শিরোনাম
রবিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

নোংরা আবর্জনা অপরিচ্ছন্ন টয়লেট

মাহবুব মমতাজী

পুরো বিমানবন্দরেই অপরিচ্ছন্নতার ছাপ। পার্কিং এরিয়ার ভিতর-বাইরের চিত্র একই। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা। ডাস্টবিনগুলো নিজেই যেন রোগাক্রান্ত। টয়লেটেও বেজায় দুর্গন্ধ। পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের নেই কোনো তৎপরতা। যেন কারও কোনো দায়বদ্ধতা নেই। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এমন বেহাল দশা দেখা গেছে। পার্কিং এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে যত্রতত্র প্লাস্টিকের বোতল, পলিথিন, চিপসের প্যাকেট, সিগারেটের পোড়া অংশ, জুসের প্যাকেট, ফলের খোসা। অথচ বহুতল পার্কিং এরিয়ায় গাড়ি প্রবেশ করলেই প্রতি ঘণ্টায় ১০০ টাকা পার্কিং চার্জ আদায় করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। তবু নোংরা আবর্জনা আর অপরিচ্ছন্ন টয়লেটের অবস্থা নজরে পড়ে না সংস্থাটির।

দেখে মনে হবে মাসের পর মাস এসব আবর্জনা জমে পুরো পার্কিং ভবনটিই রূপ নিয়েছে আঁস্তাকুড়ে। দীর্ঘদিন ধরে না দেওয়া হয় ঝাড়ু, না হয় ধোয়া-মোছার কাজ। আবার অভিযোগ আছে, সেখান থেকে গাড়ির যন্ত্রাংশ চুরির ঘটনাও নতুন কিছু নয়।

গতকাল শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বহুতল পার্কিংয়ের নিচতলায় গাড়ি রাখেন কুষ্টিয়ার কামাল হোসেন। তিনি জানান, তার পরিচিত একজন কাতার থেকে আসবেন। তাকে নিতেই মূলত তিনি বিমানবন্দরে এসেছেন। পার্কিং এরিয়ার নিচতলায় গাড়ি পার্ক করে গাড়িতেই বিশ্রাম নেওয়ার ইচ্ছা ছিল তার। কিন্তু সেখানে মশার উৎপাত আর টয়লেটের দুর্গন্ধে টেকা যাচ্ছিল না। গাড়ি তালা দিয়ে বাইরে চলে এসেছেন। একই অভিযোগ ফ্রান্স থেকে আসা জিকো নামে এক যাত্রীর। তিনি বলেন, দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এত ভয়ানক নোংরা পরিস্থিতি, ভাবাই যায় না! সেখানে দু-চার মাসে ঝাড়ু-মোছা করা হয়েছে বলে মনে হয় না।

দুবাইয়ে এক আত্মীয়কে পাঠাবেন, এ জন্য পার্কিং এরিয়ার দোতলায় করোনার পিসিআর টেস্টের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছিলেন ময়মনসিংহের সঞ্জীব নামে এক ব্যক্তি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, মালয়েশিয়া, ভারত, সিঙ্গাপুর, দুবাই, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বহু দেশ সফর করা লোকদের সঙ্গে কথা বলেছি। বহু দেশের বিমানবন্দর তারা দেখেছেন। ওই সব দেশের বিমানবন্দর ঝকঝকে পরিষ্কার। একটি কাগজের টুকরা, এমনকি বালুর কণাও খুঁজে পাওয়া যায় না। আর আমাদের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পার্কিং এলাকা ডাস্টবিন থেকেও ভয়াবহ খারাপ অবস্থা। টোল আদায়ের দায়িত্বে থাকা হেলাল নামে একজনের ভাষ্য, ‘আমাদের কাজ টোল আদায় করা, ঝাড়ু দেওয়া বা ধোয়া-মোছার কাজ নয়। আমরা প্রতিটি গাড়ির ইন টাইম ও আউট টাইম হিসাব করে টোল নিই।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিমানবন্দরের পার্কিং এলাকার নিচতলা ও দোতলা মিলিয়ে ১ হাজার ৬০০ গাড়ি রাখা যায়। প্রায় প্রতিদিনই সেখানে কানায় কানায় পূর্ণ থাকে গাড়ি। সেখান থেকে লাখ লাখ টাকা আদায় করে বেবিচক।

বিমানবন্দর ঘুরে দেখা গেছে, বিদেশ থেকে আসা যাত্রীর জন্য অপেক্ষায় থাকা স্বজনরা খাবার খেয়ে টার্মিনালের সামনে যেখানে-সেখানে আবর্জনা ফেলে রাখছেন। এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দেওয়া সাইনবোর্ড দেখা গেলেও কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। টার্মিনালের সামনে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য গোলাকৃতি করে ব্যারিকেড দিয়ে বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগানো রয়েছে। এসব স্থানেই ময়লার স্তূপ জমে আছে। ধুলাবালি ছাড়াও পলিথিন, খাওয়ার পানি, বিস্কুট, চিপসের প্যাকেটসহ নানা আবর্জনা জমে রয়েছে। এ ছাড়া বিমানবন্দরের তিনতলাবিশিষ্ট কার পার্কিংয়ের ভবনের সামনের রাস্তার মুখে খানাখন্দও আছে। পার্কিংয়ের দ্বিতীয় তলায় অনেক জায়গায় ঢালাই উঠে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

সর্বশেষ খবর