শনিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
১৪ দল

মেরুদণ্ড শক্ত কমিশন চাই

রফিকুল ইসলাম রনি

নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের আগে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এবারও সংলাপে বসছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। আগামী সোমবার এ বৈঠক শুরু হবে। প্রথম দিন সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি অংশ নেবে। এরপর বুধবার অংশ নেবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ। পর্যায়ক্রমে সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। আগের দুটি কমিশনের মতো এবারও সংলাপের পর একটি সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি গঠন করা হবে। স্বাধীনতার পর ৫০ বছরেও নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের কাজ বাস্তবায়ন হয়নি। পরবর্তীতে যেন আইনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি কমিশন গঠন করতে পারেন সে দাবি তুলবেন খোদ আওয়ামী লীগের শরিকরা। শরিক দলের নেতারা বলছেন, নির্বাচন কমিশন যেন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে এমন কমিশন চাই। সরকারের আজ্ঞাবহ নয়, শক্তিশালী কমিশন চাই।

জানা গেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলের মধ্যে আটটি দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত। ক্ষমতাসীন জোটের শরিকের মধ্যে প্রথম আমন্ত্রণ পেয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ। বুধবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নিতে যাবেন দলটির নেতারা। অন্য দলগুলো সংলাপের জন্য এখনো আমন্ত্রণ না পেলেও ডাক পেলে সাড়া দেবে তারা। এজন্য দলের ভিতরে ভিতরে প্রস্তুতি চলছে। কী কী তুলে ধরা হবে তা নিয়েও পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হচ্ছে।

সংলাপে অংশগ্রহণের জন্য এখনো চিঠি পায়নি আওয়ামী লীগের শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টি। চিঠি পাওয়ার পর প্রস্তাবগুলো নিয়ে দলের ভিতরে পর্যালোচনা করা হবে। এজন্য কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক ডাকা হতে পারে। সবার মতামতের ভিত্তিতেই সুপারিশ করবে ওয়ার্কার্স পার্টি।

এ প্রসঙ্গে দলটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন চাই। যাদের মেরুদণ্ড সোজা আছে, আইন ও বিধি প্রয়োগ করার মতো সৎসাহস থাকবে তাদের ইসিতে দেখতে চাই। এখনকার যে কমিশন আছে তারা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না। বৃহস্পতিবার নোয়াখালী সদর উপজেলার একটি ইউনিয়নে এক প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণায় দুই শিশু মারা গেল, অথচ নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। তারা বলেছেন “কেউ অভিযোগ করেনি”! এমন আজ্ঞাবহ কমিশন চাই না।’ তিনি বলেন, ‘ভারতের নির্বাচন কমিশন অনেক শক্তিশালী। তারা এমপি-মন্ত্রীদের পাত্তা দেয় না। যথাযথ আইন প্রয়োগ করে। স্বাধীনভাবে যেন কাজ করে এমন কমিশনই চাইব।’ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সঙ্গে সংলাপ ২২ ডিসেম্বর। ইতিমধ্যে আমন্ত্রণপত্র দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে কী কী বিষয় তুলে ধরা হবে তা নিয়ে দলটির শীর্ষ নেতারা বৈঠকে বসবেন। এ ধরনের প্রস্তুতি চলছে। এ প্রসঙ্গে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের ২২ ডিসেম্বর ডাকা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ নিয়ে আমরা বেশ কিছু বিষয়কে গুরুত্ব দেব যাতে একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করা যায়। আমরা দক্ষ ও ব্যক্তিত্ববান ব্যক্তিরা যেন ইসিতে আসেন সেই সুপারিশ করব। এ ছাড়া সংবিধানের আলোকে যেন আইন করা যায় সে বিষয়টিও তুলে ধরব। ইসি গঠন প্রক্রিয়া একটি সঠিক সমাধানে আসা প্রয়োজন।’

সংবিধানে একটি আইনের মাধ্যমে ইসি গঠনের নির্দেশনা আছে। কিন্তু গত ৫০ বছরেও কোনো সরকার এ আইন করেনি। আইন না হওয়ায় নির্বাচন কমিশনার হওয়ার সুনির্দিষ্ট কোনো মানদণ্ড নেই। দেশের রাষ্ট্রপতি কমিশনারদের নিয়োগ দেন। ইসি গঠনে আইন না থাকায় সরকার নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী সার্চ কমিটি ও কমিশন গঠনের সুযোগ পায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট অনেকে।

শরিক জোটের তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের কাজ স্বাধীনভাবে নির্বাচন পরিচালনা। যেসব এলাকায় নির্বাচন হয় সেখানকার আইনশৃঙ্খলাসহ সবকিছু নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকে। তারা চাইলে কাউকে বদলি ও পছন্দমতো কাউকে নিয়েও আসতে পারে। আর জনগণের ভোট জনগণকে প্রয়োগ করতে দেওয়া নাগরিক অধিকার। সেখানে ইসি সে ব্যবস্থাটা কঠোরভাবে দেখবে, সে ব্যবস্থাই চাই।’

দীর্ঘ সময়ে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আইন না করলেও ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১২ সালে ইসি গঠনে একটি নতুন পদ্ধতি চালু করেছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মরহুম জিল্লুর রহমান। তিনি সব কটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে সংলাপে ডেকেছিলেন। পরে একটি সার্চ কমিটি গঠন করে তাদের প্রস্তাবিত নাম থেকে ইসি গঠন করেছিলেন রাষ্ট্রপতি। জিল্লুর রহমানের পথ অনুসরণ করে ২০১৭ সালে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গঠন করেন বর্তমান কে এম নূরুল হুদা কমিশন। আগামীতে যেন আইন করা হয় তার ওপর জোর দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শরিকরা।

এ প্রসঙ্গে ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আইন করার কথা সংবিধানে বলা আছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, স্বাধীনতার ৫০ বছরেও তা করা যায়নি। অতীতেও যেনতেনভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হতো। গত দুবার সার্চ কমিটির মাধ্যমে কমিশন গঠন করা হয়েছে। আশা করি আগামীতে নির্বাচন কমিশন গঠন আইনের মাধ্যমেই হবে। এবার আমাদের প্রত্যাশা থাকবে শক্তিশালী কমিশন যা কারও আজ্ঞাবহ হবে না।’

সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ‘আমরা এখনো আমন্ত্রণ পাইনি। তবে আমরা সংলাপে যাব। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে আমরা নির্বাচন কমিশন আইনের কথা বলব, দাবি তুলব। এ আইন না হলে নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না। আইন না হলে তারা প্রশাসনের অধীনেই থাকে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর