শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী নিয়ে সংসদে আলোচনার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। চলার পথে অনেক বাধা আমাদের অতিক্রম করতে হয়েছে। শত বাধা অতিক্রম করে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের আরও এগোতে হবে। গতকাল জাতীয় সংসদে আনা ১৪৭ বিধির প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সংসদ নেতা শেখ হাসিনা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে গতকাল জাতীয় সংসদের ১৪৭-এর ১ বিধির এ প্রস্তাবটি নিজেই তোলেন।

প্রস্তাব উত্থাপনের পরপরই প্রধানমন্ত্রী সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন। এর আগে সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সংসদে স্মারক বক্তৃতা দেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভায় সভাপতিত্ব করেন। আজ আলোচনার পর প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হওয়ার কথা। প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের স্বাধীনতার ফসল এ সংসদ। জাতির পিতা যে সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন তারই ভিত্তিতে আমাদের নির্বাচন ও আজকের এ সংসদ।

সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, সংসদের অভিমত এই যে, ২০২১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন বাঙালির জাতীয় জীবনে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। তিনি বলেন, অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশ আজ ‘উন্নয়ন বিস্ময়’। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৪৮ থেকে ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয় দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৫ মার্চের গণহত্যা, ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণা, ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন এবং এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ মহান শহীদ ও ২ লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১-এ পাক সেনাদের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।

 

বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনার কাঠামো ঠিক করা আছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০৪১ সালে বাংলাদেশকে কীভাবে দেখতে চাই সে পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পনাও আমরা করে রেখেছি। জলবায়ু পরিবর্তন থেকে আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন বেঁচে থাকতে পারে সে লক্ষ্যে এ বদ্বীপকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য আমরা ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছি। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমরা প্রতীক্ষায় ছিলাম কখন আমাদের পিতা ঘরে আসবেন। আমরা বাবাকে পাই পরে। জনগণ পায় আগে। তাঁর কাছে জনগণই ছিল বড়। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আকাক্সক্ষা ছিল দেশটাকে গড়ে তুলবেন। বাংলাদেশকে সাজাবেন। যেন প্রতিটি মানুষ নাগরিক সুবিধা পান। জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। দেশের উন্নয়নে তিনি স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ শুরু করেন। একটি প্রদেশ থেকে দেশে উন্নীত করার যত আইন, নিয়ম-নীতিমালা সবই তিনি করে দিয়ে যান।

তিনি আরও বলেন, আমি দীর্ঘদিন দেশ চালাচ্ছি। প্রতিটি ক্ষেত্রে যখন কোনো কাজ করতে যাই দেখতে পাই তার ভিত্তি জাতির পিতা তৈরি করে দিয়ে গেছেন। আমার কাছে বিস্ময় মনে হয়, এত অল্প সময়ে কীভাবে তিনি এত কাজ করে যেতে পারলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য, যখন তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলছিলেন তখন কিছু লোক অস্থিরতায় ভুগছিল। পাকিস্তান হানাদাররা সারেন্ডার করেছিল ঠিকই, কিন্তু তারা তাদের কিছু দালাল-যুদ্ধাপরাধী রেখে যায়। তারা আমাদেরই মুক্তিযুদ্ধের অংশকে হাতিয়ে নিয়ে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা চালায়। এত অল্প সময়ে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাটা তাদের সহ্য হয়নি। দেশ স্বাধীন হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াবে তা পাকিস্তানি দোসররা মানতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু সরকারের সময় নানা ষড়যন্ত্রের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, চক্রান্ত মোকাবিলা করেই জাতির পিতা দেশকে গড়ে তুলছিলেন। যেন কারও কাছে হাত পাততে না হয় তার জন্য তিনি দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি দেন। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূর করতে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করেন। স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করেন। বঙ্গবন্ধু যে কাজগুলো করতে চেয়েছিলেন এর জন্য আর পাঁচ বছর হাতে পেলে বাংলাদেশ উঠে দাঁড়াত। আজ যে সম্মানজনক অবস্থানে আমরা আসতে পেরেছি জাতির পিতা বেঁচে থাকলে সে জায়গায় আমরা স্বাধীনতার ১০ বছরে পৌঁছে যেতে পারতাম।

 

তিনি বলেন, যারা স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে যাক চায়নি তারা এটা সহ্য করতে পারেনি। তারা নানা অপপ্রচার করেও যখন জনগণের সহায়তা পেল না, তখনই পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়। তাঁকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশে বারবার ক্যু, মুক্তিযোদ্ধা, সাধারণ মানুষের মৃত্যু, সংবিধান ক্ষতবিক্ষত। এর ফল হিসেবে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আমাদের ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করা হয়েছিল।

১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা গ্রহণের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একুশ বছর পর আমরা জনগণের ভোটে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পাই। আমরা চেয়েছি দেশকে নিজের পায়ে দাঁড় করাতে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে। রাস্তাঘাটসহ প্রতিটি সেক্টরে উন্নতি হবে। জনগণ আমাদের ওপর আস্থা রেখে বারবার ভোট দিয়ে সরকার গঠনের সুযোগ দিয়েছে। যার কারণে আজ আমরা উন্নয়নের মহাসড়কে। ১২ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। করোনা মহামারী মোকাবিলায় সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, কোটি মানুষ ভ্যাকসিন পেয়েছে। ভ্যাকসিনের কোনো অভাব হবে না। অনেক উন্নত দেশ বিনা পয়সায় ভ্যাকসিনও দেয় না, টেস্টও করে না। আমরা বিনামূল্যে টেস্ট করাচ্ছি, ভ্যাকসিন দিয়ে যাচ্ছি। দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে আমরা ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসব। সরকারপ্রধান আরও বলেন, আমরা ক্ষমতাকে জনগণের সেবা করার সুযোগ মনে করি। জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের সুযাগ মনে করি। আমরা দারিদ্র্যের হার ২০ শতাংশে নামিয়ে আনতে পেরেছি। করোনা মহামারী না থাকলে একে ১৭ ভাগে নামিয়ে আনতে পারতাম। বিশ্বব্যাপী মন্দার মধ্যেও আমরা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশ। ৪১টি অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি।

তিনি বলেন, আমরা ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের রূপকল্প অর্জন করতে পেরেছি। জনগণ ভোট দিয়েছে বলে আমরা সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করতে পারছি। রজতজয়ন্তী উদ্যাপনের সময়ও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর