শনিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

মধ্যরাতে শিকল ভাঙার পদযাত্রা

নারীদের স্লোগানে মুখরিত ঢাকার রাজপথ

নিজস্ব প্রতিবেদক

মধ্যরাতে শিকল ভাঙার পদযাত্রা

সাক্ষ্য আইনের বিতর্কিত ধারা বাতিলের দাবিতে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে রাজধানীতে পদযাত্রা করেন অর্ধশতাধিক নারী -বাংলাদেশ প্রতিদিন

সাক্ষ্য আইনের বিতর্কিত ১৫৫ ধারার ৪ অনুচ্ছেদ বাতিলের দাবিতে মধ্যরাতে রাজধানীতে পদযাত্রা করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অর্ধশতাধিক নারী। ঢাকার বনানীর রেইনট্রি হোটেলের ধর্ষণ মামলার রায়ে বিচারকের একটি বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তারা বৃহস্পতিবার রাতে এই ‘শিকল ভাঙার পদযাত্রা’ করেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ থেকে শুরু হয়ে এই পদযাত্রা মানিক মিয়া এভিনিউতে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। এ সময় মশাল হাতে নারীদের স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে ঢাকার রাজপথ। আয়োজকরা জানিয়েছেন, প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সন্ধ্যা থেকেই  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রতে (টিএসসি) ফেস্টুন লেখা, আঁকা, রং করা ও মশাল তৈরির কাজ শুরু হয়। পরে মধ্যরাতে শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, সংগীতশিল্পী, অভিনয়শিল্পী, মানবাধিকারকর্মীসহ বিভিন্ন পেশার নারীদের অংশগ্রহণে শাহবাগ জাদুঘরের সামনে থেকে শুরু হয় পদযাত্রা। মিরপুর রোডের সিটি কলেজ, কলাবাগান হয়ে মানিক মিয়া এভিনিউতে গিয়ে শেষ হয়। গৃহ, কর্মস্থল, গণপরিবহনে নারীর জন্য নিরাপদ বাসযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি উঠে আসে নারীদের কণ্ঠে। পদযাত্রার একজন সংগঠক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রাপ্তী তাপসী বলেন, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিশেষে শুধু লৈঙ্গিক পরিচয় নারী হওয়ার কারণে জুলুম, অত্যাচার, বৈষম্য সহ্য করতে হয় প্রতিনিয়ত। নিপীড়নের বিচার চাইতে গেলে রাষ্ট্র চারিত্রিক সনদপত্র দেখতে চায়। তার বিরুদ্ধেই আমাদের এই প্রতিবাদ। তিনি আরও বলেন, আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এ ধরনের অবমাননাকর ও বিদ্বেষমূলক চর্চা দেখা যায়। এর মধ্য দিয়ে নারীর প্রতি নিপীড়নের বৈধতা দান করা হয়। আমাদের এই পদযাত্রা এই চর্চাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর জন্য। এই শেকল আমরা ভাঙতে চাই। আমরা অনতিবিলম্বে সাক্ষ্য আইন-১৮৭২ এর ১৫৫(৪) ধারাটি বাতিল করার দাবি জানাই।

আয়োজকরা জানান, সাক্ষ্য আইন-১৮৭২ এর ১৫৫(৪) ধারা অনুসারে, কোনো ব্যক্তি যখন বলাৎকার বা শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে ফৌজদারিতে সোপর্দ হন, তখন দেখানো যেতে পারে যে ‘অভিযোগকারিণী’ সাধারণভাবে দুশ্চরিত্রা। আইনের এই ধারায় উল্লিখিত শব্দগুলো থেকে খুবই পরিষ্কার যে, শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনা একজন নারীর চরিত্র কেমন সেটি দিয়ে তার অভিযোগের ন্যায্যতা বিচার করা হয়। এতে স্পষ্ট যে রাষ্ট্র খুবই স্পষ্ট ও সহজ উপায়ে একটা জঘন্য অপরাধকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করতেই অস্বীকার করছে।

পদযাত্রায় অংশ নেওয়া অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ বলেন, কেবল নারীর নেতৃত্ব যেমন নারীর সার্বিক অবস্থায় কোনো উন্নতি করে না, তেমনি শুধু নারী বিচারক হলেই সুচিন্তিত ও ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে এমন নিশ্চয়তা নেই। রায়ের পর্যবেক্ষণের নিন্দা জানিয়ে এর প্রতিবাদে ও সাক্ষ্য আইনের বিতর্কিত ধারা বাতিলের দাবিতে অন্যদের একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর