সোমবার, ২২ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

যত্রতত্র যে কেউ ধর্ষণের হুমকি দিয়ে বসতে পারে

জিন্নাতুন নূর

যত্রতত্র যে কেউ ধর্ষণের হুমকি দিয়ে বসতে পারে

শিরীন হক

বাসে বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে বাসকর্মীর অশোভন আচরণের ঘটনায় হতবাক নারী নেত্রী ও নারীপক্ষের সদস্য শিরীন হক। তিনি গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা ৩৫ বছর ধরে যে নারী আন্দোলন নিয়ে কাজ করলাম এ ধরনের ঘটনা ঘটায় এখন মনে হচ্ছে আমরা বুুঝি কিছুই করিনি। এত বছর আন্দোলন করে কোনো প্রভাবই রাখতে পারলাম না। এখন যত্রতত্র যখন তখন যে কেউ ধর্ষণের হুমকি দিয়ে বসতে পারে। ভাবলে অবাক লাগে এটা কেমন অসভ্য পরিবেশে আছি আমরা।

এই নারী নেত্রী বলেন, একজন মেয়ে শিক্ষার্থী মনে করছে যে শিক্ষার্থী হিসেবে তার অর্ধেক ভাড়া দেওয়ার  অধিকার আছে এবং এ জন্য সে অর্ধেক ভাড়াই দিতে চেয়েছে। এটি নিয়ে মেয়েটির সঙ্গে বাসচালক বা হেলপারের যুক্তিতর্ক হতেই পারে। কিন্তু তাই বলে মেয়েটিকে ধর্ষণের হুমকি দিয়ে বসা কিছু পুরুষ নিজেদের অধিকার বলে মনে করে। নারীর শরীরের ওপর হুমকি দেওয়া এবং আক্রমণ করা এ ধরনের পুরুষরা স্বাভাবিক অধিকার মনে করে। আর এই কুবিশ্বাস ভাঙতে কী করতে হবে তা আমি বুঝতে পারছি না। শিরীন হক বলেন, রাষ্ট্রের ও সরকারের এখানে বড় দায় আছে। আমরা ছোট ছোট সংগঠনগুলো এ বিষয়ে যতই চিৎকার করি বা কথা বলি না কেন সেভাবে কিছু করতে পারব না। এই সংস্কৃতি ভাঙার জন্য এখানে বড় রকমের উদ্যোগ নেওয়া দরকার। আমরা বারবার বলছি যে ধর্ষণের সংস্কৃতিকে ভেঙে চুরমার করতে হবে। আর এই সংস্কৃতি না ভেঙে এক বা দুজন ধর্ষককে ধরে জেলে পুড়লেই এ সমস্যার সমাধান হবে না। এই সংস্কৃতির একেবারে মূলে আঘাত করতে হবে। নারীকে মানুষ হিসেবে সমাজে সম্মান করতে শিখতে হবে। দ্বিতীয়ত আমাদের দেশে এখন ব্যাংক লুট হোক, টাকা পাচার হোক কিংবা যৌন হয়রানির মতো কর্মকান্ড হোক, সবাই মনে করে অপরাধ করে পার পেয়ে যাবে। তার অপরাধের বিচার হবে না। বড় বড় অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে, তাই যে কেউ যে কোনো অপরাধ করে পার পেয়ে যাবে বলে এখন এক ধরনের ধারণা তৈরি হয়েছে। একটা সমাজ যখন অপরাধপ্রবণ হয়ে যায় তখন সাধারণ একটা মেয়ের কী করার থাকে, তার পক্ষেই বা কে থাকবে। তবে আমি খুব আশ্বস্ত হয়েছি ভুক্তভোগী মেয়েটির পাশে অন্য শিক্ষার্থীরাও সড়কে প্রতিবাদ করতে নেমেছে এবং তারা মেয়েটির পক্ষে যুক্তিতর্ক করেছে। এ জন্য আমি এই ছোট শিক্ষার্থীদের অভিবাদন জানাই। এই নারীনেত্রী বলেন, দিল্লিতে স্টিকার দেওয়া বেশ কিছু ট্যাক্সি আছে যেগুলো নারী যাত্রীদের ভ্রমণের জন্য নিরাপদ। অর্থাৎ এই ট্যাক্সিচালক জনসম্মুখে অঙ্গীকার করছে যে এই ট্যাক্সিটি নারীর জন্য নিরাপদ। এই বিষয়গুলো দেখলে মনে হতে পারে খুব ছোট কিন্তু তা নয়। আমাদের যানবাহনের চালক ও হেলপারদের নিয়ে যদি আমরা এ ধরনের সচেতনতামূলক অঙ্গীকার করাতে পারি যা জনসম্মুখে দেখা যাবে এবং গণপরিবহনে যদি বাসটি নারীর জন্য নিরাপদ এমন স্টিকার লাগানো সম্ভব হয় তবে এটি ভালো উদ্যোগ হবে। আমরা যাই করি না কেন তা শিক্ষামূলক হতে হবে। শাস্তিমূলক কোনো উদ্যোগে এমন অপরাধ বন্ধ করা যাবে না। সমস্যাটির সমাধানে দরকার শিক্ষামূলক কার্যক্রম।

সর্বশেষ খবর