বুধবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
ঢাকায় ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা

বাংলাদেশ-ভারতের চিন্তায় বড় পার্থক্য নেই

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

বাংলাদেশ-ভারতের চিন্তায় বড় পার্থক্য নেই

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা গতকাল বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে বড় কোনো মতপার্থক্য নেই বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। তিনি বলেন, সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছি, কিন্তু বড় রকমের কোনো ভিন্নতা পাইনি। এখানে কেবল আছে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ক্ষেত্রগুলো। গতকাল বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে তিনি এসব বলেন। সকালে ঢাকা এসে পৌঁছানো হর্ষবর্ধন শ্রিংলা পররাষ্ট্র সচিব ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আজ ভারতে ফিরে যাওয়ার আগে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।

ঢাকায় আসার পর ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সরাসরি চলে যান ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে। সেখানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। পৌনে এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে দুই পররাষ্ট্র সচিব সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় শ্রিংলা বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক ভালোভাবে যাচ্ছে। দুই দেশের একসঙ্গে উদযাপন বিরল। বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণ ১৯৭১ সালে জীবন উৎসর্গ করেছিল। স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিয়েছিল। আপনাদের বিজয় দিবসের অংশ হতে পেরে আমরা গর্বিত। ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে ১৬ ডিসেম্বর উদ?যাপন উপলক্ষে বাংলাদেশে আসবেন। এটা তাঁর প্রথম বাংলাদেশ সফর। গত মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকায় এসেছিলেন। সেটি ছিল করোনা মহামারীর সময় তাঁর প্রথম বিদেশ সফর। এতে সম্পর্কের তাৎপর্য  বোঝা যায়। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা সম্পর্কের সোনালি অধ্যায়ে প্রবেশ করেছি। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, দুই দেশের সহযোগিতার ক্ষেত্রে বড় কোনো বাধা নেই। কীভাবে সামনের দিনগুলোতে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি, এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সবুজ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি, ডিজিটাল সহযোগিতা নিয়ে কথা হয়েছে, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যুক্ত। এতে দুই দেশের জনগণের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খুব শিগগিরই দিল্লি সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আমরা চাই তিনি ভারত সফর করুন। গত মার্চে ঢাকা সফরের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁকে দিল্লি সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এটি এখনো বহাল। দুই দেশের মধ্যে এ সফর সুবিধাজনক কোন সময়ে করা যায়, তা নিয়ে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে বিশেষ করে ওমিক্রনের কারণে উদ্বেগ আছে। তবে যত শিগগির সম্ভব তিনি ভারত সফর করুন, আমরা এটা চাই।

এ সময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক অনিষ্পন্ন ইস্যু রয়েছে। সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সামনের দিকে সম্পর্ক কীভাবে আরও এগিয়ে নেওয়া যাবে সে বিষয়ে আলোচনা করেছি। তিনি বলেন, চলতি বছরই ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করেছেন এবং একই বছরে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ বাংলাদেশে আসছেন, এটা একটা রেকর্ড। মৈত্রী দিবস উদযাপন হয়েছে। সবমিলিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে একটা স্বর্ণযুগ চলছে। এখানে কানেকটিভিসহ সামনের দিনের যে বিষয়গুলো আছে যেমন পরিবেশবান্ধব জ্বালানিতে সহযোগিতা, নতুন নতুন প্রযুক্তি  সেগুলো নিয়েও আমরা আলোচনা করেছি। কীভাবে আরও অগ্রসর হতে পারি, তা নিয়ে কথা বলেছি। একইভাবে অমীমাংসিত বিষয় যেগুলো আছে, সেগুলো কীভাবে সমাধান করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের সীমান্ত কীভাবে আরও শান্তিপূর্ণ করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের বাণিজ্য বাড়ানো, করোনা মোকাবিলায় সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। করোনার আরও নতুন নতুন ভেরিয়েন্ট আসতে পারে। তাই এই সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে হবে। বাংলাদেশ কখনোই নিরাপদ থাকবে না, যদি ভারত নিরাপদ না থাকে।

সীমান্তে যেন সমস্যা না হয় তা নিয়ে ফর্মুলা দিয়েছে ভারত : ভারতের পররাষ্ট্র সচিব পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎ শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ভারত আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র। দুই দেশের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আমরা সেই সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চাই। আমাদের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। পানি ইস্যুতেও আলোচনা হয়েছে। পানি ইস্যুতে জেআরসি বৈঠক নিয়ে আমাদের তাগিদ রয়েছে। এ ছাড়া সীমান্তে সতর্ক দৃষ্টি রাখবে ভারত। সীমান্তে যেন কোনো সমস্যা না হয়, তা নিয়ে তারা একটি ফর্মুলা দিয়েছে।

বাংলাদেশের যত টিকা লাগে সব দেবে ভারত : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বেরিয়ে সচিবালয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে তার মন্ত্রণালয়ে সাক্ষাৎ করেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব। সাক্ষাৎ শেষে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ভারত থেকে আরও পাঁচ মিলিয়ন ডোজ টিকা আসবে। করোনাভাইরাসের যত ডোজ টিকা দরকার বাংলাদেশকে তা ভারত সরবরাহ করবে বলে জানানো হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বাস দিয়েছেন যে, বাংলাদেশের এ ব্যাপারে দুর্ভাবনার কারণ নেই। ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ভারত আমাদের বৃহত্তম প্রতিবেশী। বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় এককভাবে এগিয়ে যাওয়া কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। ৭৫-পরবর্তী সময় সংশয় ও অবিশ্বাসের সম্পর্ক আমাদের জন্য শুভফল বয়ে আনেনি। এ বৈরী সম্পর্ক আমাদের পিছিয়ে দিয়েছে। মন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের মধ্যে কিছু অমীমাংসিত বিষয়ও আছে। সম্পর্ক ভালো থাকলে আলোচনার সুযোগ থাকে। সমস্যা যা আছে তা আলোচনা করে সমাধান করা যায়। কিন্তু বন্ধুত্ব যদি অবিশ্বাস ও সংশয়ে ঢাকা থাকে তবে কোনো কিছু এগোয় না বলে উল্লেখ করেন ওবায়দুল কাদের। সন্ধ্যায় ভারতীয় হাইকমিশনারের বাসায় হাইকশিনের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয় ভারতের পররাষ্ট্র সচিবকে। সেখানে দেশের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। 

সর্বশেষ খবর