শনিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

মুদ্রা পাচার রোধে বাংলাদেশকে সক্রিয় হতে হবে

জিন্নাতুন নূর

মুদ্রা পাচার রোধে বাংলাদেশকে সক্রিয় হতে হবে

মে. জে. (অব.) আবদুর রশীদ

গ্লোবাল ফাইন্যানশিয়াল ইন্টিগ্রিটি প্রতিবেদনে কত টাকা পাচার হয়েছে তা যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বলছে কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের ইন্টিগ্রিটি প্রতিষ্ঠান কেন এটা বলছে না। ইনভয়েস এবং আন্ডার ইনভয়েস এটি আজকের সমস্যা নয়। অনেকদিন ধরেই আমরা দেখছি যে ব্যবসায়ীরা এই দুই পদ্ধতিতে অর্থ পাচার করছেন। পৃথিবীতে কিছু কিছু জিনিসের মূল্য অনুমান করাও যায় না। যেমন- যদি যুদ্ধাস্ত্র কিনতে যাই তাহলে ওরা যে মূল্য বসিয়ে দেবে তাই নির্দিষ্ট ধরতে হবে। এ ধরনের কিছু জটিলতা আছে। সুতরাং এখন বাংলাদেশের সক্রিয় হতে হবে যাতে আগামীতে এ ধরনের ব্যবস্থাকে অপব্যবহার করে ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ থেকে মুদ্রা পাচার করতে না পারে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশীদ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব কথা বলেন।

এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ‘কান্ট্রি রিপোর্টস অন টেররিজম ২০২০’ প্রকাশিত হয়েছে। এটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের রুটিন রিপোর্ট। প্রতিবছরই তারা এই রিপোর্ট প্রকাশ করে। এবার বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমরা যে বিশ্লেষণ দেখেছি তা আগেই উপলদ্ধি করতে পেরেছিলাম। আর তা হচ্ছে বাংলাদেশে সন্ত্রাসী হামলা নেই বললেই চলে। বাংলাদেশের জনগণ হিসেবে আমরা অনুভব করছি যে জঙ্গি সংক্রান্ত হামলা থেকে এখন আমরা অনেক নিরাপদ। এখন যারা এই নিরাপদ বাংলাদেশ তৈরি করেছে এবং জঙ্গিদের প্রশমন করেছে তাদের মধ্যে র‌্যাব একটি সংগঠন। আর এই সংগঠনটি জঙ্গিবাদ নিরসনে খুবই সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। সেই সংগঠনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা এসেছে তার আগের রিপোর্টে। জঙ্গিবাদ নিরসনে অবশ্যই বাংলাদেশের ভূমিকা প্রশংসনীয়। আর র‌্যাবের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়েছিল যে মানবাধিকারের লঙ্ঘন হয়েছে। মানবাধিকার একটি বড় ক্যানভাস। যেখানে চাইলে যে কোনো মানুষকে আটকানো যাবে। সেই আটকানোর ব্যবস্থাতে যদি আমি নিরপেক্ষভাবে বাংলাদেশকেই চিন্তা করি তাহলে এখানে যাদের আটকানো হয়েছে তা বিশেষ সময় বা ব্যপ্তির ভিতরে ফেলা হয়েছে। আমি মনে করি সময়োচিতভাবে এই নিষেধাজ্ঞাকে কার্যকর করা হয়নি। একটি বিশেষ সময়কে ধরে এদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। মানবাধিকারের বিষয়টিকে আমরাও খুব গুরত্বের সঙ্গে বিবেচনা করি এবং বিশ্বে মানবাধিকার নিশ্চিত করার যে আন্দোলন তার সঙ্গে বাংলাদেশ সম্পৃক্ত। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে র‌্যাব এবং পুলিশ মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য কোনো রকম পৃষ্ঠপোষকতা করেছে কি না এটি হচ্ছে আমার দেখার জায়গা। সেখানে যখন বাংলাদেশের সংবিধান খুলেছি দেখেছি যে মানবাধিকারের যে বিশ্বব্যাপী সনদ তার নাম হচ্ছে ইউনিভার্সেল ডিক্লারেশন অব হিউম্যান রাইটস। আর ইউনিভার্সেল ডিক্লারেশন অব হিউম্যান রাইটসের যে ৩০টি ধারায় মানবাধিকারকে সংজ্ঞায়িত করা আছে এর সবই বাংলাদেশের সংবিধানে সম্পৃক্ত করা আছে। এ জন্য আমি বলতে পারি না যে বাংলাদেশ মানবাধিকার লঙ্ঘনকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে। আর পুলিশ বা র‌্যাবের যারা প্রধান তারা গ্রাউন্ডে কাজ করেন না। তারা নীতিগত ইস্যুতে কাজ করেন। যদি তারা গ্রাউন্ডে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য বা ক্রস ফায়ারের জন্য নির্দেশ দিয়ে থাকেন তবে আমি সেই নির্দেশের উপস্থিতি প্রতিবেদনে দেখছি না। এখন অভিযোগ করা হয়েছে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। কিন্তু কোন জায়গায় হয়েছে তা জানার জন্য নিজেকে জানা উচিত। যদি আপনি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে মারণাস্ত্র দিয়ে থাকেন তাহলে সেখানে ১০০ ভাগ নিশ্চিত করা সম্ভব না যে কোনো ধরনের অঘটন ঘটবে না। 

আবদুর রশীদ আরও বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বের সম্পর্ককে আমি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখি। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের গভীরতা আছে। যদিও এর মধ্যে উত্থান-পতন আছে। আগামীতে বাংলাদেশের চলার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের গভীর সম্পর্ককে আমি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করি। কিন্তু সেই সম্পর্ক যদি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে প্রভাবিত হয় তা অবশ্যই সমর্থনযোগ্য নয়। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে যারা জঙ্গিবাদ নিরসন করেছে তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এটি একটি কন্ট্রাডিকটরি।

সর্বশেষ খবর