মঙ্গলবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বুদ্ধিজীবী হত্যার দিনে হানাদারমুক্ত অনেক জেলা

প্রতিদিন ডেস্ক

বুদ্ধিজীবী হত্যার দিনে হানাদারমুক্ত অনেক জেলা

আজ ১৪ ডিসেম্বর। বিজয়ের ঠিক দুই দিন আগে পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত হতে থাকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। ১৯৭১ সালের এদিনে পরাজয় নিশ্চিত জেনে বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞ চালায় পাকসেনারা। অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন জেলায় মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর প্রবল প্রতিরোধে পড়ে পালাতে বাধ্য হয় তারা। এদিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর বিভিন্ন জেলার আকাশে ওড়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। বিজয়ের আনন্দে উল্লাসে ফেটে পড়ে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী সাধারণ মানুষ। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :

দিনাজপুর : আজ দিনাজপুর মুক্ত দিবস। এ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। ১৯৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধে ১৪ ডিসেম্বর ৭ নম্বর সেক্টরের অধীনে মুক্তিযোদ্ধারা মিত্রবাহিনীর সঙ্গে যৌথ অভিযান চালিয়ে দিনাজপুর জেলা শহরকে পাক-হানাদার মুক্ত করে। ৭ নম্বর সেক্টরের সাব-সেক্টর হিসেবে দিনাজপুরের রণাঙ্গনে নেতৃত্ব দেন সেক্টর কমান্ডার কর্নেল (অব.) কাজী নুরুজ্জামান। ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর এবং শক্রকবলিত দিনাজপুরের চিরিরবন্দর, ফুলবাড়ী, খানপুর, বিরল ও দশমাইল হয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা দিনাজপুর শহরে প্রবেশ করে। বিজয়ের তিন দিন আগে ১৩ ডিসেম্বর বিরল উপজেলা বহলা গ্রামের নিরীহ ৪৩ জন গ্রামবাসীকে পাকহানাদাররা গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনার সংবাদ পেয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যদের আটক করতে চতুর্মুখী অভিযান শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযানে ভীত হয়ে পাক-হানাদার বাহিনী ও রাজাকার আলবদর ও আলসামস বাহিনী পার্শ্ববর্তী অবাঙালি অধ্যুষিত সৈয়দপুর শহরে আশ্রয় নেয়। দিনাজপুর শহর থেকে পাকসেনারা পালিয়ে যাওয়ায় ১৪ ডিসেম্বর দুপুরের পর শহরে জনগন উল্লাস মিছিল করেছিল।

বগুড়া : ১৯৭১ সালের এদিনে বগুড়ার শেরপুর উপজেলা হানাদার মুক্ত হয়। সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধারা তিন দিক থেকে আক্রমণ চালিয়ে এ উপজেলা থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের বিতাড়িত করে এ উপজেলাকে হানাদার মুক্ত করে। এদিন সকাল ৯টার দিকে সারিয়াকান্দি থেকে মুক্তিযোদ্ধা বাচ্চু মিয়ার নেতৃত্বে সড়ক পথে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে ও ধুনট থেকে মুক্তিযোদ্ধা আকরাম হোসেন খানের নেতৃত্বে সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল শেরপুর শহরে প্রবেশ করেন। পরে শহরের অবস্থানরত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের ওপর একযোগে আক্রমণ চালায়। তুমুল যুদ্ধের মধ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা শেরপুর শহরকে পাক হানাদারমুক্ত করেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : টানা ছয় দিন যুদ্ধের পর ১৪ ডিসেম্বর পাকসেনাদের কবল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর সদরকে মুক্ত করেন রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধারা। ৭ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল পাকসেনা কবলিত নবীনগর সদরকে মুক্ত করতে যাত্রা করে ৮ ডিসেম্বর ইব্রাহিমপুর গ্রামে অবস্থান নেয়। ৯ ডিসেম্বর নবীনগর সদরের দক্ষিণের মাঝিকাড়া গ্রাম থেকে এবং সদরের উত্তর দিক থেকে পৃথকভাবে রণাঙ্গনের সৈনিকরা দুটি দলে বিভক্ত হয়ে মরণপন আক্রমণ শুরু করে। ১০ ডিসেম্বর শত্রু সেনারা নবীনগর পৌর এলাকার মাঝিকাড়া গ্রামের সব কাঠের দোকানসহ কয়েকটি বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। ১৩ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিকটবর্তী হরণগ্রাম থেকে নবীনগর পাকসেনাদের অবস্থানের ওপর উপর্যুপরি কামানের গোলা নিক্ষেপ করলে নবীনগর বড় বাজারে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী ২০০ বছরের পুরনো মঠসহ কয়েকটি সরকারি অফিসের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ওইদিন মাঝিকাড়া গ্রামে যুদ্ধরত কনিকাড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুছ সালাম শহীদ হন। ১৪ ডিসেম্বর নবীনগর হাইস্কুলসহ পুরো নবীনগরকে পাকিস্তানিদের কাছ থেকে মিত্রবাহিনী শত্রুমুক্ত করে।

আমতলী : ৭১ সালের এদিনে বরগুনার আমতলী থানা হানাদারমুক্ত হয়। মুক্তিযোদ্ধা আফাজ উদ্দিন বিশ্বাসের নেতৃত্বে বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাক হানাদার ও রাজাকার বাহিনী হটিয়ে আমতলী থানা মুক্ত করেন। ওইদিন আফাজ উদ্দিন বিশ্বাস জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং উপস্থিত জনতা জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে আমতলীকে মুক্তাঞ্চল ঘোষণা করেন।

সর্বশেষ খবর