বৃহস্পতিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

হানাদার মুক্তির উল্লাস চারদিকে

মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খাগড়াছড়ি, বরিশাল ও পিরোজপুর প্রতিনিধি

হানাদার মুক্তির উল্লাস চারদিকে

আজ ৯ ডিসেম্বর। মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খাগড়াছড়ি, বরিশাল, পিরোজপুর ও কুমিল্লা হানাদারমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মহান মুক্তিযুদ্ধকালে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল মুক্ত করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। বিজয়ের দিন যত ঘনিয়ে আসে ততই মুক্ত হতে থাকে হানাদার অধিকৃত বিভিন্ন অঞ্চল। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর বিভিন্ন জেলার আকাশে ওড়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। বিজয়ের আনন্দে উল্লাসে ফেটে পড়ে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী সাধারণ মানুষ।

মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ইউনিটের যৌথ উদ্যোগে গতকাল সকালে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে পাক হানাদারমুক্ত দিবস পালিত হয়। এরপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন। পরে শহরে লাল-সবুজের পতাকাসহ বিভিন্ন ফেস্টুন নিয়ে বর্ণাঢ্য বিজয় শোভাযাত্রা বের করা হয়। জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন মহিলা সংসদ সদস্য সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদুর রহমান ও জামাল উদ্দিন।

নেত্রকোনা : ১৯৭১ এর এই দিনে বাঙালি মরণপণ লড়াই করে নেত্রকোনাকে হানাদারমুক্ত করেছিল। সেদিন নেত্রকোনা শহরকে মুক্ত করতে গিয়ে পাক হানাদারদের সঙ্গে সম্মুখ সমরে শহীদ হয়েছিলেন আবু খাঁ, আবদুস সাত্তার, আবদুর রশিদ। বীরত্বগাথা দিবসটি স্মরণে ‘প্রজন্ম শপথ’ নামে ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছে। তবে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সিদ্দিক আহমদ যার নেতৃত্বে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল তিনি দেখে যেতে পারেননি এ উদ্যোগ। এবার মুক্ত দিবসে যুদ্ধকালীন সময়ের উইং কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা মো. শামছুজ্জোহা, কনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহিম, সদর সাবেক কমান্ডার আইয়ুব আলী, হায়দার জাহান চৌধুরীসহ মুক্তিযোদ্ধারা দাবি জানান, নতুন প্রজন্মের কাছে এই বীরত্বগাথার ইতিহাস তুলে ধরতে হবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সরাইলমুক্ত দিবস। গতকাল সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে স্থানীয় শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরু হয়। পরে চত্বর মঞ্চে মুক্ত দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকারের সভাপতিত্বে জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ দৌলা খান, পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমান, পৌর মেয়র মিসেস নায়ার কবির, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজুর রহমান ওলিওসহ ৩ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেন। এদিকে সকালে সরাইল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে মুক্তিযোদ্ধারা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে র‌্যালি বের করেন।

খাগড়াছড়ি : নানা আয়োজনে গতকাল রামগড়মুক্ত দিবস পালিত হয়েছে। রামগড় উপজেলা পরিষদ চত্বরের মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্যে শহীদদের স্মরণে পুষ্পার্ঘ অর্পণ শেষে শোভাযাত্রা বের করা হয়। পরে পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত সভায় রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে হাবিবা মজুমদারের সভাপতিত্বে পৌর মেয়র রফিকুল আলম কামালসহ মুক্তিযোদ্ধা ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

বরিশাল : ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধে কোণঠাসা হয়ে বরিশাল থেকে নৌপথে পালিয়ে যায় পাকবাহিনী। দিবসটি উপলক্ষে নগরীর বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিক এবং প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে সংবর্ধনা প্রদান এবং বিকালে জেলা স্টেডিয়ামে ‘সম্প্রীতির আলোয় আলোকিত কনসার্ট’ আয়োজন করে সিটি করপোরেশন।

পিরোজপুর : বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদ্যাপিত হয়েছে পিরোজপুরমুক্ত দিবস। এ উপলক্ষে সকালে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন জেলা প্রশাসক আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল খায়রুল হাসান, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী রেবেকা খান, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াউল আহসান গাজী। পরে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জেলা আওয়ামী লীগ, পিরোজপুর পৌরসভা, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড, সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ, জেলা যুবলীগ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ, জেলা ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন।

কুমিল্লা : নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে কুমিল্লা হানাদারমুক্ত দিবস পালিত হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের আয়োজনে টাউন হল থেকে সদর আসনের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের নেতৃত্বে একটি শোভাযাত্রা নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এতে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সফিউল আহমেদ বাবুলসহ স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। পরে নগর উদ্যানসংলগ্ন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করা হয়। বিকালে নগরীর শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আঞ্চলিক বীর মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ এবং সন্ধ্যায় টাউন হল প্রাঙ্গণে শিখা প্রজ্বালনসহ আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়।

সর্বশেষ খবর