মঙ্গলবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী

করোনার ক্ষতি পোষাতে গতি বাড়াতে হবে কাজের

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনার ক্ষতি পোষাতে গতি বাড়াতে হবে কাজের

গত দুই বছরে করোনা মহামারীর ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কাজের গতি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকের অনির্ধারিত আলোচনায় এমন নির্দেশনা দেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

তিনি বলেন, মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে দেশ প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছিল। এতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়েছে। এবার করোনার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে থাকায় উন্নয়ন কাজে গতি আনার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ও সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বৈঠকে একাদশ জাতীয় সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের খসড়া, ২০২০-২১ অর্থবছরে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সম্পাদিত কার্যাবলি সম্পর্কিত বার্ষিক প্রতিবেদন, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন এবং জেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন, ২০২১-এর খসড়ায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যেহেতু কভিড সংক্রমণের দুই বছর হয়ে গেছে, সবাইকে আরেকটু জোরেশোরে কাজ করে ঘাটতিগুলো পূরণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের উন্নয়নের গতি স্বাভাবিক সময়ের জায়গায় নেওয়ার মতো কাজ করতে বলেছেন তিনি। আমাদের প্রবৃদ্ধির হারসহ সবকিছু যেন কভিডের আগে যে রেটে ছিল, সেখান থেকে আবার সামনে এগিয়ে যেতে পারি সে চেষ্টা রাখতে বলা হয়েছে। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সময় দেওয়া বিধিনিষেধ সতর্কতায় কোনো ধরনের অনিশ্চয়তা রাখা যাবে না উল্লেখ করে খন্দকার আনোয়ার বলেন, বঙ্গভবনে এবার ১৬ ডিসেম্বরের অনুষ্ঠান হচ্ছে না। তবে প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠান হবে, কারণ সেখানে অবাধ মেলামেশা হবে না। অবাধ মেলামেশা টাইপের অনুষ্ঠানগুলো নিরুৎসাহ করা হচ্ছে। আমরা ইতিমধ্যে ৩২টি জেলার সঙ্গে মিটিং করেছি। তাদের বলেছি ঢিলেঢালা ভাব নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সবাইকে মনোযোগী থাকতে হবে এবং সামাজিক দূরত্বের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। ইতিমধ্যে ৯ কোটি লোককে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে আরও দুই থেকে আড়াই কোটি ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, স্বাধীনতার ৫০ বছর উদ্যাপনের অনুষ্ঠান ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত বাড়বে। তবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ঘোষিত মুজিববর্ষের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

বার্ষিক প্রতিবেদনের উল্লেখযোগ্য তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গত অর্থবছরে মোট মামলা ছিল ৬ লাখ ৬১ হাজার। এবার ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৩৬২টি মামলা হয়েছে। মামলা কমেছে প্রায় ৯১ হাজার। গত অর্থবছরে ডাকাতির মামলা ছিল ৩৩৬টি, এ বছরে ৩২১টি। রাহাজানি ছিল ৯১৯টি, এ বছরে বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৪৮টি। অস্ত্র আইনে মামলা ছিল ২ হাজার ১৬৭টি, এ বছর ১ হাজার ৭৪৭টি। খুনের মামলা ছিল ৩ হাজার ৪৮৫টি, এ বছরে ৩ হাজার ৪৫৮টি। গত বছরে ধর্ষণ মামলা ছিল ৫ হাজার ৮৪২টি, এ বছরে ৭ হাজার ২২২টি। নারী নির্যাতন ছিল ১২ হাজার ৬৬০টি, এবার বেড়ে হয়েছে ১৪ হাজার ৫৬৭টি। গত অর্থবছরে এর আগের বছরের চেয়ে ধর্ষণ বেড়েছে ১ হাজার ৩৮০টি আর নারী নির্যাতন ১ হাজার ৯৭টি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, ৩০ জুন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির রিপোর্ট আমাদের কাছে এসেছে। রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ৩ লাখ ২৮ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা, রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির হার ২৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ। রপ্তানির পরিমাণ ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সরকারিভাবে ১৪ লাখ ৩৮ হাজার টন খাদ্য মজুদ করা হয়েছে। গত বছর একই সময়ে ছিল ৬ লাখ টনের কিছু বেশি; যেটা ছিল উদ্বেগজনক। এবারের খাদ্যের মজুদ অত্যন্ত স্বস্তিদায়ক।

সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণ কাল : বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ জাতীয় সংসদে আগামীকাল ভাষণ দেবেন। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটি একটি স্পেশাল ভাষণ হচ্ছে। সাধারণত উনি (রাষ্ট্রপতি) কোনো অধিবেশনের শুরুতে ভাষণ দেন। উনি মুজিববর্ষ উপলক্ষে একটি ভাষণ দিয়েছিলেন। ভাষণের খসড়া মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে। ২৪ নভেম্বর এ ভাষণ হবে।

জেলা পরিষদে বসানো যাবে প্রশাসক : মেয়াদ শেষে পদ ছাড়তে হবে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের- এমন বিধান রেখে ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন, ২০২১’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। একই সঙ্গে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষে নির্বাচন না হলে জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার বিধান রাখা হচ্ছে সংশোধিত আইনে। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘পৌরসভা অ্যাক্টের মতো জেলা পরিষদের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে যত দিন পরিষদ গঠিত না হবে সরকার প্রশাসক দিয়ে রাখতে পারবে। সদস্যদের ক্ষেত্রে একটু পরিবর্তন আনা হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র ও সিটি মেয়রের প্রতিনিধিরা এর সদস্য হবেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা অবজার্বিং মেম্বার হবেন। বোর্ডটা রিভাইস করার সুপারিশ করা হয়েছে।’

সনদ ছাড়া চলচ্চিত্রে জেল-জরিমানা : ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সনদ ছাড়া কোনো চলচ্চিত্র প্রদর্শন করলে অনধিক পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রেখে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন, ২০২১’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এত দিন সিনেমাগুলো অনুমোদন পেত সেন্সরশিপ অব ফিল্ম অ্যাক্ট-১৯৬৩ ও ১৯৭২ সালের একটি অ্যামেনমেন্ডের মাধ্যমে। পরে ২০০৬ সালে আইনটি সংশোধন করা হয়। এবার এটাকে মডিফিকেশন করা হয়েছে। অ্যাকচুয়েলি সেন্সরশিপ আইন থাকা ঠিক হবে না, এটা সার্টিফিকেশন আইন হওয়া উচিত। তার একটা পার্ট থাকবে সেন্সর। শাস্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তি যদি কোনো চলচ্চিত্রের সার্টিফিকেশন পাওয়ার পর কোনো টেম্পারিং করেন, অনেক সময় যে সিনগুলো সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত নয় বা সেন্সর নয় সেগুলো যোগ করেন তাহলে দুই বছরের কারাদণ্ড অথবা ২ লাখ টাকা জরিমানা হবে।

সর্বশেষ খবর