বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

পূর্ণাঙ্গ রায়ে নেই ৭২ ঘণ্টা পর ধর্ষণ মামলা না নেওয়ার নির্দেশনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

আলোচিত রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণ মামলায় বিচারক মোছা. কামরুন্নাহারের দেওয়া রায়ের লিখিত অনুলিপি প্রকাশিত হয়েছে। তবে পূর্ণাঙ্গ রায়ে ধর্ষণের ৭২ ঘণ্টা পর মামলা না নিতে পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়ার কোনো উল্লেখ নেই। ওই ধর্ষণ মামলার লিখিত রায় মঙ্গলবার রাতে প্রকাশিত হয়। গতকাল বিচারক কামরুন্নাহারের স্বাক্ষরসহ পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি আইন মন্ত্রণালয় ও সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো হয়েছে। বনানীর রেইনট্রি হোটেলে চার বছর আগে দুই তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় ১১ নভেম্বর রায় দেন কামরুন্নাহার। সে সময় তিনি ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক ছিলেন। পূর্ণাঙ্গ রায়ের লিখিত কপিতেও কামরুন্নাহার সই করেন ১১ নভেম্বর। রায়ে পাঁচ আসামির সবাইকে খালাস দেওয়া হয়। তারা হলেন- আপন জুয়েলার্স মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ, তার বন্ধু সাদমান সাকিফ, নাঈম আশরাফ, সাফাতের দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, আক্রান্ত হওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মেডিকেল টেস্ট করা না হলে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায় না। এতে মামলা প্রমাণ করা দুরূহ হয়ে পড়ে। ধর্ষণের ৭২ ঘণ্টা পর এ-সংক্রান্ত মামলা না নিতে কামরুন্নাহার মৌখিক পরামর্শ দেন বলেও সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। বিচারক কামরুন্নাহারের এমন মন্তব্য নিয়ে তীব্র সমালোচনার মধ্যে গত রবিবার প্রধান বিচারপতি তাঁর বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহার করেন। এ ছাড়া তাঁকে ট্রাইব্যুনাল থেকে প্রত্যাহার করে আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত করা হয়। তবে ৫০ পৃষ্ঠার লিখিত রায়ে ধর্ষণের ৭২ ঘণ্টা পর পুলিশকে মামলা না নিতে বিচারক কামরুন্নাহারের কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। ইংরেজিতে লেখা পূর্ণাঙ্গ রায়ে সুনির্দিষ্টভাবে মামলাকারী তরুণীদের ‘যৌনকাজে অভ্যস্ত’ বলেও মন্তব্য করা হয়নি। ট্রাইব্যুনাল বহু ধর্ষণ মামলা দেখেছে উল্লেখ করে বিচারক লিখেছেন- ‘যৌনজীবনে অভ্যস্ত প্রাপ্তবয়স্ক অনেক নারী এখানে বিচারের জন্য আসেন, যেখানে দেখা যায় কথিত ঘটনার অনেক দিন পর তাদের মেডিকেল পরীক্ষা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর ওপর যৌনসহিংসতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। মামলা করার সময় বিষয়টিতে নজর রাখা হলে এবং ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মেডিকেল পরীক্ষা করা হলে (বহু মামলায় চিকিৎসকরা যেমন মতামত দিয়েছেন), ধর্ষণের যে কোনো ধরনের নমুনা যথাযথভাবে পাওয়া গেলে এবং ফরেনসিক পরীক্ষায় সেগুলো প্রমাণ হলে তা ধর্ষণ মামলায় গুরুত্বপূর্ণ নথি হিসেবে গ্রহণ করা যায়। তখন ধর্ষণ মামলার অভিযুক্ত ব্যক্তির বিচার এবং ন্যায়বিচার সর্বোত্তমভাবে করা সম্ভব।’

রেইনট্রি মামলার দুই বাদীর বিষয়ে বিচারুক কামরুন্নাহার লিখেছেন- ‘প্রাপ্তবয়স্ক দুই ভুক্তভোগীর মেডিকেল পরীক্ষা যদি ঘটনার পরপরই হতো অথবা যত দ্রুত সম্ভব করা হতো তাহলে বিচারের ক্ষেত্রে ধর্ষণের আলামত পাওয়া সম্ভব হতো। এমনকি তারা ঘটনার পরপরই বা ওই দিনই মামলা করলে পুলিশ তাদের মুখ, গাল বা শরীরের অন্য কোনো অংশে যৌনসহিংসতার আলামত চিহ্নিত করতে পারত। আর বিচারের ক্ষেত্রে সেগুলো হতো নথিভুক্ত প্রমাণ।’ ঘটনার ৩৮ দিন পর মামলা হওয়ায় এবং পারিপার্শ্বিক প্রমাণের অভাবে অভিযোগের সত্যতা আদালতে প্রমাণ করা যায়নি বলেও রায়ে উল্লেখ করেন বিচারক কামরুন্নাহার।

সর্বশেষ খবর