সোমবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

সেই বিচারকের বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহার

নিজস্ব প্রতিবেদক

ধর্ষণের ৭২ ঘণ্টার পর মামলা না নিতে পর্যবেক্ষণ দিয়ে রায় দেওয়া ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক মোছা. কামরুন্নাহারের বিচারিক ক্ষমতা সাময়িক প্রত্যাহার করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাকে আদালত থেকে প্রত্যাহার করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে। গতকাল সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও স্পেশাল অফিসার মোহাম্মদ সাইফুর রহমানের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এদিকে সকালে আদালতে এলেও প্রধান বিচারপতির নির্দেশ পেয়ে এজলাসে বসেননি বিচারক কামরুন্নাহার। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে তার এজলাসে বসার কথা ছিল।

সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘প্রধান বিচারপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মহোদয়গণের আলোচনাক্রমে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহারকে ১৪ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৯টা হতে আদালতে না বসার নির্দেশ প্রদান করেছেন।’ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘কামরুন্নাহারের বিচারিক ক্ষমতা সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করে তাকে বর্তমান কর্মস্থল হতে প্রত্যাহার করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত করার জন্য বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট হতে আইন মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।’

বিকালে বিচারক কামরুন্নাহারকে আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়েল উপসচিব (প্রশাসন) শেখ গোলাম মাহবুব স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭, ঢাকা এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) বেগম  মোছা. কামরুন্নাহারকে বর্তমান কর্মস্থল হতে প্রত্যাহারপূর্বক আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত করা হলো। এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এম এম আমিন উদ্দিন বলেছেন, প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতিদের নিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্ট যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটি সব বিচারকের জন্য একটি বার্তা। এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে কোনো কিছু করা যাবে না, আশা করি এখন তারা এটা বুঝবেন। রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণ মামলার খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল করা হবে বলেও জানান অ্যাটর্নি জেনারেল।

এর আগে গত ১১ নভেম্বর রাজধানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণের মামলার রায় ঘোষণা করেন বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহার। রায়ে সব আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে। খালাস পাওয়া পাঁচ আসামি হলেন- আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার হোসেনের ছেলে শাফাত আহমেদ, শাফাত আহমেদের বন্ধু সাদমান সাকিফ, নাঈম আশরাফ, শাফাতের দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, মামলার দুই ভিকটিম আগে থেকেই সেক্সুয়াল কাজে অভ্যস্ত। তারা স্বেচ্ছায় হোটেলে গেছেন। সেখানে গিয়ে সুইমিং করেছেন। ঘটনার ৩৮ দিন পর তারা বললেন, ‘আমরা ধর্ষণের শিকার হয়েছি’। অহেতুক তদন্ত কর্মকর্তা প্রভাবিত হয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছেন। এতে আদালতের ৯৪ কার্যদিবস নষ্ট হয়েছে। এরপর থেকে পুলিশকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। এ ছাড়া এরপর থেকে ধর্ষণের ৭২ ঘণ্টা পর যদি কেউ মামলা করতে যায়- তা না নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।

এ রায়ের পর দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। বিচারকের পর্যবেক্ষণ নিয়ে  আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি রায়ের বিষয়বস্তু নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। অবজারভেশনে (৭২ ঘণ্টা পরে পুলিশ যেন কোনো ধর্ষণ মামলার এজাহার না নেয়) বিচারক যে বক্তব্য দিয়েছেন এ সম্পর্কে আমি বলতে পারি, এটা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং অসাংবিধানিক।’

সর্বশেষ খবর