শুক্রবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ফুল দেওয়া নিয়ে বিভিন্ন স্থানে হামলা সংঘর্ষ

প্রতিদিন ডেস্ক

মহান বিজয় দিবসে ফুল দেওয়া এবং র‌্যালি করা নিয়ে গতকাল বিভিন্ন স্থানে হাতাহাতি, সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রাম, বগুড়া, কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বাগেরহাটে এসব ঘটনা ঘটে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম নগরের খুলশী থানার আমবাগান বড় মসজিদ এলাকায় আওয়ামী লীগের অফিসের সামনে বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের র‌্যালি শেষে বিরিয়ানি বিতরণকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি হয়েছে। গতকাল দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন- হিরণ গ্রুপের সমর্থক টিটু চক্রবর্তী (২৩) ও বাবলু (২০) এবং স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওয়াসিমের সমর্থক মো. সুজন (২০)। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিজয় দিবসের র‌্যালি শেষে আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিরিয়ানি বিতরণকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিবদমান দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি শুরু হয়। এ সময় তিনজন ছুরিকাহত হলে দুপুর আড়াইটার দিকে তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সন্তোষ চাকমা বলেন, খাবার বিরতণের সময় দুই গ্রুপের মধ্যে ছুরিকাঘাত ও মারধরের ঘটনা ঘটে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে আটক করা হয়েছে।

বগুড়া : বগুড়ার নন্দীগ্রামে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার সময় ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি’ স্লোগান দেওয়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে সংর্ঘষ হয়েছে। এ সময় উভয়পক্ষের কমপক্ষে ১৩ জন আহত হন। ভাঙচুর করা হয়েছে ১০টির বেশি মোটরসাইকেল। এ ঘটনায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগ উভয় দলই স্থানীয় প্রশাসনকে দায়ী করে বিজয় দিবসে উপজেলা প্রশাসনের কর্মসূচি বর্জনের ঘোষণা দেয়। গতকাল সকাল ৮টায় নন্দীগ্রাম বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ সংর্ঘষের ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রফিকুল ইসলাম ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন রানার নেতৃত্বে দলীয় নেতা-কর্মীরা উপজেলা পরিষদ চত্বরে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যান। এর আগে বগুড়া-৪ আসনের বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শহীদ মিনারে যান। শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের সময় বিএনপি নেতা-কর্মীরা ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার’ দাবিতে স্লোগান দিলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। তখন বিএনপি নেতা-কর্মীরা তড়িঘড়ি করে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে বাসস্ট্যান্ডে ফিরে যান। এরপর বিএনপি নেতা-কর্মীরা একটি হোটেলে বসে নাশতা করছিলেন। তখন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বাসস্ট্যান্ড চত্বরে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুষ্পমাল্য অর্পণ করতে আসেন এবং দলীয় স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় হোটেলে থাকা বিএনপি নেতা-কর্মীরাও দলীয় স্লোগান দিতে শুরু করলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। ভাঙচুর করা হয় কমপক্ষে ১০টির বেশি মোটরসাইকেল। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের কমপক্ষে ১৩ জন আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। নন্দীগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কালাম আজাদ জানান, শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার পর বাসস্ট্যান্ড চত্বরে বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

কিশোরগঞ্জ : বিজয় দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেওয়া নিয়ে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকালে উপজেলা পরিষদ চত্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেওয়া নিয়ে বর্তমান এমপি নূর মোহাম্মদ ও সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ দুই রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এরপর দুপুর ১২টার দিকে কিশোরগঞ্জ-ঢাকা মহাসড়কের পাকুন্দিয়া উপজেলার মরুড়া এলাকায় যাত্রীবাহী একটি বাসে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পাকুন্দিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সারোয়ার জাহান জানান, সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে দুই রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়। মরুড়া এলাকায় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা বাসে আগুন দেয়। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

মাদারীপুর : মাদারীপুরের রাজৈরে মহান বিজয় দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে। গতকাল সকালে উপজেলা চত্বরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণের সময় এ ঘটনা ঘটে। পরে সব দলীয় কর্মসূচি বর্জন করে উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের নেতা-কর্মীরা। এ সময় উপজেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তোলা হয়। দলীয় একাধিক সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকালে পুষ্পস্তবক অর্পণের জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগ ও পৌর আওয়ামী লীগের নাম ঘোষণা করে উপজেলা প্রশাসন। এ সময় সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান এমপি গ্রুপের এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা গ্রুপ কমিটি একই সময় শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গেলে নেতা-কর্মীদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা ও ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গ্রুপের নেতা-কর্মীরা দলীয় সব কর্মসূচি বর্জনের ঘোষণা দিয়ে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করে চলে যায়। এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক (সভাপতি সাহাবুদ্দিন মোল্লা গ্রুপ) জমির উদ্দিন খান বলেন, প্রশাসনের বিতর্কিত ভূমিকার কারণে পুষ্পস্তবক অর্পণে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। পাল্টা গ্রুপের নেতা-কর্মীরা কৌশলে বেরিকেড সৃষ্টি করে পুষ্পস্তবক অর্পণে বিঘ্ন ঘটিয়েছে। এ নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ ৫০ বছরে এমন ঘটনা ঘটেনি। ফলে গোলমাল এড়াতে আমরা অনুষ্ঠান বর্জন করে চলে এসেছি। অন্যদিকে পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি (শাজাহান খান গ্রুপ) শেখ সাগর আহমেদ উজির বলেন, আমরা শহীদ মিনারের সামনে আগে উঠেছি এবং শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় ওই কমিটির সভাপতি গোপা শারমিন আমাদের সামনে ফুল নিয়ে এসে দাঁড়িয়ে বাধা সৃষ্টি করেছে। এ নিয়ে কিছুটা গণ্ডগোল হয়েছে। এ ছাড়া আমাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, মিথ্যা ও বানোয়াট।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছে শহীদ মিনারে বিজয় দিবসের ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। জানা গেছে, গতকাল বিজয় দিবসে কালিকচ্ছ ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আলী মিয়া ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রোকেয়া বেগমের ছেলে আবু শাহাদাত রাসেল ও তার ছোট ভাই শিমুলের কথাকাটাকাটি হয়। এ সময় পরাজিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর ছেলে রাসেল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলী মিয়াকে তার মায়ের পরাজয়ের জন্য রাজাকার বলে গালাগাল করে। একপর্যায়ে আলী মিয়াকে পরাজিত প্রার্থীর দেবর উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু আহমেদ মৃধা গায়ে ধাক্কা দেন। উভয় পক্ষই তখন তুমুল বাগ্বিতণ্ডায় লিপ্ত হয়।

বাগেরহাট : বাগেরহাটে বিজয় দিবসে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানাতে এসে হামলার শিকার হয়েছেন জেলা বিএনপির ২০ জন নেতা-কর্মী। গতকাল সকালে বাগেরহাট শহরের দশানী মোড়ে মুক্তিযুদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিতে গেলে আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা-কর্মী হামলা করে।  এতে আহত হয়েছেন বাগেরহাট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক প্রকৌশলী এ টি এম আকরাম হোসেন তালিম, বিএনপি নেতা সৈয়দ নাসির আহমেদ মালেক, ডা. আবদুর রহমান, এসকেন্দার হোসেনে, শহীদুল ইসলাম খোকন, আসাদুজ্জামান, বাকী বিল্লাহ, দুলাল ফরাজী, মুস্তাফিজসহ ২০ জন নেতা-কর্মী। তবে বিএনপির এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধ অ্যাডভোকেট ভুইয়া হেমায়েত উদ্দিন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর