মঙ্গলবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
বিবিসির অনুসন্ধান

আবারও গণহত্যা চালানো হচ্ছে মিয়ানমারে

প্রতিদিন ডেস্ক

মিয়ানমারে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনী হামলা চালায় নিয়মিত। এবার শুধু হামলা ও গণহত্যার অভিযোগ উঠেছে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে।

গতকাল প্রচারিত বিবিসির এক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত জুলাইয়ে কয়েকটি স্থানে গণহত্যা চালানো হয়। এতে কমপক্ষে ৪০ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও এ গণহত্যা চালানোর সময় যারা পালিয়ে বেঁচে যেতে সক্ষম হয়েছেন তাদের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে বিবিসি। গ্রামে গ্রামে তল্লাশি চালিয়েছে সেনারা। এরপর যাদের হত্যা করা হবে, তাদের গ্রামবাসীদের থেকে আলাদা করা হয় ও নির্যাতন চালানো হয়। এরপর তাদের হত্যা করা হয়।

এসব ঘটনার কিছু ভিডিও ফুটেজ ও ছবি প্রকাশিত হয়েছে। এতে দেখা গেছে, কীভাবে গ্রামবাসীকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে ও সমাধিস্থ করা হয়েছে। গত জুলাইয়ে সাগাইং জেলার কানি টাউনশিপে এসব হত্যাকান্ড চালানো হয়। এ এলাকাটি বর্তমান জান্তা সরকারবিরোধীদের ঘাঁটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সেখানে এমন চারটি হত্যাকান্ডের খবর জানা গেছে।

মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মিয়ানমার উইটনেস। তারা যেসব ভিডিও ফুটেজ ও ছবি সংগ্রহ করেছে, এর সঙ্গে প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য মিলিয়েছে বিবিসি। এ জন্য কানির ১১ জন প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান নিয়েছে গণমাধ্যমটি। বিবিসি বলছে, ইন নামের একটি গ্রামে সবচেয়ে বড় হত্যাকান্ডটি চালানো হয়। সেখানে কমপক্ষে ১৪ জনকে প্রথমে পেটানো হয়। এরপর তাদের লাশ জঙ্গলের ভিতর গর্তে ফেলে দেওয়া হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, হত্যা করার আগে তাদের প্রথমে দড়ি দিয়ে বেঁধে পেটানো হয়। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সেনাদের কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়েছি। কিন্তু তারা এতে কোনো সাড়া দেননি। ওই সময় সেনারা নারীদের উল্টো জিজ্ঞেস করেছে, যাদের ধরা হয়েছে তাদের মধ্যে কি আপনাদের স্বামীরা রয়েছেন। থাকলে তাদের জন্য শেষ ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করুন।’ সেনারা যখন নির্যাতন চালাচ্ছিলেন একজন সেখান থেকে পালাতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি বলেন, হত্যার কয়েক ঘণ্টা আগে ভয়ংকর নির্যাতন চালাত সেনারা। এ ছাড়া সারা দিন ধরে চলত নির্যাতন। তারা দড়ি দিয়ে বেঁধে পাথর দিয়ে মারত। কখনো রাইফেলের বাঁট দিয়ে মারত। এ সেনাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন তরুণ। তাদের অনেকের বয়স ১৭ বা ১৮ বছর। আবার অনেকে ছিলেন বয়স্ক। যারা নির্যাতন চালিয়েছেন, তাদের মধ্যে কোনো নারী ছিলেন না।

এ গ্রামের কাছেই জি বিন ডুইন গ্রামে নির্যাতন চালানো হয়। সেখানকার একটি গণকবর থেকে ১২ জনের গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, যেটি আকারে বেশ ছোট। ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি শিশুর লাশ। শিশুটি প্রতিবন্ধী। এ ছাড়া পামগাছে ঝুলানো একটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনার ফুটেজ থেকে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে, তাকে নির্যাতন করা হয়েছে। ওই ব্যক্তির বয়স ৬০ বছরের বেশি। তার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সামরিক বাহিনীর সদস্যরা যখন ওই গ্রামে প্রবেশ করেন, তখন তার ছেলে ও নাতি-নাতনিরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়। তার ধারণা ছিল, বয়সের কারণেই তাকে নির্যাতন করা হবে না। যে এলাকায় গণহত্যা চালানো হয়েছে, সেখানে সেনাবাহিনীর ওপর হামলা হয়েছিল। মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির সরকার পতনের পর জনসাধারণকে সঙ্গে নিয়ে এ হামলা চালিয়েছিল বিদ্রোহী মিলিশিয়া বাহিনী। ধারণা করা হচ্ছে, এর প্রতিশোধ হিসেবে হত্যাকান্ড চালিয়েছে সেনাবাহিনী।

কিন্তু যাদের হত্যা করা হয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকেই সামরিক বাহিনীর ওপর হামলায় জড়িত ছিলেন না। এ নিয়ে কথা বলেছেন এক বোন। তিনি বলেন, তার ভাই ওই হামলায় অংশ নেয়নি, এমন কথা বলার পর এক সেনা বলেছিলেন, ‘কোনো কথা বলবেন না। আমরা ক্লান্ত। আপনাকেও মেরে ফেলব।’

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সু চিকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। এর পর থেকেই দেশটিতে প্রতিবাদ হচ্ছে। এসব বিক্ষোভে নিয়মিত হামলা চালাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী। এ ছাড়া গ্রেফতারের ঘটনাও ঘটছে। ঘটছে হত্যাকান্ডের ঘটনাও। এ নিয়ে নতুন করে তদন্ত শুরু করেছে জাতিসংঘ। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে কি না, তা নিয়ে তদন্ত করছে সংস্থাটি।

 

 

সর্বশেষ খবর