রবিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
সুপ্রিম কোর্ট দিবসে রাষ্ট্রপতি

রায়ের কপি পেতে যেন ঘুরতে না হয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

রায়ের কপি পেতে যেন ঘুরতে না হয়

বিচারকদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, বিচারকদের খেয়াল রাখতে হবে মামলার রায় হওয়ার পর রায়ের কপি  পাওয়ার জন্য বিচারপ্রার্থীদের যেন আদালতের বারান্দায় ঘোরাঘুরি করতে না হয়।

গতকাল বিকালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট দিবস-২০২১ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বঙ্গভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সুপ্রিম কোর্ট জাজেস স্পোর্টস কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। সুপ্রিম কোর্ট দিবস উদ্যাপনসংক্রান্ত জাজেস কমিটির সভাপতি বিচারপতি ওবায়দুল হাসান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের স্থাপনার ছবিসংবলিত স্মারকগ্রন্থ ‘আর্কিটেকচারাল ভিউ’র মোড়ক উন্মোচন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট মানুষের মৌলিক মানবাধিকার রক্ষা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং স্বল্পসময়ে বিচারপ্রার্থীদের ন্যায়বিচার প্রদানে কাজ করে যাচ্ছে। শান্তি ও সংকটে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের অভিভাবক ও রক্ষক হিসেবে মর্যাদাপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তিনি বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সোনার বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে পাস করে সংবিধানবিরোধী ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ। ভেবেছিল আর কখনো তাদের বিচার হবে না। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট ষড়যন্ত্রকারীদের সেই নীলনকশা বাস্তবায়ন হতে দেয়নি। প্রথমে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ সংবিধানবিরোধী ঘোষণা করে এবং শেষ পর্যন্ত জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার করে সুপ্রিম কোর্ট তার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করেছে। জাতি আজ সেই কলঙ্ক থেকে কিছুটা হলেও দায়মুক্ত। রাষ্ট্রপতি বিচার বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে তথ্যপ্রযুক্তির সব সুবিধা ব্যবহার করে মামলা ব্যবস্থাপনায় গতিশীলতা আনার নির্দেশ দিয়ে বলেন, দেশের সব আদালতের কার্যক্রম ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্নের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এতে বিচার কার্যক্রমে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। সুপ্রিম কোর্ট যেহেতু কোর্ট অব রেকর্ড সেহেতু এর সব নথি ডিজিটাল নথিতে পরিণত করার উদ্যোগ নিতে হবে এবং মামলা দায়ের থেকে রায় ঘোষণা পর্যন্ত সব কার্যক্রম ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করাও জরুরি বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বিচার কাজ একটা জটিল বিষয় উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, বিচারকদের আরও বেশি কাজ করার অনুরোধ করছি, কেননা মামলার পরিমাণ দিন দিন যে হারে বাড়ছে সেটাকে আয়ত্তের মধ্যে আনতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করাই সংবিধানের মূল লক্ষ্য। আমাদের দেশে এখন অনেক আইন রয়েছে, আধুনিক অনেক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। এর পরও আমাদের নারীরা ন্যায়বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাদের আইনের আশ্রয়লাভের ক্ষেত্রে যে বাধাগুলো রয়েছে তা দূর করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা এগিয়ে আসবেন বলে আশা করছি। একইভাবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিচারকের পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন বিচারক নিশ্চিতভাবেই বিচারকর্মের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে পুরস্কৃত হবেন। দেশের জনগণও তাদের একটি বিশেষ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করে। তিনি বলেন, বিচারকদেরও মনে রাখতে হবে একটি স্বাধীন বিচারব্যবস্থার অন্তর্নিহিত শক্তির উৎস হলো জনগণের আস্থা। এটা হলো বিচারকদের সততা, সক্ষমতা ও নিরপেক্ষতার প্রতি গণমানুষের অবিচল বিশ্বাস। সাধারণ মানুষের এ আস্থা অর্জনের জন্য বিচারকদের একদিকে উঁচু নৈতিক মূল্যবোধ ও চরিত্রের অধিকারী হতে হবে, অন্যদিকে সদাবিকাশমান ও পরিবর্তনশীল আইন, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা ও সামাজিক মূল্যবোধ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের চলার পথ মসৃণ ছিল না। বঙ্গবন্ধুর নৃশংস ও বর্বরোচিত হত্যার পর সে ঘটনার বিচারের পথ বন্ধে ইনডেমনিটি করা হয়েছিল। পিতা হত্যার বিচার দাবিতে শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে দেশে আসার পর সুপ্রিম কোর্টে বহুবার এসেছেন। তখন তাঁর ক্ষেত্রে বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কেঁদেছে। সেদিন সুপ্রিম কোর্টের উপলব্ধির প্রয়োজন ছিল যে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ও সংগ্রামে স্বাধীনতা পেয়েছি আমরা। সে কারণে বিচারক পদে অনেকে বসতে পেরেছেন। আইনমন্ত্রী বলেন, সব অপচেষ্টা পেছনে ফেলে আজ বিচার বিভাগ সুদৃঢ় অবস্থানে। এটি শেখ হাসিনার অবদান। শেখ হাসিনা বিচার বিভাগকে আপন করে নিয়েছেন। বিচার বিভাগের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। তাঁর শাসনামলে সুপ্রিম কোর্ট এনেক্স ভবন নির্মাণ, বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, আইন কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। বিচার বিভাগ পৃথক্করণের আইনগত ভিত্তিও শেখ হাসিনার শাসনামলে হয়েছে।

সর্বশেষ খবর