বুধবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

পুলিশ অফিসার হতে চেয়েছিল বাসচাপায় নিহত মাঈন

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুলিশ অফিসার হতে চেয়েছিল বাসচাপায় নিহত মাঈন

রাজধানীর রামপুরার একরামুন্নেছা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া ১৯ বছরের তরুণ মো. মাঈন উদ্দিন। ভালো একটি কলেজে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা ছিল তার। সংসারে অভাব থাকা সত্ত্বেও বাবা-মায়ের ইচ্ছা ছিল ছেলেকে আরও পড়াবেন। মাঈন চেয়েছিল বড় হয়ে সৎ পুলিশ অফিসার হতে। কিন্তু গত সোমবার রাতে ডিআইটি রোড পূর্ব রামপুরা লাজ ফার্মার সামনে গ্রিন অনাবিল পরিবহনের একটি বাসচাপায় স্বপ্নভঙ্গ হয় মাঈনের। স্বপ্নভঙ্গ হয় তার পরিবারের। এখন তাদের পূর্ব রামপুরার বাসায় কেবলই বিলাপ চলছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যেই এ ঘটনায় ক্ষোভের আগুন আরও তীব্র হয়েছে। দুর্ঘটনার পর সেখানে অন্তত ১২টি বাস পুড়িয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। অভাব-অনটনের সংসারে দুই ভাই আর এক বাকপ্রতিবন্ধী বোনের মধ্যে মাঈন ছোট। বাবা আবদুর রহমান ভান্ডারী পূর্ব রামপুরায় তিতাস রোডে টং দোকানে চা-পান বিক্রি করেন। মাঈনের বড় ভাই গাড়িচালক। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল সদরের আবদুর রহমান জীবিকার তাগিদে পরিবার নিয়ে বছর পনেরো আগে ঢাকায় এসেছিলেন। তিনি সন্তানদের বড় করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন, কিন্তু সংসারে অভাব ঘোচাতে পারেননি। একরামুন্নেছা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া মাঈন ভালো কোনো কলেজে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছার কথা বাবাকেও বলেছিল। বলেছিল বড় হয়ে পুলিশ হবে। মাঈনের মা রাশেদা বেগমের কান্না থামাতে পারছে না কেউ। কাঁদতে কাঁদতে রাশেদা বলছিলেন, ২০০২ সালের ২৯ নভেম্বর জন্ম নিয়েছিল মাঈন। দুর্ঘটনার দিনও ২৯ নভেম্বর। কাঁদতে কাঁদতে মা রাশেদা বলতে থাকেন, ‘আমার পুতের জন্মদিন আইজকা, আমার মনে নাই গো। হেও জানতো না গো। ২৯ নভেম্বর আমার পুতের জন্ম দিন গো।’ রাশেদা বেগম জানান, পড়াশোনা শেষ করে সৎ পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখত মাঈন। তিনি বলেন, ‘কইতাম- অ পুত, পুলিশে তো ঘুষ খায়, কয়- মা আমি ঘুষ খাইতাম না। অ নয়ন রে, অ নয়ন। আর মাঈনু মিছিলে যাইত না।’

বাবা আবদুর রহমান বলছিলেন, ‘আমার পুতে কইত- আব্বা আমারে একটা ভালো কলেজে ভর্তি করাইয়া দিও। আমার পুতের কত আশা আকাক্সক্ষা, আমি কইছি আমার পুতেরে ভালো কলেজে ভর্তি কইরা দিমু। বাসের চাপায় ছেলে হারানো বাবা বলতে থাকেন, মাঈনু তাড়াতাড়ি আসো, তোমারে ভালা কলেজে ভর্তি করামু।’

গত সপ্তাহে সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির চাপায় এক কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর থেকে রাজধানীতে আন্দোলন চলছে শিক্ষার্থীদের। নিরাপদ সড়কের দাবিতে সেই আন্দোলনে বন্ধুদের সঙ্গে মাঈনও যেত। চায়ের দোকানে মাঝে-মাঝে বাবাকে সহযোগিতা করত মাঈন। সোমবার রাতে দুর্ঘটনায় পড়ার কিছুক্ষণ আগেও সে বাবার সঙ্গে দোকানের কাজে ছিল। বাবা আবদুর রহমান বলেন, ‘আমার পোলা আমার সঙ্গে বইয়া দোকানদারি করেছে। সুপারি কাটছে। সুপারি কাইট্টা হাত ধুইছে, কইছে- আব্বা ১০টা ট্যাহা দেও, বুট খামু। এই খাইতো বের হইছে, এর ১০/১৫ মিনিট পরই আমার পুতে নাই হইয়া গেছে।’ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নিহত নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানের বাবা-মায়ের যে কষ্ট, সেই একই কষ্ট এখন মাঈন উদ্দিনের বাবা-মায়ের। গতকাল নিহত শিক্ষার্থীর মা রাশেদা বেগম বাদী হয়ে অনাবিল পরিবহনের সংশ্লিষ্ট বাসের চালককে আসামি করে রামপুরা থানায় মামলা করেন। মামলায় চালক সোহেল ও তার সহকারী চান মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়।

সর্বশেষ খবর