বৃহস্পতিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

গুলিস্তানে ছাত্র, কুড়িল-মিরপুরে পোশাকশ্রমিকদের বিক্ষোভ

ঢাকা অচল যানজটে দুর্ভোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

গুলিস্তানে ছাত্র, কুড়িল-মিরপুরে পোশাকশ্রমিকদের বিক্ষোভ

গাড়িচাপায় সহপাঠীর মৃত্যুর পর গতকাল গুলিস্তানে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ -রোহেত রাজীব

রাজধানীর তিন প্রান্তের তিন ঘটনায় গতকাল দীর্ঘসময় ধরে অচল হয়ে পড়ে ঢাকার বিস্তীর্ণ এলাকা। নগরীর গুলিস্তান, মিরপুর ও কুড়িল এলাকায় অবরোধের কারণে চার পাশে তীব্র যানজটে দুর্ভোগে পড়েন হাজার হাজার মানুষ। সকালে গুলিস্তানে সিটি করপোরেশনের গাড়ির ধাক্কায় নটর ডেম কলেজের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় শিক্ষার্থীদের অবরোধে পুরো এলাকা অচল হয়ে পড়ে। এদিকে মিরপুরে বেতন

 বাড়ানো ও কুড়িলে বকেয়া বেতনের দাবিতে রাস্তায় নেমে অবরোধ করে গার্মেন্ট শ্রমিকরা। রাজধানীর গুলিস্তানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার ট্রাকের ধাক্কায় সহপাঠীর মৃত্যুর প্রতিবাদে গতকাল সড়ক অবরোধ করে নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় শিক্ষকরা। বিকাল ৫টায় শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে সরে গেলে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর ওই এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এর আগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নিহত সহপাঠী নাঈম হাসানের পরিবারের ভরণপোষণের দাবি জানান। গতকাল দুপুর পৌনে ১২টায় গুলিস্তান হল মার্কেটের সামনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ হারান নটর ডেম কলেজের ছাত্র নাঈম হাসান (১৭)। তার মৃত্যুর খবর কলেজে পৌঁছলে শতাধিক শিক্ষার্থী গুলিস্তান এসে সড়ক অবরোধ করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা দায়ী চালকের শাস্তির দাবি তোলেন। তারা স্লোগান দিচ্ছিলেন- ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আমার ভাই কবরে-তুই কেন বাইরে’। এরপর নটর ডেম কলেজের ফাদার এন্থনি সুশান্ত গোমেজ, পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক ভিনসেন্ট তিতাস রোজারিও এবং শহিদুল হাসান পাঠান ঘটনাস্থলে এসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তারা আশ্বস্ত করে শিক্ষার্থীদের নিয়ে যান। মুকিত নামে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একজন বলেন, ফাদার আমাদের জানিয়েছেন- মেয়র আশ্বাস দিয়েছেন। তাই আজকের মতো সড়ক ছেড়ে চলে গেলাম। নাঈম বড় হয়ে তার পরিবারকে ভরণপোষণ করত, কিন্তু এভাবে তাকে হত্যা করা হলো। নাঈমের কী দোষ ছিল। দোষ হলো সড়কের। এদিকে ছেলে হারানোর বেদনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আহাজারি করতে থাকেন নাঈম হাসানের বাবা।

ঢামেক সূত্র জানায়, নাঈম নটর ডেম কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। কামরাঙ্গীরচর ঝাউলাহাটিতে নিজ বাড়িতে তিনি পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে নাঈম ছিলেন ছোট। বায়তুল মোকাররমের দিকে যাওয়া সিটি করপোরেশনের একটি ময়লার গাড়ি মোড় ঘুরতেই তাকে চাপা দেয়। পরে পথচারীরা তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে মেডিকেলে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নাঈমের মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে আসেন তার বাবা শাহ আলম। কাঁদতে কাঁদতে বলেন- ‘আমার থাইকা বিদায় নিয়া আইলো কলেজে যাইব, দুনিয়া থাইকাই চইলা গেল, সোনার টুকরা পোলা আমার।’ শাহ আলম নীলক্ষেতে বইয়ের ব্যবসা করেন। গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার কাজিরখিল গ্রামে। পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, এ ঘটনায় সিটি করপোরেশনের ওই গাড়িচালক রাসেল খানকে আটক করে গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে। এদিকে বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিতে মিরপুরের কয়েকটি সড়কে চলা আন্দোলনে সকাল থেকে স্থবির হয়ে পড়ে মিরপুর এলাকা। সকাল ৯টায় শুরু হওয়া আন্দোলন টানা পাঁচ ঘণ্টা চলার পর দুপুর ২টায় শেষ হয়। বেলা ২টায় মিরপুর-১৩ নম্বরের মূল সড়কে সমবেত হয়ে গতকালের মতো আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন শ্রমিকরা। এর আগে সকাল ৯টায় মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বর ও মিরপুর-১৩ নম্বরের বিএমএ গার্মেন্টের সামনের সড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকরা। বিএমএ গার্মেন্টের আন্দোলনকারী শ্রমিক সাদিয়া বলেন, বাড়ি ভাড়া, খাবার খরচসহ সব পণ্যের দাম বাড়তি। অথচ আমাদের বেতন ও সুবিধাদি বাড়ানো হয়নি। তাই বেতনভাতা বাড়ানোর দাবিতে তিন দিন আগে থেকে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের দাবি,  বেতন বাড়ানোর পাশাপাশি শ্রমিকদের ওপর হামলার দায়ে মালিককে বিচারের আওতায় আনতে হবে। আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শ্রমিক আবদুর রহমান বলেন, হামলা চালিয়ে যেসব শ্রমিককে মেরে ফেলা হয়েছে এবং যারা আহত হয়েছেন তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। হামলাকারীদের সঠিক বিচার করতে হবে।

এদিকে বকেয়া বেতনের দাবিতে রাজধানীর কুড়িলে সড়ক অবরোধ করেছেন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। তারা সড়কে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দেন। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সৃষ্ট হয় তীব্র যানজট। এ অবস্থায় অনেক যাত্রী বাস থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যে রওনা হন। প্রগতি সরণির কুড়িল কাজীবাড়ি এলাকায় অবস্থিত ওয়েমার্ট অ্যাপারেলস লিমিটেড নামের একটি পোশাক কারখানার শতাধিক শ্রমিক সকাল ১০টার দিকে সড়কে অবস্থান নেন। তারা গত অক্টোবর মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়কে নামার কথা জানান। শ্রমিকেরা সড়কে অবস্থান নিলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সড়কে অবস্থান নেওয়া পোশাকশ্রমিক মনির হোসেন বলেন, ‘আমরা অক্টোবর মাসের বেতন পাইনি। ব্যাংক থেকে টাকা ওঠাতে না পারার কারণে বেতন দেওয়া যাচ্ছে না বলছে মালিকপক্ষ।’

ইমরান নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘প্রতি মাসের ৫, ৭ বা ১০ তারিখের মধ্যে আমাদের বেতন দেওয়া হয়। কিন্তু অক্টোবর মাসের বেতন এখনো  দেওয়া হয়নি। ফলে আমরা বিপদে পড়েছি।’ পোশাকশ্রমিকেরা অবস্থান নিলে প্রথমে সড়কের এক দিকে যানজট সৃষ্টি হয়। পরে সড়কের অপর দিকেও যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক যাত্রী বাস থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যে রওনা দেন। ভোগান্তির শিকার যাত্রীরা এ সময় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আসমানী পরিবহন নামের একটি বাসের চালক মো. রিপন বলেন, সকাল ১০টা থেকে আটকে আছি। বাসে অনেক যাত্রী ছিল। পরে প্রায় সবাই বাস  থেকে নেমে চলে গেছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর