শুক্রবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

চুক্তি করে কি অপরাধ করেছি

নিজস্ব প্রতিবেদক

চুক্তি করে কি অপরাধ করেছি

সন্তু লারমা

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় সন্তু লারমা বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা একটা বড় সমস্যা ছিল। সেই সমস্যা সমাধানে আমি সরকারকে সহযোগিতা করেছি। রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আমি সেই সহযোগিতা দিয়েছি। কিন্তু আজ চুক্তির ২৪ বছর পর মনে হচ্ছে চুক্তি করে আমি অপরাধ করেছি। আমাকে এবং জেএসএসকে এখন সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি করে কোনো অপরাধ করেছেন কি না, সরকারের কাছে জানতে চেয়েছেন তিনি। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দুই যুগ পূর্তি উপলক্ষে জেএসএস ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন সন্তু লারমা।

সন্তু লারমা বলেন, সরকার মনে করে আমি সন্ত্রাসী। স্বাধীনতার জন্য নয়, শুধু অধিকার রক্ষার জন্য আমরা লড়াই করেছিলাম; কিন্তু এরপর আমরা চুক্তি করেছি। আমাদের যদি অসদুদ্দেশ্য থাকত তাহলে চুক্তি করতাম না। কিন্তু সেই চুক্তি বাস্তবায়ন না করে আজ পদে পদে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে চরম বিপদের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। সন্তু লারমা অভিযোগ করেন, চুক্তি বাস্তবায়নে সরকার আন্তরিক নয়। বরং শাসক দল এখন পাহাড়ে দমন-পীড়নের পথ বেছে নিয়েছে। তিনি বলেন, পাহাড়ের মানুষের ওপর যে নির্যাতন ও দমন-পীড়ন চলছে তা বর্ণনাতীত। বাইরে থেকে দেখে কিছুই বোঝা যাবে না। কিন্তু পাহাড়ে গেলে বোঝা যাবে পাহাড়ি মানুষের কষ্ট-বেদনা। আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রংয়ের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, সাদেকা হালিম, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কাজল দেবনাথ, আইনজীবী সারা হোসেন প্রমুখ। সন্তু লারমা বলেন, চুক্তি বাস্তবায়ন বাদ দিয়ে সরকার দমন-পীড়নের পথ বেছে নিয়েছে। জেএসএস কর্মীদের একের পর এক মামলায় জড়ানো হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, পাহাড় অশান্ত থাকলে বাংলাদেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে না। কাউকে কষ্টে রেখে ভালো থাকা যায় না। সরকারের প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি আবারও জানান সন্তু লারমা।

অনুষ্ঠানে বর্ষীয়ান রাজনীতিক পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি আজ বিপন্ন। পাহাড় বিপন্ন এবং বিপন্ন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। চুক্তি বাস্তবায়ন না করে প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির এই দিবস আনন্দের উৎস হতে পারত। কিন্তু এ দিবসে কাউকে অভিনন্দন জানানো যাচ্ছে না। চুক্তির বাস্তবায়নের করুণ হাল এর জন্য দায়ী। মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে যাঁরা বাধা দেন তাঁরা রাষ্ট্রদ্রোহী। চুক্তিটি কোনো দুই ব্যক্তির চুক্তি ছিল না। এ চুক্তি করেছিল রাষ্ট্র। তাই রাষ্ট্রকে তার কথা রাখতে হবে।

সর্বশেষ খবর