শুক্রবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জনগণ গ্রহণ করেনি : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

র‌্যাবের সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের জনগণ গ্রহণ করেনি বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। তিনি বলেন, র‌্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেনের কাছে তুলে ধরেছি।

গতকাল ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ মন্তব্য করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ফোনকলটা হয়েছিল। আলোচনার জন্য। এ সময় সাংবাদিকরা জানতে চান র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে কি না? এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘আমি ওনাকে বললাম যে আপনারা এমন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যে সিদ্ধান্ত আমাদের দেশবাসী গ্রহণ করেনি। গ্রহণ করেনি এজন্য যে আপনাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক প্রায় ৫০ বছরের, ভেরি ট্রাস্টেড ফ্রেন্ডশিপ। স্বাভাবিকভাবে আমাদের প্রত্যাশা ছিল আপনারা এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিলে আমাদের আগেভাগে জানাবেন। সেই সঙ্গে বললাম আপনারা গ্লোবালি টেররিজমের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছেন। যে প্রতিষ্ঠান- অত্যন্ত ডিসিপ্লিন প্রতিষ্ঠান র‌্যাব, সেটিকে আপনারা স্যাংশন করলেন!’ টেলিফোন আলাপে সন্ত্রাসবাদ দমনে যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্যের কথা তুলে ধরার বিষয়টি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি তাঁকে বলেছি আপনাদের যেসব বৈশ্বিক উদ্যোগ, লক্ষ্য- এ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে অত্যন্ত যোগ্যতার সঙ্গে সেগুলো পালন করছে। হোলি আর্টিজান ঘটনার পরে বাংলাদেশে একটিও সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেনি, এদের জন্য। এরা দুর্নীতিপরায়ণ নয়। দুর্নীতিপরায়ণ নয় বলেই এদের প্রতি বাংলাদেশের জনগণের আস্থা আছে।’ র‌্যাবের প্রশংসা করে ব্লিনকেনকে মোমেন বলেছেন, ‘ভুক্তভোগীরা কোনো প্রয়োজনীয় ঘটনায় র‌্যাব নিয়োগ চায়। কোনো বিষয়ে অন্যান্য ফোর্স নিয়োগ করলে তখন তারা বলে র‌্যাব হলে সব ঠিক। এমন একটি প্রতিষ্ঠানকে আপনারা স্যাংশন করেছেন, এটা আমাদের দেশবাসী পছন্দ করেনি।’ বুধবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ব্লিনকেন মুঠোফোনে আবদুল মোমেনের সঙ্গে কথা বলেন। প্রায় ৩০ মিনিটের আলোচনায় আগামী বছর সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে দুই দেশের সহযোগিতা এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তাঁরা কথা বলেন। এ সময় র‌্যাব এবং র‌্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গটি তোলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে আলোচনার আশ্বাস দেন। বাংলাদেশের কোনো বিষয়ে প্রশ্ন থাকলে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে ফোনে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেনকে অনুরোধ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহম্মদ ইমরান প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আমি মাত্রই জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে আমাদের বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন উপলক্ষে এক মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ উপভোগ করে এলাম। এবারের কুচকাওয়াজ অন্য যে কোনো বারের থেকে এক বিরল তাৎপর্য বহন করে। এবারের বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ এবং ভারতের রাষ্ট্রপতি একই সঙ্গে কুচকাওয়াজ উপভোগ করলেন। আমাদের দেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে বিজয় দিবসে কুচকাওয়াজ উদ্যাপনে দুটি দেশের রাষ্ট্রপতির অংশগ্রহণ এই প্রথম। সেজন্য আমি ভারতের রাষ্ট্রপতির প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। বিজয়ের এই মাসে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশে এসে পৌঁছেন। তিনি বাংলাদেশের বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী, মুজিববর্ষের সমাপনী দিন উদ্যাপন এবং বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এ সফর করছেন। এই রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতের ফার্স্ট লেডি, রাষ্ট্রপতির কন্যা, ভারতের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী, একজন সংসদ সদস্য, পররাষ্ট্র সচিবসহ বিভিন্ন দফতরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তাঁর সঙ্গী হিসেবে আছেন। ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি বাংলাদেশে তাঁর প্রথম সফর। এ কে আবদুল মোমেন বলেন, বুধবার বিকালে আমি ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করি। আমি তাঁর সঙ্গে আলোচনার সময় দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের সামগ্রিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করি। ভারতের রাষ্ট্রপতি এ সময় বলেন, ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ তত্ত্বের অন্যতম ভিত্তি হচ্ছে বাংলাদেশ। আঞ্চলিক যোগাযোগ/কানেকটিভিটি স্থাপনের মাধ্যমে পুরনো গৌরবময় অধ্যায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এ সময় তিনি সহযোগিতার নতুন নতুন ক্ষেত্র যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সবুজ অর্থনীতি, পারমাণবিক শক্তি, বিগ ডাটা, তথ্যপ্রযুক্তি ইত্যাদি বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা স্থাপনে জোর দেন। পরে ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। ভারতের রাষ্ট্রপতি আম পাঠানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। পরে তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বঙ্গভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে মেঘালয়ের বালাত শহরে থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের স্মৃতি রোমন্থন করেন। ভারতের রাষ্ট্রপতি দুই দেশের দুর্লভ যোগসূত্রের ভিত্তি একই ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষা, কৃষ্টি ও সভ্যতা থেকে উৎসরিত বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

সর্বশেষ খবর