রবিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

পাবনায় চেয়ারম্যান প্রার্থী নিহত

যশোরে শতাধিক বাড়িতে হামলা, ইউপিতে সহিংসতা অব্যাহত

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঘিরে সংঘাত আবারও বেড়ে যাচ্ছে। চতুর্থ ধাপের ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই সংঘাত-সংঘর্ষ বাড়ছে। গতকাল পাবনায় নির্বাচনী সংঘাতে একজন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী নিহত হয়েছেন। ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নে এক প্রার্থীর প্রচারে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বগুড়ার কাহালুতে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের নির্বাচনী সহিংসতায় চারজন আহত হয়েছেন। এ সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, নির্বাচনী অফিস, বসতবাড়িতে হামলা, বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া যশোরের শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় নৌকা প্রার্থীর কর্মী ও সমর্থকদের শতাধিক বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর : পাবনা সদর উপজেলার ভাঁড়ারা ইউপিতে নির্বাচনী সংঘর্ষে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াসিন আলম (৪০) নিহত হয়েছেন। গতকাল সকালে ইউনিয়নের কোলাদীচারা বটতলা এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সঙ্গে স্বতন্ত্র আনারস ও ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যানের সমর্থকদের সংঘর্ষের একপর্যায়ে প্রতিপক্ষের হামলায় এ ঘটনা ঘটে। প্রার্থী নিহত হওয়ায় ভাঁড়ারা ইউপিতে আগামী ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের ভোট স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার সকালে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী (ঘোড়া মার্কা) সুলতান মাহমুদের সমর্থকরা নির্বাচনী প্রচারণায় বের হন। এ সময় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আবু সাঈদ খানের লোকজন বাধা দিলে সংঘর্ষ ও গোলাগুলি শুরু হয়। এ সময় সুলতান মাহমুদের চাচাতো ভাই স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ইয়াসিন আলমকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এ সময় দুই পক্ষের অন্তত ২০ জন গুরুতর আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অবস্থার অবনতি হলে তাদের মধ্যে ছয়জনকে রাজশাহী মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়। রাজশাহী নেওয়ার পথে নাটোরের বনপাড়ায় মারা যান ইয়াসিন আলম। বগুড়ার কাহালুতে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের নির্বাচনী সহিংসতায় চারজন আহত হয়েছেন। এ সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, নির্বাচনী অফিস, বসতবাড়িতে হামলা, বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার রাতে কাহালু উপজেলার নারহট্ট ইউনিয়নের বিবিরপুকুর বাজারে এ সহিংসতার ঘটনা ঘটে। নাটোর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কঠোর হুঁশিয়ারির পরও সিংড়া উপজেলার ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের পোস্টার ছিনতাই, ছিঁড়ে নষ্ট ও হুমকি-ধমকি থামছে না। আর এসব অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাশীন নৌকার মনোনিত প্রার্থী ও তাদের কর্মীদের বিরুদ্ধে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাগান্না ইউনিয়নের বাথপুকুরিয়া গ্রামে শুক্রবার ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি (স্বতন্ত্র) প্রার্থী আলাউদ্দীন আল মামুনের সমর্থকদের ওপর হামলা হয়েছে। এতে কমপক্ষে চার-পাঁচজন আহত হন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর মোটরসাইকেল প্রতীক টাঙানোর অপরাধে তাদের ওপর হামলা হয় বলে অভিযোগ। চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার পক্ষিয়া ইউনিয়নে প্রচারকালে স্বতন্ত্র দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনায় অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। শনিবার সকাল ও দুপুরে পৃথক দুই স্থানে এসব হামলার ঘটনা ঘটে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আখাউড়া থানা পুলিশ ‘একই মঞ্চে সকল প্রার্থী’ শিরোনামে এক ব্যতিক্রম অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। শনিবার সকালে উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের হীরাপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত নারী সদস্য ও সাধারণ সদস্য প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আক্তার, সহকারী পুলিশ সুপার (কসবা সার্কেল) নাহিদ হাসান, আখাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মিজানুর রহমান প্রমুখ। ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী আসনের (ওয়ার্ড নম্বর ৪, ৫ ও ৬) প্রার্থী মোছা. সুফিয়া বেগমের নির্বাচনী প্রচারে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া গত ৮ ডিসেম্বর রাতে সুফিয়া বেগমের স্বামী বর্তমান মেম্বার ঝন্টু বিশ্বাস ও ছেলে নাঈম বিশ্বাসকে মারধর করেছে প্রতিপক্ষ। এ বিষয়ে তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। প্রতিপক্ষের মো. লায়েকুজ্জামান লায়েক, বাবু মোল্লা, ফানু মোল্লা, হাসান মোল্লা ও এনামুল মোল্লার বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ আনা হয়। সুফিয়া বেগম জানান, তিনি আতঙ্কে স্বাভাবিক নির্বাচনী প্রচার কাজ করতে পারছেন না।  যশোরের শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সহিংসতায় নৌকা প্রার্থীর কর্মী ও সমর্থকদের শতাধিক বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। নৌকায় ভোট দেওয়ায় ইউনিয়নের ১০ গ্রামের ৩ শতাধিক নেতা-কর্মী বাড়িঘর ছাড়া। নৌকার প্রার্থী বাগআঁচড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস কবির বকুল ভোটের পর থেকেই প্রাণভয়ে বাড়ি ছেড়ে পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন নিরাপদ স্থানে। শার্শা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল হক মঞ্জু অভিযোগ করে বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল খালেকের ইন্ধনে জামায়াত-বিএনপির লোকজন প্রকাশ্যে নৌকা প্রার্থীর সমর্থক আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর