মঙ্গলবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বিদেশ যাওয়ার অনিশ্চয়তা কাটেনি

♦ শর্ত তুলে নিলেই খালেদা জিয়ার যেতে বাধা নেই : কাজল ♦ আদালতের নির্দেশনা লাগবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ♦ পাসপোর্ট নবায়নের এখতিয়ার স্বরাষ্ট্রের : আইনমন্ত্রী

উবায়দুল্লাহ বাদল

বিদেশ যাওয়ার অনিশ্চয়তা কাটেনি

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৯ সালের ১৭ মে। চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে পাসপোর্ট নবায়নের আবেদন করলেও তা বাতিল হয়েছে। খালেদা জিয়া দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় আইন অনুযায়ী তাঁর পাসপোর্ট পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ফলে অনিশ্চয়তায় পড়েছে খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি। এ অবস্থায় গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিতে হলে আদালতের নির্দেশনা থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তবে মন্ত্রীর এ বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়ার দণ্ড যেহেতু স্থগিত সেহেতু তিনি এখন মুক্ত। সরকার তাঁকে বাসায় থেকে দেশে চিকিৎসা নেওয়ার যে শর্ত দিয়েছে তা তুলে নিলেই বিদেশে চিকিৎসা নিতে কোনো বাধা নেই। এ জন্য তাঁকে আদালতে কেন যেতে হবে? এ বিষয়ে প্রয়োজন সরকারের আন্তরিকতা।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয় বকশীবাজার আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালত। রায় ঘোষণার পর খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী রাখা হয়। এরপর ৩০ অক্টোবর এ মামলায় আপিলে তাঁর আরও পাঁচ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করে হাই কোর্ট। একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেয় একই আদালত। রায়ে সাত বছরের কারাদণ্ড ছাড়াও খালেদা জিয়াকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেয় আদালত। গত বছরের মার্চে করোনা মহামারী শুরু হলে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাহী আদেশে দণ্ড স্থগিত করে খালেদা জিয়াকে সরকার শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয়। বিদেশে যাওয়া যাবে না এবং বাড়িতে চিকিৎসা নিতে হবে এ দুটি শর্তে তাঁর দণ্ড স্থগিত করা হয়। দফায় দফায় সে মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ১৯ সেপ্টেম্বর আরও ছয় মাসের জন্য সে মেয়াদ বাড়ানো হয়।

১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনা শনাক্ত হলে ২৭ এপ্রিল রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় ৩ মে তাঁকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। তাঁকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ৫ মে রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় গিয়ে শামীম এস্কান্দার আবেদনটি দিয়ে আসেন। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের জন্য পাঠানো হয়। একই সঙ্গে ৬ মে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার উদ্দেশে খালেদা জিয়ার পাসপোর্ট নবায়নের আবেদন করা হয়েছিল। তবে তা বাতিল হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১৮ মে খালেদা জিয়ার নামে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের ১৭ মে পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়। এমআরপিতে তাঁর জন্মস্থান লেখা রয়েছে দিনাজপুর। পাসপোর্ট অধিদফতরের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, পাসপোর্ট আইন অনুযায়ী খালেদা জিয়া দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় তাঁর পাসপোর্ট নবায়নের সুযোগ নেই। আইনে বলা আছে- ফৌজদারি অপরাধে কোনো ব্যক্তির শাস্তি হলে তার শাস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই বছর পর পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে সরকার নির্বাহী আদেশে পাসপোর্ট করে দিতে পারে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার পাসপোর্ট ও বিদেশে চিকিৎসার বিষয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার। তারা এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।’ এর আগে ৫ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার কোনো সুযোগ আইনে আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ নিয়ে আইনের যেন ব্যত্যয় না হয় তা দেখা হচ্ছে। এখানে অনেক আবেদন এসেছে কিছু করা যায় কি না বা কোনো উপায় আছে কি না সব দিক দেখে একটা সুচিন্তিত সিদ্ধান্তে আসাটা আমার মনে হয় সমীচীন। এজন্যই সময় নেওয়া হচ্ছে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘বাংলাদেশের যে কোনো নাগরিক দণ্ড মওকুফ বা মানবিক যে কোনো আবেদন মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে করতেই পারেন। রাষ্ট্রপতি কী করবেন না করবেন তা তাঁর ব্যাপার। কিন্তু এখানে কিছু আইনি জটিলতা রয়েছে। যেহেতু খালেদা জিয়া দণ্ডপ্রাপ্ত তাই তিনি কারাগারের অংশ। সেখান থেকে বের করতে হলে কোর্টের নির্দেশনা থাকতে হবে। আমরা যা করেছি তা হলো তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে মানবিক আবেদন করা হয়েছিল। মানবতার মা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নির্বাহী আদেশে দণ্ড স্থগিত করে বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। এটা একবার করা হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয়বার করতে হলে তাঁকে আবারও কোর্টে যেতে হবে। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করলেও সেটা পরবর্তীতে দেখা যাবে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ খালেদা জিয়ার পাসপোর্ট নেই, যদি পরিবারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করা হয় এবং তিনি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দেন তাহলে জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্ট দেওয়া হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানোর বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নিলে সবকিছুই হবে।’

সর্বশেষ খবর