শনিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
ঢাকা ত্যাগ করলেন রামনাথ কোবিন্দ

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশকেই সমর্থন দিয়ে যাবে ভারত

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশকেই সমর্থন দিয়ে যাবে ভারত

ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে গতকাল শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদায় জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেন -পিআইডি

বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীর উৎসবে অংশ নিতে তিন দিনের ঢাকা সফর শেষে গতকাল দুপুরে নয়াদিল্লি ফিরে গেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। বিদায় নেওয়ার আগে সকালে ঢাকার রমনা কালীমন্দিরে যান রামনাথ কোবিন্দ। সেখানে মন্দিরের নতুন ভবন ও সম্প্রসারিত অংশের উদ্বোধন করেন এবং পূজা দেন দেবী প্রতিমার সামনে। পরে সোনারগাঁও হোটেলে প্রবাসী ভারতীয়দের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি কোবিন্দ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে’- এমন একটি বাংলাদেশকেই ভারত সমর্থন দিয়ে যাবে। রাষ্ট্রপতি কোবিন্দ গতকাল সকালে স্ত্রী সবিতা কোবিন্দ ও মেয়ে স্বাতী কোবিন্দকে সঙ্গে নিয়ে রমনা কালীমন্দির প্রাঙ্গণে পৌঁছান। সেখানে তাদের স্বাগত জানান ধর্মপ্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান। মন্দিরে ঢোকার সময় শাঁখ বাজিয়ে সনাতনী রীতিতে অভিবাদন জানানো হয় ভারতের রাষ্ট্রপ্রতিকে। মন্দিরের নতুন ভবন ও সম্প্রসারিত অংশের উদ্বোধন করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। সংস্কার হওয়া অংশের ফলক উন্মোচন করেন এবং পরে স্ত্রী ও মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে পূজা দেন দেবী প্রতিমার সামনে। প্রার্থনা শেষে মন্দির প্রাঙ্গণে উপস্থিত মন্দির কমিটির সদস্য এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন কোবিন্দ। মন্দির থেকে ফিরে সোনারগাঁও হোটেলে প্রবাসী ভারতীয়দের এবং ঢাকায় ভারতীয় বন্ধুদের জন্য আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন রাষ্ট্রপতি কোবিন্দ। সেখানে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমাদের বন্ধুদের আমি আবারও আশ্বস্ত করছি, ভারত আপনাদের অসাধারণ আন্তরিকতা এবং বন্ধুত্বকে মূল্যায়ন করে। আমরা ঘনিষ্ঠভাবে আপনাদের সঙ্গে যুক্ত থাকতে চাই; উন্নয়নের মধ্য দিয়ে যৌথ সমৃদ্ধি অর্জন এবং আমাদের জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণ করতে চাই। কোবিন্দ বলেন, বাংলাদেশের যে মূল চেতনা, একটি প্রগতিশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক, গণতান্ত্রিক ও সম্প্রীতির সমাজ গড়ে তোলা, সেই মূল্যবোধকে এগিয়ে নেওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান। আমি মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করেছি, ভারত এমন একটি বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়ে যাবে, যে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে। ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের ৫০ বছর পূর্তির এই বছরে ঢাকায় আসতে পেরে নিজের আনন্দের কথা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রকাশ করেন ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের উষ্ণ ভালোবাসা তার হৃদয় ছুঁয়েছে। গত বছর কভিড-১৯ মহামারী শুরুর পর এটাই আমার প্রথম বিদেশ সফর। আর বাংলাদেশে আমার প্রথম সফর হলো এমন এক বছর, যখন আমরা যৌথভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার এবং আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি।

রাষ্ট্রপতি কোবিন্দ বলেন, ভারতীয়দের হৃদয়ে বাংলাদেশের জন্য ‘একটি বিশেষ স্থান’ রয়েছে। দুই দেশের মানুষে মানুষে রয়েছে বহু পুরনো আত্মীয়তা, রয়েছে ভাষা আর সংস্কৃতির প্রাচীন বন্ধন। মুক্তিযুদ্ধের পর, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বড় ধরনের আর্থ-সামাজিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে গেছে। ভারতও এ সময় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। আমাদের দুই দেশের জনগণের মধ্যে যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক যোগসূত্র তৈরি হয়েছে, তাও প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের এই যৌথ গল্পে ভূমিকা রেখেছে।

রামনাথ কোবিন্দ বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিপথ যে পরস্পর সংযুক্ত, সম্পদ ও অভিজ্ঞতার বিনিময়ই যে টেকসই উন্নয়নের মূলমন্ত্র, দুই দেশের নেতৃত্বই তা জানে। আমাদের এই যৌথ প্রবৃদ্ধিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব করতে উভয়পক্ষই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও জোরদার করার বিরাট সম্ভাবনা দেখছি আমি। তিনি বলেন, এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের আকাক্সক্ষা পূরণের জন্য আঞ্চলিক যোগাযোগ ও সমন্বয়ের গুরুত্বের বিষয়ে তার দেশ সচেতন। এই চেতনার আলোকে, একটি শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ হয়ে ওঠার যাত্রায় বাংলাদেশকে সহযোগিতা দিয়ে যেতে, বৃহত্তর সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় অংশীদার হতে ভারত অঙ্গীকারাবদ্ধ। ভারতের রাষ্ট্রপতি বলেন, আমি দুই দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে, বিশেষ করে বাংলাদেশ এবং আমাদের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের মধ্যে আমাদের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক যোগাযোগকে নতুন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগটি কাজে লাগাতে অনুরোধ জানাব।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে গতকাল বেলা পৌনে ১টায় এয়ার ইন্ডিয়া ওয়ান ফ্লাইটে ঢাকা ত্যাগ করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। বিদায়বেলায় ভারতের রাষ্ট্রপতিকে স্ট্যাটিক গার্ডে সম্মান জানানো হয়।

 

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গত বুধবার ঢাকায় পৌঁছান রাষ্ট্রপতি কোবিন্দ। বিমানবন্দর থেকেই হেলিকপ্টার করে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে চলে যান ভারতের রাষ্ট্রপতি; সেখানে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে গিয়ে বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান। বুধবার বিকালে সোনারগাঁও হোটেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে রাষ্ট্রপতি কোবিন্দের বৈঠক হয়। পরে তিনি বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং নৈশভোজে অংশ নেন। বৃহস্পতিবার বিজয় দিবসের সকালে জাতীয় প্যারেড ময়দানে বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ উপভোগ করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি। বিকালে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দেন। বাংলাদেশে এটাই ছিল রাষ্ট্রপতি কোবিন্দের প্রথম সফর।

সর্বশেষ খবর