রবিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

লণ্ডভণ্ড ফ্লাইট শিডিউল

নিজস্ব প্রতিবেদক

সংস্কার কাজের জন্য রাত ১২টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ আছে। এর ফলে রাতের ২০ ফ্লাইটের চাপ পড়েছে দিনে। ১৬ ঘণ্টায় যাতায়াতকারী সব ফ্লাইটের শিডিউল দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এতে লণ্ডভণ্ড হচ্ছে ফ্লাইট শিডিউল, বেসামাল বিমানবন্দরের যাত্রীসেবা।

এ ব্যাপারে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ এইচ এম তৌহিদ উল আহসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রাতে কাজের জন্য ফ্লাইট বন্ধ থাকায় দিনের বেলা ফ্লাইটের চাপ বেশি। ওই আট ঘণ্টার ফ্লাইটগুলো এয়ারলাইনসের মাধ্যমে দিনে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথম দিকে একটু সমস্যা হচ্ছিল, আমরা আস্তে আস্তে সমাধানের চেষ্টা করছি। শিডিউল কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। দুবাইগামী যাত্রীদের কভিড সনদ দিতে পিসিআর ল্যাব অনেক সময় দেরি করছে। তাই শেষ মুহূর্তে যাত্রীদের ইমিগ্রেশনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করে ফ্লাইট উড্ডয়ন করতে অনেক সময় দেরি হচ্ছে। এক জায়গায় বিলম্ব হলে অন্য জায়গাতেও সমস্যা হয়। পিসিআর ল্যাবগুলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায়। আমরা তাদের বলেছি ল্যাবগুলো নিয়ে আলোচনায় বসতে। তারা যেন ফ্লাইটের তিন ঘণ্টা আগে যাত্রীদের করোনা রিপোর্ট দিতে পারে। কমপক্ষে তিন ঘণ্টা আগে রিপোর্ট দিলে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে সঠিক সময়ে ফ্লাইট উড্ডয়ন করতে পারবে। পার্কিংয়ের জায়গা না থাকায় অনেক সময় অন্য এয়ারক্রাফটকে জায়গা দিতে বিলম্ব হয় বলে জানান তিনি।

বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, রাতে যে সময়ে রানওয়ে বন্ধ থাকছে, ওই সময়ে সৌদি এয়ারলাইনস, এমিরেটস, টার্কিশ এয়ারলাইনস, বিমান বাংলাদেশ, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ও কুয়েত এয়ারের ২০টি ফ্লাইট ওঠানামা করত। এসব ফ্লাইটের নতুন শিডিউল করা হয়েছে এখন দিনের বেলায়। এর মধ্যে বেশি ফ্লাইট পড়েছে সন্ধ্যায়। এর ফলে বিকালের পর থেকে বিমানবন্দরে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। হ-য-ব-র-ল অবস্থা তৈরি হয় ফ্লাইট শিডিউলের। একসঙ্গে শত শত যাত্রীর অতিরিক্ত চাপ পড়ায় হিমশিম খেতে হয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে। বিদেশগামীদের বোডিং কার্ড ইস্যু, ইমিগ্রেশন, লাগেজ হ্যান্ডলিং, পিসিআর টেস্ট, ট্রলি সার্ভিস সব ক্ষেত্রে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ফ্লাইটের সময় শেষ হয়ে গেলেও অনেক যাত্রীকে দেখা যায় ইমিগ্রেশনের দীর্ঘ লাইনে। বাধ্য হয়ে এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষকে মাইকিং করে সেসব যাত্রীকে ডেকে ইমিগ্রেশন করাতে হয়। একই অবস্থায় পড়তে হয় দেশে ফেরা ফ্লাইটের যাত্রীদেরও। পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় একসঙ্গে ৩টি ফ্লাইট নামলে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাচ্ছে সব ধরনের যাত্রীসেবা। দূরদেশ থেকে এসে বিমানবন্দরে নামার পর দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে যাত্রীদের। ইমিগ্রেশন, হেলথ ডিকলারেশন কার্ড জমা দেওয়ায় জন্য ৪-৬ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে যাত্রীদের। গত বৃহস্পতিবার টার্কিশ এয়ারলাইনসের ৭১২ ফ্লাইটে তুরস্ক থেকে দেশে এসেছেন গণমাধ্যমকর্মী শাহেদ শফিক। তিনি বলেন, দুপুর ২টায় শাহজালাল বিমানবন্দরে ফ্লাইট ল্যান্ড করার কথা ছিল। বেলা ১টা ৫৫ এর মধ্যে ফ্লাইট ঢাকার আকাশে চলে আসে। কিন্তু ফ্লাইট পার্কিংয়ের জায়গা না পাওয়ায় ল্যান্ড করতে পারেনি। প্রায় ৪৫ মিনিট ঢাকার আকাশে উড়তে থাকে এয়ারক্রাফট, এরপর ল্যান্ড করে। ল্যান্ড করার পর ইমিগ্রেশনে, লাগেজ বেল্টে ভোগান্তির শেষ নেই। হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এসে ক্লান্ত যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকছেন বিমানবন্দরে। ইমিগ্রেশনের জন্য একবার লাইন দিতে হয়, এরপর হেলথ ডিকলারেশন কার্ড জমা দেওয়ার জন্য আরেকবার লাইনে দাঁড়াতে হয়।’  গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ এইচ এম তৌহিদ উল আহসান বলেন, ‘আমরা কোনো ফ্লাইট বন্ধ করিনি। কারণ ফ্লাইট বন্ধ করলে বহির্বিশ্বের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ বিঘ্ন হয়। এতে আমাদের প্রবাসী কর্মীরা যাওয়া-আসা করতে পারবে না। তাই ১৬ ঘণ্টায় আমরা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার চেষ্টা করছি। অধিক ফ্লাইটের অধিক যাত্রী ব্যবস্থাপনা কতে হচ্ছে, ফ্লাইটের পার্কিং এরিয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে, ইমিগ্রেশন কাউন্টার বাড়ানো হয়েছে, কাস্টমসে জনবল বাড়ানো হয়েছে, ট্রলি ম্যানের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। যাতে দ্রুত ট্রলি পরিষ্কার করে আবার যাত্রীসেবা দেওয়া যায়। হেলথের কাউন্টারে জনবল বাড়ানো হয়েছে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর