শুক্রবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ভয়াবহ সড়কের নাম টঙ্গী-গাজীপুর

♦ ১৫ মিনিটের পথ যেতে লাগে ৩-৫ ঘণ্টা ♦ রাস্তা মেরামত কবে শেষ হবে কেউ জানে না ♦ চার বছর ধরে ভোগান্তি

আফজাল, টঙ্গী

ভয়াবহ সড়কের নাম টঙ্গী-গাজীপুর

দীর্ঘদিনেও কাজ শেষ না হওয়ায় ডোবা নালায় পরিণত হয়েছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী-চেরাগ আলী এলাকা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

টঙ্গী-গাজীপুর রুটে রাস্তার সংস্কার কাজ শেষ না হওয়ায় যানজট আর ভোগান্তিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। খানাখন্দে ভরা রাস্তায় যানজট এখন গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে। এই যানজটের ধকল পোহাতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকেও। টঙ্গী-গাজীপুর পেরিয়ে এখন মহাখালী পর্যন্ত গণপরিবহনের লাইন লেগেই থাকে। বছরের পর বছর ধরে সংস্কার চলতে থাকা এই সড়কের মেরামত শেষ কবে হবে তা কেউ জানে না। পিঁপড়ের গতিতে চলা এই মহাসড়কের মেরামত কাজ দ্রুতগতিতে শেষ করে যানজটের ভোগান্তি থেকে রক্ষা চান ভুক্তভোগীরা। টঙ্গী-গাজীপুরের যানজট এখন ঢাকার উত্তরা পেরিয়ে মহাখালীকেও গ্রাস করেছে। খানাখন্দে ভরা ভাঙাচোরা রাস্তা এখনো পুরোপুরি মেরামত না হওয়ায় পরিস্থিতি দিনে দিনে আরও নাজুক হয়ে উঠছে। সম্প্রতি কয়েক দিনের বৃষ্টিতে রাস্তায় জমে থাকা পানিতে সড়কের নানা স্থানে বিশাল বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দূরপাল্লার গাড়িগুলোর গতিবেগও ৫ থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে রাখতে হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, যানজট আর রাস্তার বেহাল দশার কারণে হেঁটেও এ রুটে গাড়ির আগে যাওয়া যায়। যানজটের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায় ঢাকামুখী যানবাহনগুলোতে। টঙ্গী ব্রিজ থেকে টঙ্গী কলেজ গেট পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার রাস্তা একেবারেই বেহাল বলে জানা গেছে। রাজধানীর অদূরে শিল্প শহর হিসেবে পরিচিত টঙ্গী-গাজীপুর। টঙ্গী থেকে জয়দেবপুরের দূরত্ব মাত্র ১২ কিলোমিটার। স্বাভাবিকভাবে গণপরিবহনে এই দূরত্ব যেতে মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিট লাগার কথা থাকলেও সড়কের বেহাল দশার কারণে যানজটে অনেক ক্ষেত্রে এই দূরত্ব পাড়ি দিতে সময় লাগছে ৩ থেকে ৫ ঘণ্টা। আবার কোনো কোনো সময় এর চেয়েও বেশি সময় পার করতে হচ্ছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী-জয়দেবপুর সড়কে যানজট দেখা দিলে এর প্রভাব পুরো ঢাকার রাজধানীতে ছড়িয়ে পড়ছে। যানজটে নাকাল হয়ে নগরবাসীকে তখন গাড়িতে বসে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মূল্যবান সময় নষ্ট ছাড়া আর কোনো গতি থাকছে না। বিআরটি প্রকল্পের রাস্তা সংস্কারের কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে এ বিষয়টি কেউ জানেন না। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের ধীর গতি হওয়ায় তা শেষ হচ্ছে না বলে মন্তব্য করছেন এলাকাবাসী। এ ছাড়া মহাসড়কে জায়গা দখল করে অসংখ্য ভাসমান দোকানপাট ও হকার বসায় যানজট তৈরির আরেক কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেহাল দশার এই সড়কেই কোথাও কোথাও অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে রাস্তা। সব মিলিয়ে মহাসড়কে বিশৃঙ্খল অবস্থা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দুই থেকে তিন দিনের ছুটিতে এই সড়কে গাড়ির চাপ বাড়লে যানজট আরও ভয়ানক রূপ ধারণ করে। নানা উৎসবের সময় ছুটিতে রাজধানী থেকে বের হয়ে গাজীপুর পার হতেই নাকাল হতে হয় নগরবাসীকে। সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের রাজধানী এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুরের শিববাড়ী পর্যন্ত সাড়ে ২০ কিলোমিটার এর রাস্তা সংস্কার কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। চারটি প্যাকেজে এ কাজ শুরু হয়। এর মধ্যে দুটি প্যাকেজের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে এবং বাকি দুটি প্যাকেজের কাজ চলমান রয়েছে। ২০ কিলোমিটার রাস্তার কাজ দীর্ঘ সাড়ে চার বছরেও শেষ হয়নি। তবে কর্তৃপক্ষ বলছেন, তিন মাসের মধ্যে রাস্তার কাজ শেষ হবে। এ ছাড়া হাউস বিল্ডিং থেকে চেরাগ আলী পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সমাপ্ত হবে। ফ্লাইওভার নির্মাণ চলমান থাকায় তা যানজটের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে বিসিক এলাকার গার্মেন্ট ব্যবসায়ী মাহাবুর রব্বানি ও এভারওয়ে কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাঈদ সুমন বলেন, ‘মহাসড়কের টঙ্গী ও জয়দেবপুর সড়কে যানজটের কারণে সাধারণ মানুষ যেমন ভোগান্তির শিকার হচ্ছে তেমনি শিল্প মালিকরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এমনকি বিদেশি ক্রেতারা নির্দিষ্ট সময়ে কারখানা ভিজিট করতে আসতে না পারায় তারাও ক্ষুব্ধ হচ্ছেন। এ সংকট থেকে কবে উত্তরণ ঘটবে আমরা কেউ জানি না।’ ট্রাফিক দক্ষিণের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. ফয়জুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, বিআরটিএ প্রকল্পের নির্মাণ খোঁড়াখুঁড়ি আর বৃষ্টির পানিতে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া টঙ্গী হোসেন মার্কেট থেকে ভোগড়া বাইপাস পর্যন্ত নেই ডিভাইডার, এতে করে গাড়ি বিশৃঙ্খলভাবে চলাচল করছে। আবার টঙ্গী মিল গেট থেকে টঙ্গী বাজার পর্যন্ত বাঁশ দিয়ে ডিভাইডার দেওয়া হলেও তা সরিয়ে গাড়ি চলছে। এতে মহাসড়কে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা যানজট রোধে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ বিআরটি প্রকল্প পরিচালক মহিরুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, এখানে চারটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে এবং দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এর মধ্যে প্রায় ৪ কিলোমিটার রাস্তার কাজ বাকি রয়েছে। আগামী বর্ষা শুরুর আগেই আমাদের কাজ শেষ হবে। সর্বোচ্চ তিন মাস সময় লাগবে।’ গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (অপরাধ দক্ষিণ) মোহাম্মদ ইলতুৎ মিশ বলেন, বিআরটি প্রকল্পের খোঁড়াখুঁড়ি শেষ না হলে যানজট থাকবেই। দ্রুত কাজ শেষ হলেই মানুষের দুর্ভোগ কমবে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর