বুধবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

চালুর আগে মেট্রোরেলের সঙ্গে পরিচিত করা হবে ঢাকাবাসীকে

ডিসেম্বরেই উন্মুক্ত উত্তরার মেট্রোরেল প্রদর্শনী কেন্দ্র

নিজস্ব প্রতিবেদক

চালুর আগে মেট্রোরেলের সঙ্গে পরিচিত করা হবে ঢাকাবাসীকে

মেট্রোরেলের ট্রায়াল রানসহ চলছে বিভিন্ন প্রস্তুতি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঢুকতেই টিকিট কাউন্টার। সুইচ টিপে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে টিকিট কেনার ব্যবস্থা। টিকিট বিক্রয় মেশিনে তিন ধাপেই হয়ে যাবে টিকিট সংগ্রহ। প্রথম ধাপে গন্তব্য নির্বাচন, দ্বিতীয় ধাপে টিকিটের সংখ্যা নির্ধারণ, তৃতীয় ধাপে টাকা প্রবেশ। এর পরই টিকিট চলে আসবে নির্দিষ্ট ট্রেতে। বারবার টিকিট সংগ্রহের ঝক্কি কমাতে রয়েছে র‌্যাপিড পাসের ব্যবস্থা। রিচার্জ করা যাবে মোবাইল বা অ্যাপ থেকেই। টিকিট সংগ্রহ শেষেই ঢোকা যাবে মেট্রোরেলের উত্তরা নর্থ স্টেশনে। একেবাবে বাস্তবভিত্তিক এ অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে উত্তরার মেট্রোরেল প্রদর্শনী কেন্দ্রে। মেট্রোরেলের অপেক্ষায় থাকা ঢাকাবাসীর সঙ্গে এর পরিচয় করিয়ে দিতে আগামী মাসে সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে এ প্রদর্শনী কেন্দ্র।

মেট্রোরেলের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ও কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশে মেট্রোরেল একেবারেই নতুন হওয়ায় এর বিভিন্ন ব্যবস্থার সঙ্গে এখানকার মানুষের অভ্যস্ততা তৈরি করার প্রয়োজন আছে। যেহেতু দ্রুতগতির এ ট্রেন একেবারেই স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় চলে তাই প্রতিটি বিষয় তাদের না দেখালে নানান সমস্যা হতে পারে। এ চিন্তা থেকেই প্রদর্শনী কেন্দ্রে খুঁটিনাটি সব দিকই রাখা হয়েছে।

গতকাল সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় শুধু টিকিট সংগ্রহই নয়, টিকিট সংগ্রহের পর প্ল্যাটফরমে প্রবেশের আগে সে টিকিট প্রদর্শন করে ইলেকট্রিক গেট দিয়ে ঢুকতে হবে। গেটের পাশে নির্দিষ্ট স্থানে টিকিট স্পর্শ করলেই খুলে যাবে গেট। এরপর প্রবেশ করতে হবে প্ল্যাটফরমে। প্ল্যাটফরমে অপেক্ষা করতে হবে ট্রেনের জন্য। ট্রেনের দরজা খুলে গেলে যাত্রী নামার সঙ্গে সঙ্গে উঠে যেতে হবে ট্রেনে। প্রদর্শনী কেন্দ্রে রাখা হয়েছে ট্রেনের একটি কোচ। উঠে দেখা যাবে এ কোচে। ট্রেনের কোচের দরজা বন্ধ হবে নিজে নিজেই। যে কোনো প্রতিবন্ধকতা এলে অটোমেটিক সেন্সর থাকায় দরজা বন্ধ হবে না। এ কারণে দরজায় দাঁড়ানো যাবে না, রাখা যাবে না ব্যাগ বা অন্য কিছু। কোচের ভিতরে বসার পাশাপাশি দাঁড়ানোর ব্যবস্থাও থাকবে। লাইনে চলার জন্য যে কোচগুলো প্রস্তুত বরা করা হয়েছে সেগুলোয় বসার চেয়ে দাঁড়ানোর ব্যবস্থাই রয়েছে বেশি। তবে জায়গা না পেলেও চিন্তা নেই। কারণ প্রতি সাড়ে তিন মিনিট পরপর আসবে একেকটি ট্রেন। প্ল্যাটফরমে সাড়ে তিন মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে পরের ট্রেনে ওঠা যাবে সহজেই। ট্রেনে চলাচলের এসব পদ্ধতি শুনে জটিল মনে হলেও এটি যে একেবারেই সহজ তা বোঝা যাবে প্রদর্শনী কেন্দ্র ঘুরে গেলেই। একটি ছোট্ট শিশুও যে মেট্রোরেলে চড়ে সহজে স্কুলে যেতে পারবে তা দেখানো হয়েছে প্রদর্শনী কেন্দ্রের ‘মেট্রো গার্ল’ নামের একটি সিরিজে। প্রদর্শনী কেন্দ্রে এমআরটি-৬-এর সব স্টেশন সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যাবে। অভিজ্ঞতা অর্জন শেষে সব মেট্রোরেলের স্টেশনের মতো বের হওয়ার গেটে টিকিট স্পর্শ করেই বের হতে হবে। মেট্রোরেলের উত্তরা সেন্ট্রাল স্টেশনে গিয়ে দেখা যায় স্টেশন ও লাইনের অবকাঠামোগত নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ। শুধু টাইলস ও দরজা-জানালা লাগানোর মতো কাজগুলো বাকি। সেখানে মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক চলাচলও চলছে। স্টেশনে উপস্থিত জাপানের রাষ্ট্রদূত নাওকি ইতো ও গণমাধ্যমকর্মীদের সামনেই প্রায় ১০০ কিলোমিটার স্পিডে একবার অতিক্রম করে ট্রেন। আবার কিছুক্ষণ পর ফিরে আসে ধীরগতিতে। পরে ছয়টি কোচের এ ট্রেনে উঠে বাংলাদেশের মাটিতে এক ভিন্ন ধরনের আমেজ পাওয়া যায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মেট্রোরেলে ভ্রমণের অনুভূতির সঙ্গে এর কোনো পার্থক্যই নেই।

ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিকী জানান, এমআরটি-৬-এর উত্তরা-আগারগাঁও রুটের ট্রেন চলবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। এর আগে পুরো সময়জুড়েই ট্রেনগুলো পরীক্ষামূলক চলাচল করবে। এখন চলছে ট্রেনের ড্রাইরান। পরবর্তী পাঁচ মাস হবে সমন্বিত ট্রায়াল এবং তার পরের পাঁচ মাস যাত্রী ছাড়া একেবারেই স্বাভাবিক চলাচলের মাধ্যমে করা হবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। তিন ধরনের ট্রায়ালের পরই যাত্রী নিয়ে চলাচলের উপযোগী হবে মেট্রোরেল। তিনি জানান, উত্তরা থেকে মতিঝিল রুটে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে মেট্রোরেল চলাচলের আশা করা হবে। মতিঝিলের পর নতুন বর্ধিত রুট কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত চলাচলের মাধ্যমে এমআরটি-৬-এর প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে হবে ২০২৪-এর ডিসেম্বরে। এরপর ২০৩১ সালের মধ্যে ঢাকায় কয়েকটি রুটে মাটির ওপর ও মাটির নিচে ১৩০ কিলোমিটার মেট্রোরেল বাস্তবায়ন করা হবে। এর মাধ্যমে রাজধানীর যানজট ও পরিবেশ পুনরুদ্ধার সম্ভব হবে।

জাপানের রাষ্ট্রদূত নাওকি ইতো বলেন, করোনা মহামারীসহ নানান চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে ঢাকার মেট্রোরেল এখন বাস্তবতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন মেট্রোরেলের মাধ্যমে বাংলাদেশের যোগাযোগব্যবস্থার নতুন মাত্রায় যাত্রা সময়ের অপেক্ষা মাত্র। রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের মেট্রোরেলে আর্থিক ও কারিগরি দিক দিয়ে সহযোগী হতে পেরে জাপান গর্বিত। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ-জাপান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।

সর্বশেষ খবর