সোমবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

আপাতত লকডাউনে যাচ্ছে না সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন মোকাবিলায় এ মুহূর্তে দেশের সীমান্ত বন্ধ বা লকডাউন দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হেলথ ম্যানেজমেন্টে (বিআইএইচএম) নবনির্মিত ভবন পরিদর্শন  শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশ ভালো আছে, নিরাপদে আছে। এখনো এমন পরিস্থিতি হয়নি যে বর্ডার বন্ধ করতে হবে বা লকডাউন দিতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সম্প্রতি করোনার নতুন ধরন (ভেরিয়েন্ট) ওমিক্রন আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হয়। ইতিমধ্যে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ প্রায় ৪০টি দেশে ছড়িয়েছে ভাইরাসটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিজ্ঞানীরা করোনার নতুন এ ধরন নিয়ে আতঙ্কের আভাস দিয়েছেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ওমিক্রন মোকাবিলায় আমাদের যা যা প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব, ইতিমধ্যেই সব নিয়েছি। আন্তমন্ত্রণালয় সভা করে অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সীমান্ত এলাকার প্রতিটি বর্ডারে স্ক্রিনিং ও পরীক্ষা জোরদার করা হয়েছে। বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা বা ওমিক্রন আক্রান্ত দেশ থেকে যে আসবে, তাকে ৪৮ ঘণ্টা আগে টেস্ট করে আসতে হবে এবং দেশে তাদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।

তিনি বলেন, ঢাকায় যেসব হাসপাতালে আগেও কভিড চিকিৎসা হয়েছে, সেগুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলায় জেলায় চিঠি দিয়ে ওমিক্রন মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তার বাইরেও আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। ল্যাবের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। আগে ২ হাজার স্কয়ার ফিটের ল্যাব ছিল, সেটি এখন ৩০ হাজার স্কয়ার ফিটের বেশি সম্প্রসারণ করা হয়েছে। সম্প্রতি নতুন করে আট হাজারের বেশি নার্স এবং চার হাজারেরও  বেশি চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ওমিক্রন নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সিদ্ধান্তগুলোর দিকেও আমাদের দৃষ্টিপাত রয়েছে। তবে সব প্রস্তুতির পরও দেশের মানুষকে স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে।

ওমিক্রন আক্রান্ত ব্যক্তিদের এই মুহূর্তে দেশে না আসাই ভালো হবে মন্তব্য করে জাহিদ মালেক বলেন, বিদেশ  থেকে যারা দেশে আসবেন, তাদেরও দায়িত্ব রয়েছে। তারা নিশ্চয়ই তাদের পরিবার ও দেশকে নিরাপদে রাখতে চাইবেন। তারা যেন সংক্রমিত হয়ে দেশে না আসেন। যে  যেখানে আছেন, সেখানেই নিরাপদে থাকুন।

টিকার কার্যক্রম নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের টিকা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে সাত কোটির বেশি প্রথম ডোজ ও চার কোটির কাছাকাছি দ্বিতীয় ডোজ টিকা দিয়েছি। এটাও একটা বড় প্রস্তুতি। ওমিক্রন মোকাবিলায় টিকা নিতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, মাস্ক পরতে হবে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এ সময় ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচি লোকমান  হোসেন মিয়া, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরাসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আখাউড়া ও বুড়িমারী স্থলবন্দরে বাড়তি সতর্কতা : ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লালমনিরহাট থেকে আমাদের সংবাদকর্মীরা জানিয়েছেন, ভারতে ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ায় বাংলাদেশে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় স্থলবন্দরগুলোতে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় যাত্রীদের অবাধ চলাচল থাকায় সেখানে স্বাস্থ্য বিভাগের একটি টিম কাজ করছে। ভারতফেরত যাত্রীরা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে আসছে কিনা তা যাচাই করা হচ্ছে। কারও উপসর্গ থাকলে তাৎক্ষণিক পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অন্যদিকে লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আসা যাত্রীদের ৪৮ ঘণ্টা মেয়াদি করোনাভাইরাস নেগেটিভ সনদ দেখাতে হচ্ছে। ট্রাকচালকদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক প্রয়োজন ছাড়া ভারতীয় ট্রাকচালকদের ট্রাকের মধ্যে অবস্থান করতে হচ্ছে। গতকাল বিকাল ৪টা পর্যন্ত বুড়িমারী ইমিগ্রেশন টেকপোস্ট দিয়ে ভারত থেকে আসা  দুজন পাসপোর্টধারী যাত্রীকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে।

সর্বশেষ খবর