ধর্ষণের ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে পুলিশকে মামলা না নেওয়ার পর্যবেক্ষণ দিয়ে সমালোচিত বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহারের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি ছিল বলে মন্তব্য করেছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘ঢাকার ৭ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক কামরুন্নাহার রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণ মামলার রায় দিতে গিয়ে যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন, তা মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। ব্যবস্থা গ্রহণটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল, সে জন্য তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেটিও সম্পূর্ণ আইনানুগভাবে কিন্তু এগিয়ে যাবে।’ ওই বিচারকের বিচারিক ক্ষমতা সাময়িক প্রত্যাহার করে সুপ্রিম কোর্ট থেকে বিজ্ঞপ্তি জারির পর গতকাল বিকালে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আইনমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধান বিচারপতিকে আমি কিছু বলিনি। এটি ওনার (প্রধান বিচারপতি) সিদ্ধান্ত। উনি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখন কথা হচ্ছে এটা এত গুরুত্বপূর্ণ কেন? বিজ্ঞ বিচারকরা প্রতিদিনই কিন্তু রায় দেন। রায়ে কেউ সন্তুষ্ট হন, কেউ অসন্তুষ্ট হন। যারা অসন্তুষ্ট হন, আমাদের ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী, সংবিধান অনুযায়ী, তারা উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারেন। সর্বোচ্চ আদালত হচ্ছে আপিল বিভাগ। সেই আপিল বিভাগের সাংবিধানিক কিছু বাড়তি ক্ষমতাও আছে। সেগুলো তারা প্রয়োগ করেন। রায় দিলেই যে কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তা নয়। তারা মেরিটের ওপর, আইনের ওপর, রায় দেওয়ার ব্যাপারে সম্পূর্ণ স্বাধীন।’ মন্ত্রী বলেন, ‘কিন্তু এখানে যে ঘটনাটা ঘটেছে সেটা হচ্ছে একজন বিজ্ঞ বিচারক তিনি ওপেন কোর্টে রায় দেওয়ার সময় তার পর্যবেক্ষণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলেছেন, ৭২ ঘণ্টা পর কেউ যদি কোনো ধর্ষণ মামলা করতে আসে, তাহলে সেই মামলাটা গ্রহণ না করতে। এটাই হচ্ছে আপত্তির জায়গা।’ তিনি বলেন, ‘ব্যাপারটা হচ্ছে কোনো ফৌজদারি অপরাধের মামলা করার ব্যাপারে তামাদি বারিত হয় না (নট বার বাই লিমিটেশন)। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পর কিন্তু মামলা হয়নি। ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর এ মামলার প্রথম এফআইআর হয়। সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদে পরিষ্কার বলা আছে, একমাত্র আইন দিয়ে বাংলাদেশের একজন নাগরিকের বিরুদ্ধে বা পক্ষে ব্যবস্থা নিতে হবে। বিচারকের বক্তব্যটি সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদের মৌলিক অধিকার পরিপন্থী। এ দুটোই তিনি ভায়োলেট (লঙ্ঘন) করেছেন।’ আনিসুল হক বলেন, ‘এই ভায়োলেশনের তাৎপর্যটা কী? অনেক রায় আছে বেআইনি হয়, আপিল বিভাগে গিয়ে সেটঅ্যাসাইড হয়। এখানে তিনি যে কথাটা বলেছেন, সেটার একটা ইমপ্লিকেশন আছে, একটা কনসিকোয়েন্স আছে। এ কারণেই আজকে বিচার বিভাগের যিনি গার্ডিয়ান, যিনি প্রধান তাকে ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। ঠিক সেই কারণেই আমি আইনমন্ত্রী হিসেবে নির্বাহী বিভাগ থেকে গতকাল বলেছিলাম, আমি প্রধান বিচারপতির কাছেই বিচার চাইতে পারি। কারণ বিচার বিভাগ স্বাধীন।’