মঙ্গলবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

গাইবান্ধা নোয়াখালী সাতক্ষীরা গোপালগঞ্জ মুক্ত দিবস আজ

গাইবান্ধা, নোয়াখালী, সাতক্ষীরা ও গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

গাইবান্ধা নোয়াখালী সাতক্ষীরা গোপালগঞ্জ মুক্ত দিবস আজ

আজ ৭ ডিসেম্বর। গাইবান্ধা, নোয়াখালী, সাতক্ষীরা, নালিতাবাড়ী ও গোপালগঞ্জ হানাদারমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল মুক্ত করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর বিভিন্ন জেলার আকাশে ওড়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। বিজয়ের আনন্দে উল্লাসে ফেটে পড়ে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী সাধারণ মানুষ।

গাইবান্ধা : দিবসটি উপলক্ষে জেলা প্রশাসন আজ দুপুরে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স মিলনায়তনে আলোচনা সভা করবে। অন্যদিকে সন্ধ্যায় গানাসাস মুক্তমঞ্চে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, গাইবান্ধা জেলা সংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা, আলোচনা, স্মৃতিচারণা, মুক্তিযুদ্ধের গান ও কবিতা আবৃত্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

১৯৭১ সালের এদিন কোম্পানি কমান্ডার মাহবুব এলাহী রঞ্জু বীরপ্রতীকের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধার একটি দল ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর চর থেকে বালাসীঘাট হয়ে গাইবান্ধা শহরে প্রবেশ করে। মুক্তিযোদ্ধাদের আগমনের সংবাদ পেয়ে রাতেই গাইবান্ধা শহরের স্টেডিয়ামে অবস্থিত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সদস্যরা তাদের তল্পিতল্পা গুটিয়ে রংপুর ক্যান্টনমেন্টের উদ্দেশে পালিয়ে যায়। ফলে বর্তমান স্বাধীনতা প্রাঙ্গণ (তৎকালীন এসডিও মাঠ) মাঠে ঘটে মুক্তিযোদ্ধা-জনতার মিলনমেলা। ১০ সহস্রাধিক মানুষ সংবর্ধনা জানায় বিজয়ী বীর সেনাদের। গাইবান্ধায় যুদ্ধগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো হরিপুর অপারেশন, বাদিয়াখালীর যুদ্ধ, কোদালকাটির যুদ্ধ, রসুলপুর স্লুইস গেট আক্রমণ, নান্দিনার যুদ্ধ ও কালাসোনার যুদ্ধ।

নোয়াখালী : মুক্তিসেনারা আজকের দিনে জেলা শহরের মাইজদি পিটিআইতে রাজাকারদের প্রধান ঘাঁটির পতন ঘটিয়ে নোয়াখালীর মাটিতে উড়িয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয় পতাকা। তবে স্বাধীনতার ৫০ বছরেও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবর, গণকবরগুলো সংরক্ষিত সংরক্ষিত হয়নি। স্মৃতিগুলো সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। দখলদার বাহিনী ও রাজাকাররা ১৯৭১-এর বিভিন্ন সময় জেলা শহরের শ্রীপুর, সদরের রামহরিতালুক, গুপ্তাংক, বেগমগঞ্জের কালা পোল, কুরিপাড়া, গোপালপুর ও আমিশাপাড়ায় নির্বিচারে হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। এ সময় হানাদাররা গুলি চালিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করে দেড় শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশুকে। গানপাউডার দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। একই সঙ্গে হানাদার ও রাজাকাররা মেয়েদের ও বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে যায় জেনারেল হাসপাতালের উত্তর পাশে ভবনে, যা টর্চার সেল নামে পরিচিত। কোম্পনীগঞ্জের বামনী, তালমাহমুদের হাট, ১২ নম্বর স্লুইস গেট, সদরের ওদারহাট, করমবক্স, বেগমগঞ্জের ফেনাকাটা পুল, রাজগঞ্জ, বগাদিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হয় অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা। নোয়াখালী মুক্ত হওয়ার আগমুহূর্তে ৬ ডিসেম্বর গভীর রাতে মাইজদী পিটিআই ও বেগমগঞ্জ টেকনিক্যাল হাইস্কুল ক্যাম্প ছেড়ে কুমিল্লা সেনানিবাসের উদ্দেশে পালিয়ে যেতে থাকে পাকিস্তানি মিলিটারি ও মিলিশিয়ারা। এ সময় বেগমগঞ্জ-লাকসাম সড়কের বগাদিয়া ব্রিজ অতিক্রম করতেই সুবেদার লুৎফুর রহমান ও শামসুল হকের নেতৃত্বাধীন মুক্তিবাহিনীর হাতে অসংখ্য পাক সেনা ও মিলিশিয়া নিহত হয়। আজ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বিজয় মেলা কমিটি, সম্মিলিত সাংস্কৃৃতিক জোট মাইজদী পিটিআইসংলগ্ন মঞ্চে আলোচনা সভা, মুক্তিযুদ্ধের গান ও র‌্যালি করবে।

নালিতাবাড়ী : আজ নালিতাবাড়ী মুক্ত দিবস। ১ ডিসেম্বর নালিতাবাড়ী শত্রুমুক্ত করতে মুক্তিযোদ্ধারা অভিযান চালালেও সফল হতে পারেনি। ৭ ডিসেম্বর পূর্ব দিগন্তে সূর্যের লাল আভা ছড়িয়ে পড়লে মুক্তিযোদ্ধারা জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগানে এলাকায় ঢুকতে থাকে। ক্রমেই স্লোগানের আওয়াজ স্পষ্ট হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের কণ্ঠে, কণ্ঠ মিলিয়ে মুক্তির উল্লাসে মেতে ওঠে সবাই। ওড়ানো হয় লাল-সবুজের পতাকা।

সাতক্ষীরা : মাতৃভূমি শত্রুমুক্ত করতে সাতক্ষীরার দামাল ছেলেরা যে বীরত্বের পরিচয় দিয়েছিল তারই সফল সমাপ্তি ঘটে ৭ ডিসেম্বর। মুক্তিযোদ্ধারা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তের জেলা সাতক্ষীরার সাতক্ষীরা কালেক্টরেট চত্বরে সগৌরবে প্রথম উত্তোলন করে বিজয় নিশান স্বাধীন বাংলার লাল সবুজের পতাকা।

গোপালগঞ্জ : আজ গোপালগঞ্জ মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এদিন গোপালগঞ্জ শহর পাক হানাদার মুক্ত হয়েছিল। দিনটি জেলাবাসীর কাছে স্মরণীয়, আনন্দ ও উৎসবের দিন। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে গোপালগঞ্জের মিনি ক্যান্টনমেন্ট দুর্বল হয়ে পড়ে। টিকতে না পেরে ৬ ডিসেম্বর রাতে পাক সেনারা মিনি ক্যান্টনমেন্ট থেকে পালিয়ে ভাটিয়াপাড়া ক্যান্টমেন্টে আশ্রয় নেয়। ফলে গোপালগঞ্জ ৬ ডিসেম্বর রাতেই শত্রুমুক্ত হয়। গোপালগঞ্জ, মাঝিগাতী, সুকতাইল, বৌলতলী, সাতপাড়সহ বিভিন্ন স্থানে পাক বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ হয়। ৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত লগ্নে মিত্র দেশ ভারত প্রবাসী সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ায় হানাদার বাহিনীর মনোবল ভেঙে পড়ে। ৭ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা মিনি ক্যান্টনমেন্টে হামলার পরিকল্পনা করে চারদিক থেকে আক্রমণ বলয় রচনা করে। খবর পেয়ে পাক সেনারা ৬ ডিসেম্বর রাতেই গোপালগঞ্জ সদর থনা পরিষদ সংলগ্ন জয়বাংলা পুকুর পাড়ের মিনি ক্যান্টনমেন্ট ছেড়ে পালিয়ে যায়। মেজর সেলিমের অধীনে হানাদার বাহিনীর একটি দল ঢাকা ও অন্য একটি দল ভাটিয়াপাড়ার ওয়ারলেস ক্যান্টনমেন্টে চলে যায়। ৭ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জ মুক্ত হয়।

সর্বশেষ খবর