বুধবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

জটিলতা না বাড়ানোই ভালো

হুমায়ুন কবির

জটিলতা না বাড়ানোই ভালো

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেছেন, র‌্যাব ও এর কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য বিব্রতকর। তবে জোরালো প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি উত্তরণ সম্ভব। পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় এই বিষয়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি জড়িয়ে জটিলতা না বাড়ানোই ভালো। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেন।

হুমায়ুন কবির বলেন, পরিস্থিতি উত্তরণে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কয়েকভাবেই চেষ্টা চলছে। এর মধ্যেই পররাষ্ট্রসচিব বাংলাদেশে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে নিজেদের অবস্থা ব্যাখ্যা করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোনালাপের পর জানানো তথ্যানুসারে আলোচনার পথ খোলা থাকার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ সরকারের সব ধরনের বক্তব্য ও বিশ্লেষণে এটা পরিষ্কার যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ুক তা এখানকার কেউ চায় না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে অনেক বিষয় আছে। এ সম্পর্কে বিভিন্ন মাত্রা আছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ হলো একটা মাত্রা। এর বাইরে বহু মাত্রা আছে। আর যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ সম্পর্ক পরস্পরের জন্য উপাদেয় এবং উত্তরোত্তর এ সম্পর্ক উন্নত হচ্ছে। এ কারণে এবারের বিষয় নিয়ে আলোচনা চলবে এটাই স্বাভাবিক। মনে রাখতে হবে, এবারের বিষয় নিয়ে আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি জড়িয়ে এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি করা ঠিক হবে না, যেখানে জটিলতা আরও বাড়তে পারে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত বলেন, র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি একেবারেই নতুন কোনো বিষয় নয়। যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসনের সময় এটা নিয়ে তৎপরতা ছিল। তখন মার্কিন সিনেট থেকে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য লেখা হয়েছিল। মার্কিন রীতি অনুসারে কংগ্রেস বা সিনেট থেকে যখন কোনো বিষয় উত্থাপিত হয় তখন প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা অগ্রাহ্য করার পথ থাকে না। ধারণা করা হয় মার্কিন নির্বাচনের কারণে ট্রাম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ নিয়ে তৎক্ষণাৎ কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। এখন বাইডেন প্রশাসনের সময় এসে এমনিতেই মানবাধিকার ও গণতন্ত্র বিষয়গুলোকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তাদের কিছু অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কমিটমেন্টও আছে। আবার বাইডেন প্রশাসন থেকে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রেও গণতান্ত্রিক দেশ ও অগণতান্ত্রিক দেশের মধ্যে একটা সীমারেখা টানার চেষ্টা চলছে। এ দুই ধরনের দেশের মধ্যে ফারাক স্পষ্ট করার চেষ্টা করছে বাইডেন প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার সময় বাংলাদেশের এই পরিপ্রেক্ষিতটাও মনে রাখা প্রয়োজন। অন্যদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে পদক্ষেপের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা, রাজস্ব ও প্রশাসন তিনটি বিভাগই জড়িয়ে গেছে। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ তিন বিভাগের সমন্বয় কীভাবে হয় সে সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হয়ে ও প্রস্তুতি নিয়েই আলোচনায় বসা দরকার।

হুমায়ুন কবির বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন যে বিষয়গুলো নিয়ে আপত্তি জানাচ্ছে সেগুলোর বাস্তব অবস্থার পরিবর্তন না দেখাতে পারলে আলোচনায় সফলতা প্রাপ্তির সম্ভাবনা দুর্বল হয়ে যায়। তাই এগুলোর বিষয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নীতিগত অবস্থান বা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কোনো কিছু করার সুযোগ থাকলে তা করেই আলোচনায় বসা প্রয়োজন। তখন আমাদের পক্ষে জোরালোভাবে বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ তৈরি হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর