বুধবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদে ব্যাপক ক্ষতি

চাষিদের মাথায় হাত

প্রতিদিন ডেস্ক

ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদে ব্যাপক ক্ষতি

ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পটুয়াখালীর গলাচিপা থেকে তোলা ছবি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে খুলনার উপকূলীয় এলাকায় রোপা আমন, বোরো বীজতলা ও শীতকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভোলায় পাকা-আধাপাকা আমন ধান, রবিশস্যসহ সব ফসলের খেত তলিয়ে গেছে। ফসল হারানোর আশঙ্কায় দিশাহারা কৃষক। ঝিনাইদহে হাজার হাজার একর পাকা ধানসহ শীতকালীন ফসলের খেত তলিয়ে গেছে। টাঙ্গাইলের ১২ উপজেলায় আবাদ করা সরিষা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষক। পটুয়াখালীতে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে ২ হাজার ৮৮৫ হেক্টর জমির ফসল। নড়াইলে ১৮ হাজার ৬৩২ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মানিকগঞ্জে এবার ৩৭ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়। এর মধ্যে ১ হাজার ৩০০ হেক্টরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের খবর-

খুলনা : বটিয়াঘাটা, পাইকগাছা, দাকোপ ও কয়রা উপজেলার ৩ হাজার ২০২ হেক্টর জমির পাকা ও আধাপাকা রোপা আমন ধানের খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। বোরো বীজতলা ও ২০ হেক্টর জমির শীতকালীন সবজি খেত নষ্ট হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, খুলনা অঞ্চলের উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন। জানা যায়, খুলনা জেলায় এ বছর ৯৩ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে মাত্র ২৫ শতাংশ ধান হয়েছে। বর্তমানে জমিতে থাকা ৩০ ভাগ পাকা ধান বৃষ্টিতে আক্রান্ত। এ ছাড়া কয়রা ও পাইকগাছার বেশির ভাগ মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। জলোচ্ছ্বাসে কয়রার দক্ষিণ বেদকাশি, হরিহরপুর লঞ্চঘাটসংলগ্ন বেড়িবাঁধ ভেঙে দুটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গাতিরঘেরি গ্রামের রিংবাঁধ ভেঙে লবণপানিতে তলিয়ে গেছে ফসলি জমি, মাছের ঘের। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল জানান, কয়রাসহ উপকূলীয় এলাকায় শতাধিক চিংড়ির ঘের তলিয়ে গেছে। এতে কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে চাষিদের। খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. আকতারুজ্জামান দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছেন।

ভোলা : সদর উপজেলায় ৬ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ। কৃষি অফিসের তথ্যমতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন সদর উপজেলার প্রায় ২৭ হাজার কৃষক। সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মঞ্জুর আলম জানান, তারা মাঠে গিয়ে কৃষক ও ফসলের খোঁজখবর নিচ্ছেন। পাশাপাশি খেতের পানি দ্রুত নিষ্কাশনের পরামর্শ দিচ্ছেন। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও ফসলের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ভোলা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ রিয়াজউদ্দিন জানান, এ উপজেলায় প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমির ফসল এখন পানির নিচে তলিয়ে আছে।

পটুয়াখালী : ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে তিন দিনের টানা বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে আমন, তরমুজ ও খেসারি ডালের বেশি ক্ষতি হয়েছে। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, আমন ধানের তেমন ক্ষতি হবে না। কিন্তু নিচু এলাকায় আমন, খেসারি, তরমুজ ও শাকসবজির কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করা হচ্ছে। পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক এ কে এম মহিউদ্দিন জানান, জেলায় এ বছর ১ লাখ ৯৯ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদ করা হয়। এর মধ্যে ৫০০ হেক্টর জমির আমন ফসলের কিছুটা ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। খেসারি ডাল ২ হাজার হেক্টর, তরমুজ ২৫ হেক্টর, শাকসবজি ৩০০ হেক্টর, সরিষা ১০ ও ধনের ২০ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে। মোট ২ হাজার ৮৮৫ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে।

মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জে এবার ৩৭ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়। এর মধ্যে ১ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ২ হাজার ৭০৬ হেক্টর জমিতে খেসারির আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে ৩০ হেক্টর জমিতে। ২৬ হেক্টর জমির আলু, ৩০ হেক্টর পিঁয়াজ ও ৫৬৮ হেক্টর জমির গাজর খেত প্লাবিত হয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে বীজতলার সব বীজ পচে যাওয়ার অবস্থা তৈরি হয়েছে। জেলা খামারবাড়ির উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে আরও দু-তিন দিন লাগবে। তেমন ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা নেই বলেছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. শাহজাহান বিশ্বাস।

নড়াইল : নড়াইলে গম, সরিষা, মসুর, বোরো ধানের বীজতলা, মরিচ, লাল শাক, বেগুন, শীতকালীন ফসল মুলা, বাঁধাকপি, ফুলকপি ও ওলকপির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে নড়াইলের কৃষক নিরাশ। কৃষি সম্প্রসরণ অধিদফতরসূত্রে জানা গেছে, গত তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে ১ হাজার ৪৫ হেক্টর জমির শীতকালীন ফসল, ১৬২ হেক্টর জমির বোরো বীজতলা, ৫০ হেক্টর জমির মরিচ, ৭ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমির সরিষা, ৭ হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমির মসুর ও ২ হাজার ১০০ হেক্টর জমির গম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহে জাওয়াদের প্রভাবে পানিতে ভাসছে কৃষকের স্বপ্ন। টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে হাজার হাজার একর পাকা ধানসহ শীতকালীন ফসলের খেত তলিয়ে গেছে। এসবের মধ্যে রয়েছে আমন ধান, পিঁয়াজ, রসুন, মসুর, গম, আলু, ভুট্টা, মরিচসহ নানা শাকসবজি। মাঠে মাঠে কেটে রাখা ধান পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলে বৃষ্টির ফলে অনেক জমির সরিষা চারা গাছ নুয়ে পড়েছে। নিচু জমিতে পানি জমেছে। বাসাইল কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের জিকাতলী পাড়া গ্রামের চাষি ফণীন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘আমি এ বছর ৪০০ শতাংশ জমিতে সরিষা আবাদ করেছি। অসময়ে বৃষ্টির ফলে অনেক ক্ষতি হয়ে গেল।’

সর্বশেষ খবর