শনিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

সব সময় আমিই ছিলাম খালেদা জিয়ার টার্গেট : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

সব সময় আমিই ছিলাম খালেদা জিয়ার টার্গেট : প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ব্যাপক উন্নয়নের পরও যারা দেশে-বিদেশে অপপ্রচার চালাচ্ছে এমন লোকজনের বিরুদ্ধে দলের নেতা-কর্মীদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এত উন্নয়নের পরও কিছু মানুষ বিদেশে ও দেশে বসে অপপ্রচার করছে। এদের বিরুদ্ধে সচেতন হতে হবে, অপপ্রচারের জবাব দিতে হবে। গতকাল বিকালে গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সব সময় আমিই ছিলাম খালেদা জিয়ার টার্গেট। বলেছিলেন- ‘আমি নাকি প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা বিরোধী দলের নেতাও কোনোদিন হতে পারব না।’ তারপর বোমা পোঁতা হলো কোটালিপাড়ায়। এরপর তার বক্তব্য-            আওয়ামী লীগ শত বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। এরপর গ্রেনেড হামলা হলো। এই কথাগুলো আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু মানুষ মিটিং করছে কী করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরানো যায়। জনগণের শক্তিই আওয়ামী লীগের শক্তি। আমরা জনগণের সেবায় কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছে গেছে। আমরা জনগণের কল্যাণে কাজ করছি। উন্নয়নের ছোঁয়া গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ উন্নয়নের ছোঁয়া পেয়েছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, বিএনপিকে কোন আশায় মানুষ ভোট দেবে? পলাতক আসামি যে দল চালায় জনগণ তাদের কী আশায় ভোট দেবে?  প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরা দেশের গরিবের টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। বিদেশে বসে আরাম-আয়েশে আছে। তাদের এই আয়ের উৎস কী? তিনি দেশের সুবিধাভোগী স্বার্থান্বেষী মহলের সমালোচনা করে বলেন, কিছু মানুষ আছে যারা হাজার অপরাধকারীকেও অপরাধী হিসেবে দেখে না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বললেও তারা দুর্নীতির জন্য সাজাপ্রাপ্তদের পক্ষ নেয়। যারা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে, এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে তাদের জন্যই তারা মায়াকান্না করছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের হাজার হাজার নেতা-কর্মীর ওপর অত্যাচার করেছে। আমাদের মিটিং করতে দেয়নি। একজন আমাকে শুধু হাত দেখিয়েছিল বলে তার দাড়ি টেনে টেনে তুলেছিল। আমাদের বহু নেতা-কর্মীর হাতের কবজি কেটে দিয়েছিল। পা কেটে দিয়েছিল। চোখ তুলে ফেলা হয়েছিল। বাড়িঘর দখল করে। তাদের অত্যাচারে আমাদের ২০ হাজার নেতা-কর্মী মৃত্যুবরণ করে। তারা আওয়ামী লীগের নাম নিশানাও মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল।

বিভিন্ন সরকারের সময়ে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পরে তার যে অত্যাচার, আমরা আওয়ামী লীগ অফিসে পর্যন্ত বসতে পারতাম না, যেতে পারতাম না, ঢুকতে পারতাম না। আমাদের সিআরআই বন্ধ করে দিয়ে ১৬টা কম্পিউটার, ৩০০ ফাইল, ১০ হাজার বই, নগদ টাকা-পয়সা সব কিছু নিয়ে যায় এবং সেখানে তালা দিয়ে যায়। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পরে আবার সেই অফিসটা আমরা খুলতে পারি। শেখ হাসিনা আরও বলেন, এভাবে অকথ্য অত্যাচার করেছে। আমাদের অগণিত নেতা-কর্মী কারাগারে রেখেছে। সেখানে কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসা নিতে পর্যন্ত যেতে দেয়নি। শুধু আমাদের ওপর অত্যাচার হয়েছে তাই নয়, সেনাপ্রধান মোস্তাফিজ অসুস্থ ছিল, তাকেও সিএমএইচে ভর্তি হতে দেয়নি। অন্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাকে স্ট্রেচারে করে হাজির করা হয়েছে মামলার জন্য। বিমানবাহিনী প্রধান জামাল উদ্দিন সাহেব, তার মতো সৎ একটা মানুষ, তাকে সাধারণ একটা ঘড়ি চুরির মামলা দিয়ে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়েছে। সেখানে তাকে কোনো ডিভিশনও দেয়নি। তাকে মাত্র দুটি কম্বল দিয়েছিল। ফ্লোরে থাকতে হয়েছে তাকে। এরা যেভাবে অমানবিক কাজ করেছে, এ রকম বহু কাহিনি আছে। নিজেসহ দলের আরও কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে তাদের ওপর নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমার মনে হয়, এখানে এমন কেউই নেই যার ওপর অত্যাচার হয়নি। এভাবে তারা অত্যাচার করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে তাদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন বা তাদের বাধা দেয়নি। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। জনগণের ভোটে বিশ্বাস করি। ২০০৮ সালের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। এই নির্বাচন নিয়ে তো কেউ প্রশ্ন তোলেনি। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশ মেজরিটি নিয়ে ক্ষমতায় আসে। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আওয়ামী লীগ যে কাজ করেছে তার ফলে জনগণ আমাদের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছে। আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। কিন্তু সেই ভোট ঠেকানোর নামে মানুষ পোড়ানো থেকে শুরু করে যা করেছে, সেটা দেশের মানুষ ভুলে যায় কীভাবে? একেকটা নির্বাচনের আগে তারা অত্যাচার নির্যাতন করেছে। বলেছে, নির্বাচন করবে না। তারা দেখাতে চেয়েছে তারা অংশ নেয়নি তাই নির্বাচন হয়নি। এটাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, হাই কোর্টের একটা রায় আছে, সেখানে সংবিধান লঙ্ঘন করে মার্শাল ল জারি করে যারা ক্ষমতা দখল করেছে, সেটাকে অবৈধ বলা হয়েছে। জিয়াউর রহমান শুধু মার্শাল ল নয়, আর্মি রুলস ল, সেটাও ভঙ্গ করেছিল। কারণ সেখানে স্পষ্ট লেখা ছিল- সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় তারা নির্বাচন করতে পারবে না বা কোনো রাজনীতি করতে পারবে না। কিন্তু জিয়া একাধারে সেনাপ্রধান, সেই সঙ্গে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেয়। পরে আবার হ্যাঁ ভোট দিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করে। এরপর আবার রাজনৈতিক দল গঠন করে। সেই দলই হচ্ছে বিএনপি। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের হাতে গড়া দল হচ্ছে এই বিএনপি। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরের হত্যাকান্ডের পর বাংলাদেশ লক্ষ্যচ্যুত হয়েছিল। পঁচাত্তরের পরে দেশে ১৯টা সামরিক ক্যু হয়। এর ফলে সামরিক বাহিনীর অনেক সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। কোর্ট মার্শাল হয়ে, ফায়ারিং স্কোয়াড হয়েছে এবং ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কয়েক দিন আগেও বহু স্বজনহারা মানুষ একত্রিত হয়ে তাদের স্বজন হত্যার বিচার চেয়েছে। তারা লাশও খুঁজে পায়নি। লাশও গুম করে দেওয়া হয়েছিল। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেই এই ঘটনাগুলো ঘটায়। কাজেই তাদের সেই দাবির একটা তদন্ত হোক। কেন তারা স্বজনদের লাশগুলো পেল না। শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমি এবং রেহানা দেশে আসতে পারিনি। আমাদের রিফিউজির মতো থাকতে হয়েছে। ১৯৮১ সালে যখন আমাকে আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচিত করা হয়, তখন অনেক বাধা ছিল; কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম দেশে ফিরে আসব। এরপর আমি চেষ্টা করেছিলাম সংগঠনগুলো গড়ে তোলার। এ সময় পঁচাত্তর-পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে জাতির পিতার খুনিদের বিচার না করে তাদের পুরস্কৃত করা ও বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেওয়া, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়া এবং সংসদে বসার সুযোগ করে দেওয়ার প্রসঙ্গও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

‘নতুন দল’কে যেন বাধা দেওয়া না হয় : ড. রেজা কিবরিয়া এবং নুরুল হক নূরের নেতৃত্বাধীন নতুন রাজনৈতিক দলের দিকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাদের যেন কোনো রকম বাধা দেওয়া না হয়।

কোনো দলের নাম উচ্চারণ না করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যত আমরা ভালো কাজ করি, সেখানে একটা বিতর্ক সৃষ্টি করার চেষ্টা সব সময় এদের আছে। এটা বিএনপি-জামায়াতই সব থেকে বেশি সক্রিয়। আবার এখন নতুন কিছু গজাচ্ছে। সেটা গজাক। নতুন দলকে বাধা না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমি কালকেও (বৃহস্পতিবার) আইজিপিকে বলেছি যারা নতুন পার্টি করতে চাচ্ছে তাদের পার্টি করতে দেওয়া উচিত এবং তারা দল করুক, তারা কাজ করুক। কারণ বাংলাদেশে দরকার আছে? যে যত দল করতে চায় করতে পারে। এখানে বহুদলীয় গণতন্ত্র বিদ্যমান। কাজেই এখানে যেন কোনো রকম বাধা দেওয়া না হয়। মিছিল করতে চাচ্ছে মিছিল করুক। মিছিলে আমরা বাধা দেব কেন?

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের যত রকম আন্দোলন আছে করুক। কিন্তু মানুষ পুড়িয়ে মারতে পারবে না, কোনো যানমালের ক্ষতি করতে পারবে না, সেটা আমাদের দেখতে হবে, যেন কোনো জিনিসের ক্ষতি করতে না পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর