রবিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
বর্ণাঢ্য বিজয় শোভাযাত্রা

ষড়যন্ত্র মোকাবিলার শপথ আওয়ামী লীগের

নিজস্ব প্রতিবেদক

ষড়যন্ত্র মোকাবিলার শপথ আওয়ামী লীগের

বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে গতকাল রাজধানীতে আওয়ামী লীগের শোভাযাত্রা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র এবং উন্নয়নবিরোধী অপশক্তিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার শপথ করা হয়েছে আওয়ামী লীগের ‘বিজয় শোভাযাত্রায়’। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে গতকাল রাজধানীতে এক বর্ণাঢ্য ও বিশাল বিজয় শোভাযাত্রায় এ প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।

কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে দলীয় নেতারা বলেছেন, ষড়যন্ত্র থেমে নেই। এখনো ষড়যন্ত্র চলছে। সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টির মাধ্যমে বাঙালির ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। সব ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই গড়ে উঠবে। স্বপ্ন পূরণের যাত্রায় সব ষড়যন্ত্র প্রতিহতের প্রত্যয়ে আমাদের শপথ।  বিকাল পৌনে ৪টার দিকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণ থেকে আওয়ামী লীগের শোভাযাত্রা শুরু হয়। এ শোভাযাত্রা উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু। করোনার কারণে প্রায় দুই বছর পর এই বিজয় শোভাযাত্রায় জনস্রোত নামিয়ে রাজপথে বড় ধরনের সাংগঠনিক শক্তির মহড়া দেখিয়েছে আওয়ামী লীগ। ৫০ বছর আগে যে স্থানটিতে পাক হানাদাররা আত্মসমর্পণ করেছিল, বিজয়ের ৫০ বছর পর সেই ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনের সামনে এক অন্যরকম বিজয়োৎসবে মেতে উঠেছিল দলীয় নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ। বিজয় শোভাযাত্রায় জনসমুদ্রে রূপ নেওয়ায় গতকাল ছুটির দিনেও রাজধানীতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

‘ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে ৩২ নম্বর ধানমন্ডি’- দীর্ঘ প্রায় তিন কিলোমিটার পথে আওয়ামী লীগের বর্ণাঢ্য বিজয় শোভাযাত্রায় নেমেছিল লাখো মানুষের ঢল। পুরো রাজধানীই যেন পরিণত হয়েছিল মিছিলের নগরীতে। মিছিলকারীদের মাথায় ছিল রক্তস্নাত লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা। বুকে দেশপ্রেম। গালে আঁকা মানচিত্র খচিত পতাকা। সবার চোখেমুখে ছিল বিজয়ের তৃপ্তি। এ যেন একাত্তরের পর আরও একটি বিজয়। চারদিকের স্লোগানের ধ্বনিতে প্রকম্পিত হচ্ছিল পুরো রাজধানী। দূর-দূরান্ত থেকে জয় বাংলা স্লোগান তুলে বাস-ট্রাকে চড়ে মিছিলে এসেছে বিজয়-আনন্দে উচ্ছল মানুষ। কোনো ট্রাকে আবার বানানো হয়েছে বিজয় মঞ্চ।

মিছিলে অনেকে সঙ্গে নিয়ে এসেছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক বিশাল নৌকা, হাতি-ঘোড়া, বাদ্য-বাজনার তালে নেচে-গেয়ে হাজারো মিছিলের স্রোত মিলেছিল ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সামনে। অনেকে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত অসংখ্য কাগজের কামান, ট্যাংক, যুদ্ধাস্ত্র হাতে নিয়েও শামিল হয়েছিল বিজয় শোভাযাত্রায়। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পাকিস্তানি হানাদার ও রাজাকারদের আত্মসমর্পণের ড্যামি দৃশ্যও ফুটিয়ে তোলা হয় শোভাযাত্রায়। রাজাকার-স্বাধীনতাবিরোধীমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ের এ বিজয় মিছিল শেষ হওয়ার কথা ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে। যখন সেখানে পৌঁছে মিছিলের অগ্রভাগ, তখনো শাহবাগ  থেকে বের হতে পারেনি মিছিলের অন্য প্রান্ত। বিজয় শোভাযাত্রায় স্থান পায় সরকারের উন্নয়ন পরিক্রমা। ভ্যানের ওপর ফ্লাইবোর্ডে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ সরকারের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ তুলে ধরা হয় বিজয় শোভাযাত্রায়।

এর আগে পাশাপাশি দুটি ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চ বানিয়ে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী  লীগের কেন্দ্রীয় ও মহানগরের নেতৃবৃন্দ। কর্মসূচির উদ্বোধনী বক্তব্যে আমির হোসেন আমু বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যে স্বাধীনতা অর্জন হয়েছিল, তাঁকে হত্যার মধ্য দিয়ে এই দেশের স্বাধীনতাকে শেষ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন পথ-পরিক্রমার মধ্য দিয়ে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেই স্বাধীনতা উদযাপন করতে পারছি।

দেশের বিরুদ্ধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের প্রবীণ এই নেতা বলেন, ষড়যন্ত্র থেমে নেই। এখনো ষড়যন্ত্র চলছে, এখনো সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টির মাধ্যমে বাঙালির ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এখনো গণতন্ত্রের নামে অগণতান্ত্রিক শক্তি গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করছে। এ সময় অগণতান্ত্রিক ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার শপথ নেন নেতা-কর্মীরা। 

বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, সব ষড়যন্ত্র, হত্যা-খুনের রাজনীতি অতিক্রম করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকার দুর্বার গতিতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ করবেই।

কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যার হাত ধরেই বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে দুর্বার গতিতে। উন্নয়নের এই ধারাকে অক্ষুণ্ন রেখে দেশকে আরও এগিয়ে নিতে সবাইকে শপথ নিতে হবে। পৃথিবীর কোনো শক্তিই ষড়যন্ত্র করে আরেকটি ১৫ আগস্ট আনতে পারবে না।

জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ৫০ বছর আগে সব ধরনের আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি জাতি বিজয় অর্জন করেছিল, তেমনি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সব জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে এই বাঙালি জাতি এগিয়ে যাবে।

আবদুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা বলেছিল ‘জয় বাংলা’ স্লোগান হবে না, কিন্তু আজ লাখ লাখ মানুষের কণ্ঠে জয় বাংলা স্লোগানে গোটা রাজধানী প্রকম্পিত হয়েছে।

সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহীর মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, বাংলাদেশ আজ সর্ব ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে দুর্বার গতিতে। এই উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে যারা নস্যাৎ করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে দেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে। জাতীয় ও কিছু পশ্চিমা অপশক্তি অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। সব ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, মহাবিজয়ের মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে সব অপশক্তিকে পরাজিত করেই এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। বিজয় শোভাযাত্রায় তীব্র জনস্রোতে লাল-সবুজের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও উন্নয়ন-অগ্রগতির বিরুদ্ধে বহু ষড়যন্ত্র হয়েছে। সব ষড়যন্ত্র ও প্রতিবন্ধকতাকে উপড়ে ফেলে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে দুরন্ত গতিতে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আজকের বিজয়ের এই শোভাযাত্রায় লাখো মানুষের জনস্রোত নেমেছে। এখন আমাদের শপথ হলো- জাতির পিতা যে স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন, তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক হিসেবে দেশকে গড়ে তোলা। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে, সব সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখে দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সোনার বাংলা গড়ব। মির্জা আজম বলেন, স্বাধীনতার পর দেশের যত অর্জন সব আওয়ামী লীগের হাত ধরে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ যখন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তখন নানা ষড়যন্ত্র চলছে। সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে এগিয়ে যাবে।

এতে আরও বক্তব্য রাখেন দলীয় নেতা আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হোসেন, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, আফজাল হোসেন, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, মৃণাল কান্তি দাস, উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, আবু আহমেদ মন্নাফি, শেখ বজলুর রহমান, হুমায়ুন কবির, হেদায়েতুল ইসলাম স্বপন, কাজী মোর্শেদ কামাল, মিরাজ উদ্দিন, গোলাম আশরাফ তালুকদার, নাজিম উদ্দিন, আজিজুল হক রানা। সভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন। এ সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

 

সর্বশেষ খবর