বুধবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়া

নতুন করে আবেদন বিবেচনার সুযোগ নেই : আইনমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংসদে বলেছেন, বিএনপি  চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আবার জেলে গিয়ে চিকিৎসার জন্য নতুন করে বিদেশ যাওয়ার আবেদন করলে তা বিবেচনা করা হবে। এখন যে অবস্থায় আছেন, তাতে আবেদন নতুন করে বিবেচনার কোনো সুযোগ  নেই। এই আবেদনটি ইতিমধ্যে নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। নিষ্পত্তিকৃত দরখাস্তের ওপর আর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল সংসদের ১৫তম অধিবেশনের তৃতীয় দিনের বৈঠকে একটি বিলের ওপর আনীত যাচাই-বাছাই প্রস্তাবের জবাব দিতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ‘বিরোধী দলের নেতা ও উপনেতা (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) বিল, ২০২১’ বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির এমপি রুমিন ফারহানা শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে ‘আইনগতভাবে’ খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার দাবি করেন। দন্ডবিধির ৪০১ ধারামতে এ সুযোগ দেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘আমি কখনো বলিনি, ৪০১ ধারামতে খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে দেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু তিনি বর্তমানে সাজা স্থগিতপূর্বক বাসায় আছেন, সেটি ৪০১ ধারার ভিত্তিতেই। খালেদা জিয়ার পক্ষে যে আবেদন হয়েছিল, সেখানে কোনো ধারার উল্লেখ ছিল না। সরকার খুঁজে এ ধারাটি বের করেছে। আবেদনটি ৪০১ ধারার আলোকেই নিষ্পত্তি হয়েছে। আর একটি আবেদন যে ধারার অধীনে নিষ্পত্তি হয়েছে, একই ধারায় বিষয়টি পুনর্বিবেচনার কোনো সুযোগ নেই।’ তিনি বলেন, সাজা স্থগিত রেখে মুক্তির শর্তে তার বাসায় অবস্থান করা এবং বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়ার কথা থাকলেও তিনি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন, সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরছেন, কোনো বাধা দেওয়া হয়নি। আইন সবার জন্য সমান হলেও খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিদের চেয়ে বেশি সুবিধা ভোগ করছেন, এটি পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিকতার কারণে।

আইনমন্ত্রী যখন এ বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা মন্ত্রীর দিকে ফিরে বিএনপির অতীত কর্মকান্ডের কথা স্মরণ করিয়ে দেন।

আইনমন্ত্রী বলেন, বিএনপি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুনর্বাসন ও পুরস্কৃত করেছিল। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। ওই মামলার প্রধান আসামি তারেক জিয়া। এর পরও খালেদা জিয়ার প্রতি দয়া করা হচ্ছে; সুচিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

ষোড়শ সংশোধনীর রিভিউ শুনানি শিগগিরই : আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংসদে জানিয়েছেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের বহুল আলোচিত রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের ওপর ‘শিগগিরই’ শুনানি হবে। আমরা সুপ্রিম কোর্ট রুলসের ‘এরর অ্যাপারেন্ট অন দ্য ফেইস অব দ্য রেকর্ড’ গ্রাউন্ডে এই রিভিউ চেয়েছি। এ মামলায় রিভিউয়ের জন্য আমাদের যথেষ্ট মেরিটও আছে। মামলাটি শুনানির জন্য আমরা ইতিমধ্যে আপিল বিভাগের কাছে অনুরোধ জানিয়েছি। আপিল বিভাগ শিগগিরই এই মামলাটি শুনে দেবে বলে আমাদের জানিয়েছে। গতকাল জাতীয় সংসদে একটি বিল উত্থাপনের পর বাছাই কমিটিতে পাঠানোর বিষয়ে আলোচনাকালে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে বিলটি বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবকালে জাতীয় পার্টির এমপি মুজিবুল হক চুন্নু ষোড়শ সংশোধনী মামলার রিভিউ শুনানির সর্বশেষ অবস্থা জানতে চান। গত বছর ৩০ জুন সংসদে?মুজিবুুল হক চুন্নুর এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, মহামারীকাল কাটলে রিভিউ শুনানি শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।

আপিল বিভাগে ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায় দিয়েছিল ৭ বিচারকের আপিল বেঞ্চ। এখন আপিলে বিচারক আছনে পাঁচজন। সুপ্রিম কোর্ট রুলস অনুযায়ী রিভিউ শুনানি করতে হলে রায়ের সমান, অর্থাৎ অন্তত সাতজন বিচারক লাগবে। আইনমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী শিগগিরই রিভিউ শুনানি শুরু করতে হলে আগে বিচারক নিয়োগ দিতে হবে। বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী জাতীয় সংসদে পাস হয়। এই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছর সুপ্রিম কোর্টের নয়জন আইনজীবী হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন। বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতেই ছিল। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর সময়ে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত করা হয়।

জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে বিচারককে সরাতে বলেছি : আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংসদে বলেছেন, আমি বিচারিক রায়ের ব্যাপারে কথা বলিনি। আমি সুনির্দিষ্টভাবে বলেছি তিনি বিচার যা করেছেন, রায় যা দিয়েছেন তা তার ব্যাপার। আপিলে সিদ্ধান্ত হবে। আমার আপত্তিটা হলো, তিনি বলেছেন কোনো ধর্ষণ মামলা ৭২ ঘণ্টা পর নেওয়া যাবে না। অথচ ফৌজদারি মামলার নীতি হচ্ছে, অপরাধ সংঘটিত হলে এটাকে সময় দ্বারা বারিত করা যাবে না। বাদীকে বিচার পাওয়ার অধিকার দিতে হবে। সেটা হলে ২১ বছর পরে জাতির পিতার হত্যার বিচার করা যেত না। ওই হত্যার পর তো কোনো এফআইআর গ্রহণ করা হয়নি। ওই মামলার বাদী ও এক নম্বর সাক্ষী লালবাগ থানায় গেলেও মামলা নেয়নি। পুলিশ বলেছিল, ‘ব্যাটা তুইও মরবি আমাদেরও মারবি, এখন থেকে যা।’ সেই বিচারহীনতার সংস্কৃতি পরে ইনডেমনিটি আদেশ বাতিলের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছিল। সময় দ্বারা বারিত হয় না বলেই ওই বিচার সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, রায় নিয়ে নয়, জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই আমি চিঠি দিয়েছি। গতকাল সংসদে একটি বিলের ওপর আনীত বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবের জবাব দানকালে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবের ওপর বক্তব্যকালে জাতীয় পার্টির এমপি শামীম হায়দার পাটোয়ারী বিচারককে সরানোর চিঠিতে বিচার বিভাগের ওপর এক ধরনের হস্তক্ষেপ বলে অভিযোগ করেন। তিনি জানতে চান, কোনো মামলার রায় প্রকাশ হওয়ার আগে এভাবে বিচারককে সরানোর চিঠি আইনমন্ত্রী দিতে পারেন কি না। তিনি বলেন, যতদূর বুঝি রায় তো লেখা হওয়ার কথা নয়। হয়তো পত্রিকার খবরের ভিত্তিতে করেছেন। তিনি আরও বলেন, একজন আইনমন্ত্রী যদি এভাবে বিচারক সরাতে অনুরোধ করেন সেটা তখন অনুরোধ থাকে না। এটা ‘পেছনের দরজা’র নির্বাহী আদেশ হয়ে যায়। এ ধরনের ‘আদেশ’ বিচারব্যবস্থার জন্য স্বস্তিদায়ক নয়। আমরা দেখতে পাচ্ছি প্রধান বিচারপতির বিচার হচ্ছে। বিচারক বদলি হচ্ছে। তিনজন বিচারপতিকে বসিয়ে রাখা হচ্ছে। আমাদের মনে হচ্ছে বিচারব্যবস্থাকে দুর্বল করার চেষ্টা হচ্ছে।’ আইনমন্ত্রী বলেন, ‘মাননীয় প্রধান বিচারপতি কাকে সরাবেন কাকে রাখবেন সেটার সাজেশন আমি করতে পারি না, সেটা করিনি। বিচার বিভাগের গার্ডিয়ান প্রধান বিচারপতির কাছে আমি ওই (৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণ) ব্যাপারটি দেখতে বলেছি।’

সর্বশেষ খবর