বুধবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়ার কথা বলে টর্চার সেলে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করা হতো ভারতে। এরপর দিল্লির একটি টর্চার সেলে রেখে আদায় করা হতো মুক্তিপণ। রাজধানীতে এ চক্রের হোতাসহ তিনজনকে আটক করেছে র‌্যাব। তাদের কাছ থেকে নকল পাসপোর্ট, ভিসা ও বিভিন্ন ধরনের দলিল জব্দ করা হয়েছে। সোমবার রাতে পল্লবী ও উত্তরায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। আটকরা হলেন- চক্রের হোতা মল্লিক রেজাউল হক ওরফে সেলিম, তার দুই সহযোগী বুলবুল আহমেদ মল্লিক ও নিরঞ্জন পাল। গতকাল বেলা ১১টায় কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান র‌্যাব-৪-এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক।

আটক ব্যক্তিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তারা চাকরির জন্য বিদেশ যেতে ইচ্ছুক মানুষজনকে টার্গেট করে তাদের অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখাতেন। যারা রাজি হতেন তাদের থেকে ১২-১৫ লাখ টাকা করে নিতেন। পরে ইচ্ছুকদের বলতেন, বাংলাদেশ থেকে ভিসা পাওয়া জটিল, তাই তাদের ভারতে নিয়ে খুব সহজে কাক্সিক্ষত দেশে পাঠাবেন। আর ভারত থেকে ভিসা পাওয়া সহজ। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, ভারতে নিয়ে গিয়ে ভুক্তভোগীদের প্রথমে সেইফ হাউসে রাখা হতো। এরপর তাদের ওপর চলত অমানবিক নির্যাতন। এসব নির্যাতন চিত্র ভিডিও ধারণ করে বাংলাদেশে থাকা পরিবারকে পাঠাত। এসব ভিডিও দেখিয়ে বলতেন ১২-১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ না দিলে তাদের স্বজনকে মেরে ফেলবে। পরে প্রিয়জনকে বাঁচাতে সর্বস্ব বিক্রি করে চক্রের সদস্যদের হাতে টাকা তুলে দিতেন স্বজনরা। অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, গত বছর নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়া পাঠানোর কথা বলে জাহাঙ্গীর নামে এক ব্যক্তিকে ভারত পাচার করে চক্রটি। পাচার হয়ে যাওয়ার পর বেশ কিছুদিন কলকাতায় আটক থাকেন জাহাঙ্গীর। টর্চার সেলে তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। পরে নির্যাতনের এসব ভিডিও দেখিয়ে তার পরিবারকে চাপ দিয়ে অর্থ আদায় করে পাচারকারী চক্র। পালিয়ে দেশে এসে জাহাঙ্গীর চক্রটির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করে। তার দেওয়া তথ্য ও অভিযোগ যাচাই করে গোপন সংবাদে চক্রের হোতাসহ তিনজনকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে নকল পাসপোর্ট, পাসপোর্টের কপি, নকল ভিসা, আবেদনপত্র, বায়োডাটা, ছবি, মোবাইল, মোবাইল সিম এবং নগদ টাকাসহ বিভিন্ন নথিপত্র জব্দ করা হয়েছে। চক্রের হোতা মল্লিক রেজাউল হক সেলিম ও তার সহযোগী বুলবুল আহমেদ মল্লিক এবং নিরঞ্জন পালসহ দেশে তাদের আরও ৫-৭ জন সদস্য রয়েছে। ভারতেও বেশ কয়েকজন সহযোগী রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে কলকাতার রাজিব খান, মানিক ও দিল্লির রবিন সিংদের নাম পাওয়া গেছে। মোজাম্মেল হক বলেন, কলকাতা থেকে ভুক্তভোগীদের নেওয়া হতো দিল্লির একটি টর্চার সেলে। পরে কলকাতার টর্চার সেলের দায়িত্বে থাকতেন ভারতীয় নাগরিক রাজিব খান ও মানিক এবং দিল্লির টর্চার সেলের দায়িত্বে থাকতেন রবিন সিং। টর্চার সেলে ভুক্তভোগীদের ওপর চলত অমানবিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। এসব নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে প্রত্যেকটি টর্চার সেলের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশে চক্রের হোতার কাছে পাঠাতেন। ভুক্তভোগীদের বেশির ভাগ ফেনী, কুমিল্লা, নবাবগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর এবং ঢাকার বিভিন্ন এলাকার।

 

সর্বশেষ খবর