বুধবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

নেতা-কর্মীর দৃষ্টি গণভবনে

রফিকুল ইসলাম রনি

নেতা-কর্মীর দৃষ্টি গণভবনে

আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক ১৯ নভেম্বর। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে বিকাল ৪টায় এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কার্যনির্বাহী সংসদের অন্তত অর্ধশত নেতা এতে অংশ নেবেন। চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের মাঠপর্যায়ে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। দলীয় প্রতীকে এ নির্বাচন হলেও এখন আওয়ামী লীগের ভিতর থেকেই ইউনিয়ন পরিষদের ভোট দলীয়ভাবে না করার দাবি জোরালো হচ্ছে। এ ভোটকে কেন্দ্র করে তৃণমূলে সহস্রাধিক নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সেই পরিস্থিতিতে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত আসছে তা জানতে দলীয় নেতা-কর্মীর দৃষ্টি এখন গণভবনে। 

আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সাংগঠনিক, রাজনৈতিক, দিবসভিত্তিক কর্মসূচি চূড়ান্ত, আর্থ-সামাজিক ও  চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দ্বন্দ্ব, সংঘাত, সহিংসতা, হামলা-মামলা ও খুনোখুনি নিয়ন্ত্রণসহ বেশ কয়েকটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হবে। আগামী বছর দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলন এবং ২০২৩ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন, তৃণমূলে বিভক্তির রাজনীতি দূরকরণ, এমপি-মন্ত্রীদের বলয় ভাঙাসহ সাংগঠনিক নির্দেশনা দিতে পারেন সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সূত্রমতে, তৃণমূলে মনোনয়ন বাণিজ্য, নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে হারাতে দলের ভিতরেই একটি অংশের তোড়জোড়, সংঘাত, হানাহানি ও প্রাণহানির ঘটনা কীভাবে সামাল দেওয়া যাবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে এ বৈঠকে। যেহেতু বিএনপি দলীয় প্রতীকে ভোটযুদ্ধে মাঠে নেই, সে কারণে মাদারীপুর-শরীয়তপুর জেলার মতো পরবর্তী ইউপি ভোটগুলো উন্মুক্ত রাখা হবে না কি দলীয় প্রতীকেই হবে সে ফয়সালাও আসতে পারে। সম্প্রতি গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে যে মন্তব্য করেন, সে বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া বক্তব্য নিয়ে ইতোমধ্যে জাহাঙ্গীরকে শোকজ করা হয়। মেয়র জবাব দিয়েছেন, কিন্তু মেয়রের জবাবে দলের হাইকমান্ড সন্তুষ্ট নন বলে জানা গেছে। শুক্রবারের বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হতে পারে। শুধু মেয়র জাহাঙ্গীর নন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য বেশ কিছু নেতার বিরুদ্ধেও কেন্দ্রে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। তাদের বিষয়ে গণভবনের বৈঠক কী সিদ্ধান্ত হতে যাচ্ছে, সারা দেশের লাখ লাখ নেতা-কর্মী তা জানার অপেক্ষায়। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, তাঁতী লীগ, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। ডিসেম্বর মাস অথবা আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ সব কমিটির সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার তাগিদ আসতে পারে কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে। এ ছাড়াও যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের দীর্ঘদিন সম্মেলন নেই। এ বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। কার্যনির্বাহী সংসদের শুক্রবারের বৈঠকে কী কী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অতি সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘে এসডিজি পুরস্কার পেয়েছেন। বৈঠকে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে ধন্যবাদ জানাব। এ ছাড়াও সাংগঠনিক, রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক ও  চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দ্বন্দ্ব, সংঘাতসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে।’ সূত্রমতে, ইউপি নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রতীকে ভোটে নেই। এ কারণে অধিকাংশ জায়গায় মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী বনাম দলটির বিদ্রোহী প্রার্থীরা। নিজ দলের নেতাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই, হামলা-পাল্টা হামলা, মুখোমুখি সংঘর্ষ ও বিদ্রোহীদের দাপটের মুখে নৌকার প্রার্থীর ভোট বর্জনের ঘটনাও ঘটেছে। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা থেকে শুরু করে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়া পর্যন্ত সহিংসতায় দলটির মোট ৩৯ জন নেতা-কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। দলীয় বিদ্রোহী থাকায় বিভক্ত হয়ে পড়েছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। এমপি-মন্ত্রী ও প্রভাবশালী নেতাদের স্বার্থ রক্ষায় খুনোখুনির শিকার হচ্ছেন কর্মীরা! পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিদ্রোহীদের বহিষ্কার করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সহস্রাধিক বহিষ্কারের সুপারিশ কেন্দ্রে জমা পড়েছে। কারণ আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেন্দ্র ছাড়া স্থানীয় আওয়ামী লীগ কোনো নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করতে পারে না।

অনেক স্থানে দলীয় এমপিরা সরাসরি নৌকার বিরোধিতা করছেন! প্রার্থী পছন্দ না হওয়ায় তারা এ কাজ করছেন। দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন- ভোটের মাঠে বিদ্রোহী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতার প্রকাশ। বিদ্রোহী থাকা দলের নীতি-আদর্শের ওপর আঘাত। ঐক্যবদ্ধ তৃণমূলে ভাঙন সৃষ্টির অপচেষ্টা। যা আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করছেন ক্ষমতাসীন দলের ভিতরের অনেকেই। এসব বিবেচনায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। 

জানা গেছে, বিএনপিবিহীন ইউনিয়ন নির্বাচনে সংঘাত-সহিংসতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাকি ধাপগুলোর মনোনয়ন উন্মুক্ত করা যায় কি না সে বিষয়ে দলীয় সভানেত্রীর সৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন সিনিয়র নেতারা। যেহেতু নির্বাচনের সহিংসতা রোধে অনেক এমপি-মন্ত্রী নৌকা প্রতীক না রাখার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে অনুরোধ করেছেন। ফলে শুক্রবারের বৈঠকে বিষয়টি গুরুত্ব পেতে পারে।

সর্বশেষ খবর