রবিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

সহিংসতার মধ্যেই আজ ইউপি ভোট

♦ মাগুরায় একজনের মৃত্যু ♦ এমপিদের এলাকা ছাড়ার নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিগত তিন ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দিন ব্যাপক সংঘাত-সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনায় আজ চতুর্থ ধাপের ভোট নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন ভোটার ও প্রার্থীরা। গতকালও মাগুরার শালিখা উপজেলায় নির্বাচন-পরবর্তী সংঘাতে একজনের প্রাণহানি ঘটেছে। আজ সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ হবে চতুর্থ ধাপের। এ ধাপে ৮৩৬ ইউপির মধ্যে ৩৮ ইউপিতে ইভিএমে ভোট গ্রহণ হবে। চতুর্থ ধাপের ভোটের আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ২৯৫ জন। বিনা ভোটে নির্বাচিত প্রার্থীরা ছাড়া এ ধাপের ভোটের লড়াইয়ে আছেন ৪৩ হাজার ৪৩৩ জন প্রার্থী। একই সঙ্গে আজ তিন পৌরসভায় ভোট হবে। এ ধাপের ভোট সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। মাঠে রয়েছেন পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি সদস্যরা। গতকাল ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনী মালামাল পাঠিয়েছে ইসি। এ ছাড়া এমপিদের নির্বাচনী এলাকা ছাড়তে গতকাল চিঠি দিয়েছে।

শুক্রবার মধ্যরাতে এসব নির্বাচনী এলাকায় প্রচারের সময় শেষ হয়েছে। নির্বাচনী প্রচার শেষেও গভীর রাতে বিভিন্ন এলাকায় সংঘাত-সহিংসতা হয়েছে। চার ধাপের ইউপি ভোটে সহিংসতায় এ পর্যন্ত ৮৫ জন মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে মাঠে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ভোটের পরেও তারা থাকবেন। সেই সঙ্গে মাঠে রয়েছেন ম্যাজিস্ট্রেটও।

চতুর্থ ধাপের ভোটের আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ২৯৫ জন। তাদের মধ্যে চেয়ারম্যান ৪৮ জন, সংরক্ষিত সদস্য ১১২ জন ও সাধারণ সদস্যা ১৩৫ জন। বিনা ভোটে নির্বাচিত প্রার্থীরা ছাড়া এ ধাপের ভোটের লড়াইয়ে আছেন ৪৩ হাজার ৪৩৩ জন প্রার্থী। এরমধ্যে চেয়ারম্যান ৩৮১৪ জন, সংরক্ষিত সদস্য ৯৫১৩ জন ও সাধারণ সদস্য ৩০১০৬ জন। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে। তবে বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটে না থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দলের নেতা-কর্মীরা অংশ নিচ্ছেন।

ইউপি ভোটকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু নির্বাচনী এলাকায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নির্বাচন কমিশন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন এবং নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছে। পাশাপাশি সব পক্ষের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছে সাংবিধানিক সংস্থাটি। করোনাভাইরাস মহামারী পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ইউপি প্রথম ধাপে গত ২১ জুন ও ২০ সেপ্টেম্বর এবং দ্বিতীয় ধাপে ১১ নভেম্বর, তৃতীয় ধাপে ২৮ নভেম্বর ভোট গ্রহণ হয়। চতুর্থ ধাপে আজ ৮৩৬ ইউপিতে ভোট গ্রহণ হচ্ছে। পঞ্চম ধাপে ৭০৭ ইউপিতে ৫ জানুয়ারি এবং ষষ্ঠ ধাপে ৩১ জানুয়ারি ২১৯ ইউপিতে ভোট হওয়ার কথা।

এমপিদের এলাকা ছাড়ার নির্দেশ : অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে নির্বাচনী এলাকায় সফরকারী বা অবস্থানরত সরকারি সুবিধাভোগী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য নির্বাচন কমিশন নির্দেশনা প্রদান করেছে। ইতিমধ্যে প্রাপ্ত অভিযোগ বা তথ্য অনুসারে যেসব এলাকায় সংসদ সদস্যদের প্রচারণায় বা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণের প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে সেক্ষেত্রে তাদের অবিলম্বে এলাকা ত্যাগ করার জন্য কমিশন নির্দেশ দিয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার হলে তিনি কেবল তার ভোট প্রদানের জন্য ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবেন। গতকাল ইসির উপ-সচিব আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি জেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং অফিসারদের পাঠানো হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর : নির্বাচন-পরবর্তী সংঘর্ষে মাগুরার শালিখা উপজেলার শাবলাট গ্রামে শরিফুল মোল্লা (৫৫) নামের একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ১০ জন। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় এ সংঘর্ষ হয়। নিহত শরিফুলের চাচাতো ভাই ওমর আলী জানান, গত ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপের নির্বাচন থেকেই শালিখা উপজেলার তালখড়ি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সিরাজ মন্ডলের সমর্থকদের সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থী অ্যাডভোকেট শামছুর রহমানের (চশমা) সমর্থকদের বিরোধ চলে আসছিল। নির্বাচন-পরবর্তীতেও যার ধারাবাহিকতা অব্যাহত ছিল। এরই জের ধরে শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সিরাজ মন্ডল সমর্থক সাবলাট গ্রামের মহব্বত মোল্লা কামারপাড়া এলাকায় একটি চায়ের দোকানে বসেছিল। এ সময় শামছুর রহমান সমর্থকরা অতর্কিতে সেখানে হামলা চালিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মহব্বতকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। মহব্বতকে বাঁচাতে শরিফুলসহ অন্যরা এগিয়ে এলে হামলাকারীরা তাদেরও কুপিয়ে জখম করে। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ সময় হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা শরিফুলকে মৃত ঘোষণা করেন। শালিখা থানার অফিসার ইনচার্জ তারক বিশ্বাস জানান, ঘটনার সংবাদ শোনার পরপরই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. দেলোয়ার হোসেন ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাইদুর রহমানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। শুক্রবার রাতে জেলার আটোয়ারী উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের ত্রিশুলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, পঞ্চগড় জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী (মোটরসাইকেল প্রতীক) মো. সাইদুর রহমানের ছেলেসহ ১২ জন আহত হয়েছেন। চতুর্থ ধাপে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ১৫টি ইউপিতে প্রচারণা শেষে একাধিক ইউনিয়নে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ও সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। একইভাবে নৌকা প্রতীকের কার্যালয়ে রহস্যজনক অগ্নিকান্ডে পাল্টা অভিযোগ করেছেন প্রার্থীরা। গতকাল রাতভর এসব ঘটনা ঘটে।

নির্বাচনী এলাকার উত্তর হামছাদী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে স্বতন্ত্র প্রার্থী আনারস প্রতীকের নজরুল ইসলামের সমর্থক জহির, হাজিরপাড়া ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী শামছুল আলম বাবুল ও চরশাহীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলজার মোহাম্মদের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার অভিযোগ উঠেছে। এসব ঘটনায় নৌকার প্রার্থীর সমর্থকদের দায়ী করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সমর্থকরা। এদিকে একই রাতে এসব ইউপি ও ভবানীগঞ্জ ইউপিতে নৌকা প্রতীকের কার্যালয়ে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব কান্ডে থানায় একাধিক অভিযোগ দায়ের করার খবর পাওয়া গেছে। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সমর্থকদের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উত্তর হামছাদী ইউপির নৌকার প্রার্থী এমরান হোসেন নান্নুসহ নৌকার অন্য প্রার্থীরা। তারা পাল্টা অভিযোগ করে নির্বাচনী কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও এলাকায় বহিরাগতদের অনুপ্রবেশসহ নানা অভিযোগ তোলেন। এমন পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন প্রার্থী ও ভোটাররা।

রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার ২ নম্বর কিসমত গণকৈড় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে ভয়ভীতি সৃষ্টির জন্য অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়ার সময় তুহিন (৩৫) নামের এক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে স্থানীয় গ্রামবাসী। এ সময় তার কাছ থেকে একটি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। আটক তুহিন তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদের গাড়ির ড্রাইভার। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার রাত ১২টার দিকে উপজেলার মঙ্গলপুর গ্রামে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হবে আজ। এ নির্বাচনের অধিকাংশ কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ। এরমধ্যে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ গান্না ইউপি। এর আগে ২০০৩ সালে গান্না ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শৈলমারী কুটিদুর্গাপুর গ্রামের কদমতলায় সন্ধ্যা ৭টার দিকে তৎকালীন চেয়ারম্যান প্রার্থী শরাফত হোসেনের পাঁচ কর্মীকে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা হয়। সে সময় ওই ইউপিতে শরাফতের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন সাবেক চেয়ারম্যান ওহাব বিশ্বাস। এবার এ ইউপিতে একই রকম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

সর্বশেষ খবর