রবিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
সিলেটে বিএনপির সমাবেশ

দাবি না মানলে গণঅভ্যুত্থান

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই হতে হবে। নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। দাবি না মানলে একাত্তরের মতো দল-মত-ধর্ম-বর্র্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, সেই দিন আর বেশি দূরে নয়।’ সিলেট রেজিস্টারি মাঠে ‘সিলেট মুক্ত দিবস’ উপলক্ষে বিএনপির সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর সিলেট শহরসহ দেশের বৃহত্তর এই উত্তর-পূর্বাঞ্চল পাকিস্তানি শত্রুমুক্ত হয়। দিবসটি উদ্যাপন উপলক্ষে সিলেটে গতকাল নানা কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র ও বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন সমন্বয় কমিটির বিভাগীয় আহ্বায়ক আরিফুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবনের পরিচালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন দলের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। প্রধান বক্তা ছিলেন সিলেট মুক্ত দিবসের অন্যতম যোদ্ধা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম। এ ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, ড. এনামুল হক চৌধুরী, বিএনপি নেতা আবদুর রাজ্জাক, কলিম উদ্দিন মিলন, শাম্মী আক্তার, ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, হবিগঞ্জের সাবেক মেয়র জি কে গউছ, বিএনপি নেতা আবুল কাহের শামীম প্রমুখ বক্তৃতা করেন।

বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানের কোথাও জেনারেল ওসমানী, জিয়াউর রহমান কিংবা তাজউদ্দীনের নাম উচ্চারণ করা হয়নি। জিয়াউর রহমান সিলেট যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। এই বীরদের অবদান স্বীকার করে না আওয়ামী লীগ। বর্তমান সরকার ইতিহাস মুছে দিতে চায়। সম্পূর্ণভাবে একটি ভ্রান্ত ইতিহাস তুলে ধরা হচ্ছে। স্বাধীনতাযুদ্ধ কোনো একজন ব্যক্তি বা দল করেনি। স্বাধীনতাযুদ্ধ এ দেশের মানুষ করেছে। স্বাধীনতার স্বপ্ন ছিল গণতান্ত্রিক দেশ হবে। স্বাধীনভাবে বসবাস করব। কিন্তু ৫০ বছর পর বলতে হয়, আমাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি। সেই স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দিয়েছে বর্তমান সরকার।’

মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, ‘জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলে মুক্তিযুদ্ধ হতো না। এখন ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে। মাত্র ১৫ দিনের যুদ্ধের পর ভারতীয়দের হাতে পাকিস্তানি বাহিনী সারেন্ডার করেছে। সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হলো না কেন। এটা আমাদের জন্য খুবই দুঃখের স্মৃতি।’ একাত্তরের ১৭ ডিসেম্বর সিলেট মুক্ত হয় জানিয়ে মেজর হাফিজ বলেন, ‘তৎকালীন জেড ফোর্সের প্রধান মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে সিলেট মুক্ত হয়েছিল। জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে ভারতীয়সহ মুক্তিবাহিনীর কাছে সিলেটে পাকিস্তানি আর্মির ব্রিগেডিয়ার ইফতেখার রানা সারেন্ডার করেছিলেন।’

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সিলেট মুক্ত করার ক্ষেত্রে জিয়াউর রহমানের অবদান বেশি। তাঁর নেতৃত্বেই সিলেট বিজয় হয়েছিল। কিন্তু আজ ইতিহাস বিকৃত করায় আমাদের নতুন প্রজন্ম এ তথ্য জানে না।’

দুই পক্ষের চেয়ার ছোড়াছুড়ি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া : বিএনপির এ সমাবেশে অতিথিদের বক্তব্যের আগে দুই পক্ষের মধ্যে চেয়ার ছোড়াছুড়ি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঘটে। গতকাল বেলা পৌনে ৩টার দিকে বিভিন্ন নেতার পক্ষে স্লোগান দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাদের সমর্থকদের মধ্যে এ উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে শীর্ষস্থানীয় নেতাদের আধঘণ্টার প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি শান্ত হয় এবং বেলা ৩টা ১০ মিনিটে অতিথিরা পুনরায় বক্তব্য শুরু করেন।

সর্বশেষ খবর