইনালও সেই সাক্ষ্যই দিচ্ছে। এখন ফাইনালে যে আরও কী রহস্য অপেক্ষা করছে তা কে জানে!

তবে মজার বিষয় হচ্ছে, এই বিশ্বকাপের ঠিক পূর্ব মূহূর্তে যে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে টি-২০ সিরিজে উড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ সেই দুই দলই এখন ফাইনাল খেলছে। আর লাল-সবুজরা টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বাজে পারফর্ম করে সবার আগে দেশে ফিরে গেছে। টি-২০ বড় বিচিত্র এক ক্রিকেট ফরম্যাট। এখানে কখন যে কী ঘটবে তা বলা কঠিন। নাটকীয় দুই সেমিফাইনালও সেই সাক্ষ্যই দিচ্ছে। এখন ফাইনালে যে আরও কী রহস্য অপেক্ষা করছে তা কে জানে!

 

স্কোর কার্ড

পাকিস্তান : ১৭৬/৪, ২০ ওভার (মোহাম্মদ রিজওয়ান ৬৭, বাবর আজম ৩৯, ফখরজামান ৫৫*, আসিফ আলি ০, শোয়েব মালিক ১, মোহাম্মদ হাফিজ ১*; মিচেল স্টার্ক ৪-০-৩৮-২, জশ হ্যাজলওড ৪-০-৪৯-০, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ৩-০-২০-০, প্যাট কামিন্স ৪-০-৩০-১, অৗডাম জাম্পা ৪-০-২২-১, মিচেল মার্শ ১-০-১১-০)।

অস্ট্রেলিয়া : ১৭৭/৫, ১৯ ওভার (ডেভিড ওয়ার্নার ৪৯, অ্যারন ফিঞ্চ ০, মিচেল মার্শ ২৮, স্টিভেন স্মিথ ৫, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ৭, মর্কাস স্টয়নিশ ৪০*, ম্যাথু ওয়েড ৪১*। শাহিন আফ্রিদি ৪-০৩৫-১, ইমাদ ওয়াসিম ৩-০-২৫-০, হারসি রওফ ৩-০-৩২-০, হাসান আলি ৪-০-৪৪-০, শাদাব খান ৪-০-২৬-৪, মোহাম্মদ হাফিজ ১-০-১৩-১৩)।

ফল : অস্ট্রেলিয়া ৫ উইকেটে জয়ী।

ম্যাচসেরা : ম্যাথু ওয়েড।

সর্বশেষ খবর