শুক্রবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

প্রধানমন্ত্রীর ওপর দায়িত্ব দিয়ে মন্ত্রীদের বসে থাকা চলবে না

জিন্নাতুন নূর

প্রধানমন্ত্রীর ওপর দায়িত্ব দিয়ে মন্ত্রীদের বসে থাকা চলবে না

স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন

বারবার শিক্ষার্থীরা সড়ক দুর্ঘটনায় যাতে প্রাণ না হারায় এ জন্য এক ব্যক্তির (প্রধানমন্ত্রী) ওপর সব দায়িত্ব দিয়ে মন্ত্রীদের বসে থাকা চলবে না। এ জন্য সেক্রেটারিদেরও জবাবদিহিতার মধ্যে থাকতে হবে এবং নির্দিষ্ট দিনে এ বিষয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে হবে। নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব কথা বলেন।

মোবাশ্বের হোসেন বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করলে দেখতে পাই যে, তাদের ওপর যে চাপ হয় সেই চাপ নিরসন করার রাস্তা হিসেবে তারা প্রধানমন্ত্রীকে ব্যবহার করেন। প্রতিটি মন্ত্রণালয় যে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর মতামতের ওপর নির্ভর করে। যদি সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীকেই নিতে হয় তাহলে মন্ত্রীদের কেন দায়িত্বে রাখা হয়েছে? অথচ একজন মন্ত্রীর দায়িত্ব হচ্ছে কমিটি করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রয়োজনে আলোচনা করে নিতে পারেন। আর এটি ১৫ দিন থেকে এক মাসের মধ্যেই করা সম্ভব। এমনটি করা হলে সবকিছুর সমাধান দ্রুত হয়। আবার দেখা যায়, সরকারি কর্মকর্তারা প্রতিনিয়ত একদিক থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে নিয়ে যাচ্ছেন। যার যে দায়িত্ব তাকে সে ব্যাপারে জবাবদিহি করা বাধ্যতামূলক করতে হবে, আর তা না হলে তাকে শাস্তি দিতে হবে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর বোমা হামলা হয়েছিল। আর যেখানে সরকারপ্রধানকে হত্যাচেষ্টার বিচার শেষ করা যায়নি  সেখানে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলমান এই আন্দোলন স্বাভাবিক ঘটনা। কোনো সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান না হওয়ায় কারণে প্রতিটি ক্ষেত্রেই নতুন করে দাবি-দাওয়া আদায়ের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। আজ থেকে বহু বছর আগে রুট ফ্রাঞ্চাইজ করার কথা ছিল। এটি করা সম্ভব হলে বাস মালিকরা নিজেদের স্বার্থে কোনো আন্দোলন করতেন না। কারণ আমরা অঙ্ক কষে তাদের দেখিয়েছিলাম রুট ফ্রাঞ্চাইজ করা হলে এখন তাদের যে আয় তার  থেকে বেশি হবে। কিন্তু ধারাবাহিকতার অভাব এবং যে কাজের দায়িত্ব নেওয়া হয় তা শেষ না করায় পরিবহন খাতে এখন এই নৈরাজ্য চলছে। এই নগর পরিকল্পনাবিদ বলেন, আমরা যখন ছাত্র ছিলাম তখন আমরা হাফ ভাড়ায় সরকারি বাসে চড়তাম এবং অর্ধেক ভাড়ায় সিনেমার টিকিটও কাটতাম। খোঁজ নিলে দেখা যাবে নেপালসহ আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ টিকিটের ব্যবস্থা আছে। আমি ছাত্রাবস্থায় অর্ধেক ভাড়ায় ট্রেনে যাতায়াত করতাম। এখন প্রশ্ন হচ্ছে মানুষ উন্নতি করলে কি ভালো জিনিসগুলো বাদ দিয়ে দেবেন। আমি মনে করি, শিক্ষার্থীদের হাফ পাসের বিষয়টি সরকার ও বাস মালিক কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে বসে সমাধান করতে পারে। এ জন্য সরকার প্রয়োজনে ভর্তুকি দেবে। যেহেতু এখন শিক্ষার্থীরা সংখ্যায় প্রচুর এ জন্য আগের ভালো জিনিসগুলো এখন আর করা হচ্ছে না। কিন্তু প্রচুর শিক্ষার্থী থাকা একটি দেশের জন্য গর্বের। শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগও নিচ্ছে। তাহলে গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার বিষয়টি কেন নিশ্চিত করা হবে না। আমি মনে করি শিক্ষার্থীদের জরুরি ভিত্তিতে এই সুবিধা দেওয়া উচিত।

মোবাশ্বের হোসেন আরও বলেন, পৃথিবীতে এমন কোনো দেশ খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে কিছু রাস্তার মালিক রাজউক, কিছু সড়ক বিভাগের, আবার কিছু সিটি করপোরেশনের। যদি ঢাকার রাস্তার দায়িত্ব সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে দিয়ে দেওয়া হয় তখন সড়ক নিরাপত্তার দাবি সিটি মেয়রের কাছে যাবে। তখন জনগণ ও ছাত্ররাও মেয়রের সঙ্গে কথা বলবে। কিন্তু সেই জায়গায় এখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভিন্ন ভিন্ন কর্মকর্তার ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যারা এক একবার একেক জায়গায় বদলি হচ্ছেন। ফলে তাদের কোনো দায়বদ্ধতাও থাকছে না। উন্নত বিশ্বে নগর সরকারের বিকল্প নেই। আর যদি সিটি মেয়রকে বৃদ্ধাঙুলি দেখাতে চাই তাহলে ঢাকা নগরীর উন্নয়নের জন্য আলাদা একটি মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে। আর এগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলেই আমরা এসব সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে পারব।

সর্বশেষ খবর