শুক্রবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

এবার ময়লার গাড়িতে প্রাণ গেল গণমাধ্যমকর্মীর

আরও এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) একটি ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানের মৃত্যুর ঘটনায় আন্দোলন চলমান থাকা অবস্থাতেই এক গণমাধ্যমকর্মীর প্রাণ কেড়ে নিয়েছে বেপরোয়া আরেকটি ময়লার গাড়ি। রাজধানীর পান্থপথে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নিহত হয়েছেন আহসান কবির খান (৪৮) নামে ওই ব্যক্তি। তিনি রাইড শেয়ারিং ‘পাঠাও’ এর মোটরসাইকেলে করে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন। এ ঘটনায় ঘাতক ময়লার গাড়িটি জব্দ করেছে পুলিশ। তবে এর চালক পালিয়ে গেছেন। এদিকে, বুধবার রাতে শাহজালাল  বিমানবন্দরের ফুটওভার ব্রিজের নিচে সড়ক দুর্ঘটনায় পাঠাও চালক ইউসুফ মিয়া (২০) নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে পান্থপথ শাপলা ফার্নিচার দোকানের সামনের রাস্তায় ময়লার গাড়ির ধাক্কায় কবির মারা যান। তাকে বহনকারী পাঠাও চালক ভয়ে পালিয়ে যান। ময়লার গাড়ির চালকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে এই কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া নিহতের পরিবারের কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে তা করা হবে। নিহতের মামাতো ভাই মিজানুর রহমান জানান, ঝালকাঠি সদর উপজেলার শেরজুত গ্রামের বাসিন্দা কবির। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে মগবাজারের সোনালীবাগ চাঁন বেকারি গলির ৫৩ নম্বর বাসায় থাকতেন। তিনি দীর্ঘদিন একটি জাতীয় দৈনিকে পেস্টিং বিভাগে কাজ করতেন। সাত বছর আগে চাকরি ছেড়ে দিয়ে প্রিন্টিং ব্যবসা শুরু করেন। চলতি মাসে আরেকটি জাতীয় দৈনিকে গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। একই সঙ্গে পেজ মেকআপের কাজ করতেন তিনি। গার্মেন্টস এক্সেসরিজেরও ব্যবসা ছিল কবিরের। নিহতের স্ত্রী নাদিরা পারভিন রেখা বলেন, কবির মোটরসাইকেল চালাতে পারেন না। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি বাসা থেকে বের হন। তখন বলে যান, ব্যবসার কাজে তাকে ২-৩ জায়গায় যেতে হবে। এরপর সেখান থেকে যাবেন মিরপুরে। দুপুরে তারা খবর পান, কবিরকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। পরে হাসপাতালে গিয়ে কবিরকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। এ ঘটনায় জড়িতদের উপযুক্ত বিচার দাবি করেন স্ত্রী নাদিরা। কলাবাগান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আ ফ ম আছাদুজ্জামান জানান, পাঠাও এর মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছিলেন আহসান কবির খান। পান্থপথে ডিএনসিসির একটি ময়লা বহনকারী ডাম্পিং ট্রাক পেছন দিক থেকে মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। এতে কবির খান নিচে পড়ে গেলে ময়লার ট্রাকটির চাকা তার মাথার ওপর দিয়ে উঠে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ট্রাকটি জব্দ করা হলেও চালক পালিয়ে গেছেন। তাকে ধরতে অভিযান চলছে। এদিকে, বুধবার রাতে শাহজালাল বিমানবন্দরের ফুটওভার ব্রিজের নিচে সড়ক দুর্ঘটনায় পাঠাও চালক ইউসুফের মৃত্যু হয়। তার বাবার নাম আনসার মিয়া। গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার বড়বাগে। বর্তমানে উত্তরার ৯ নম্বর সেক্টর এলাকার একটি ম্যাচে থাকতেন। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। মিরপুর ১২ নম্বরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। মৃতের চাচাতো ভাই রবিন মিয়া এসব তথ্য জানান। বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ইউসুফ মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তায় পড়ে গেলে পেছন থেকে আসা কোনো যানবাহন তাকে চাপা দিয়ে চলে যায়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। গাড়িটি চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর