মঙ্গলবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

চতুর্থ ধাপে অর্ধেক ইউপিতে হেরেছে আওয়ামী লীগ

গোলাম রাব্বানী

চতুর্থ ধাপে অর্ধেক ইউপিতে হেরেছে আওয়ামী লীগ

চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে ৪৮.৫১ শতাংশ ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে পরাজিত হয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৫১.৪৯ শতাংশ এবং স্বতন্ত্র, জাপাসহ অন্যান্য দল ৪৮.৫১ শতাংশ ইউপিতে বিজয়ী হয়েছে। নির্বাচন কমিশন প্রকাশিত ৭৯৬ ইউপির ফলাফল বিশ্লেষণে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২৭ ইউপিতে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন দেয়নি। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১৬২ ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন না। বগুড়ার কাহালু উপজেলার কালাই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজহার আলী ভোট পেয়েছেন মাত্র ১১২টি। একইভাবে অনেক ইউপিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। ওই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে সাতজন অংশ নেন। ফলাফলে সাত প্রার্থীর মধ্যে ১ হাজার ৪২৬ ভোট পেয়ে ষষ্ঠ হয়েছেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের এফতেহারুল ইসলাম। নিয়ম অনুযায়ী মোট প্রাপ্ত ভোটের ৮ ভাগের ১ ভাগ কোনো প্রার্থী না পেলে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।

ইসি জানিয়েছে, চতুর্থ ধাপে ৭৯৬ ইউপির ফলাফলে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়েছে ৩৯৬টিতে, স্বতন্ত্র ৩৯০, জাপা ৬, ইসলামী আন্দোলন ২, জাকের পাটিসহ অন্য একটি দল ২টিতে। ২৮ নভেম্বরের তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৪৭.০৬ শতাংশ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে পরাজিত হয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৫২.৯২, স্বতন্ত্র ৪৪.৯৫ ও জাপাসহ অন্যান্য দল ২.১১ শতাংশ ইউপিতে জয় পেয়েছে। মোট ভোট পড়েছে ৭৪.২১ শতাংশ। ইসির প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণে এ তথ্য পাওয়া গেছে। ইসিসূত্র জানিয়েছেন, তৃতীয় ধাপের ১ হাজার ৮ ইউপি তফসিল হলেও মামলা ও অন্যান্য জটিলতায় নির্বাচন স্থগিত হয় ৭ ইউপির; ৯ ইউপির বিভিন্ন কেন্দ্র স্থগিত রয়েছে। ফলে ১ হাজার ৮ ইউপির মধ্যে ইসি গতকাল ৯৯২টির ফলাফল প্রকাশ করে। প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে- ৯৯২ ইউপির মধ্যে ৫২৫টিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। যা মোট ফলাফলের ৫২.৯২ শতাংশ। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৪৪৬ ইউপিতে বিজয়ী হয়েছেন, যা ৪৪.৯৫ শতাংশ। আর জাতীয় পার্টি ও অন্যান্য দল জয় পেয়েছে ২১ ইউপিতে, যা ২.১১ শতাংশ। দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ ৪৭.০৬ শতাংশ ইউপিতে হেরে গেছে। ইসি জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের ৫২৫ চেয়ারম্যানের মধ্যে ৯৯ জন বিনা ভোটের। আর স্বতন্ত্র ৪৪৬ জনের মধ্যে একজন বিনা ভোটের। এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা ১৭ ইউপিতে চেয়ারম্যান হয়েছেন। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ১, ওয়ার্কার্স পার্টি ১, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ১ ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ১ ইউপিতে বিজয়ী হয়েছে। দেখা গেছে, অনেক ইউপিতে জামানত হারিয়েছে আওয়ামী লীগ প্রার্থী। আবার স্বতন্ত্র বিজয়ী প্রার্থীর মধ্যে বিএনপি-জামায়াত সমর্থকরাও চেয়ারম্যান হয়েছেন। তৃতীয় ধাপে ২১ ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিল না।

দুই ধাপে ৪২৪ ইউপিতে পরাজিত : প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের ১ হাজার ১৯৮ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা দলীয় বিদ্রোহী, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দলের প্রার্থীদের কাছে ৪২৪ ইউপিতে পরাজিত হয়েছেন। অনেক ইউপিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জামানতও হারিয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপে সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে ৮৯.৭৬ শতাংশ। সর্বনিম্ন ৪২.২৮ শতাংশ। গড় ভোট ৭৩.৪৯ শতাংশ। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ইউপির দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর প্রায় ৪২ শতাংশই পরাজিত হয়েছেন। যদিও প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা ৭৩.৪৮ শতাংশ বিজয়ী হয়েছিলেন। আর ওই ধাপে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছিলেন ২৪.২২ শতাংশ ইউপিতে। দুই ধাপের ভোটে ৪২৪ ইউপিতে নৌকার কেন পরাজয়, সেই হিসাব-নিকাশ করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলের হাইকমান্ড বিদ্রোহীদের কাছে নৌকা প্রতীকের পরাজয়ের কারণ বিশ্লেষণ করছেন।

ইসিসূত্র জানিয়েছেন, প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের ভোটে ২০ ইউপিতে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক ছিল না। এসব ইউপিতে দলীয় মনোনয়ন উন্মুক্ত রাখা হয়েছিল। সে হিসেবে দুই ধাপের ১ হাজার ১৯৮ ইউপি ভোটে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে ১ হাজার ১৭৮ প্রার্থী মাঠে নামেন। এর মধ্যে জয় পেয়েছেন ৭৫৪ জন। অন্য প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন ৪৪৪ ইউপিতে। তবে ২০ ইউপিতে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন না দেওয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিদ্রোহী ও অন্য দলের প্রার্থীর কাছে হেরেছেন ৪২৪ ইউপিতে। ইসি জানিয়েছে, ১১ নভেম্বরের দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর ৫৮.২৭ শতাংশ জয়ী হয়েছেন। বাকি ৪১.৭৩ শতাংশ নৌকার প্রার্থী নিজ দলের বিদ্রোহী, স্বতন্ত্র (বিএনপি), অন্যান্য দলের প্রার্থীদের কাছে পরাজিত হয়েছেন। এ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন ৩৯.৫৬ শতাংশ। তার মধ্যে বিএনপি-জামায়াত নেতারাও আছেন। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রথম ধাপের তুলনায় দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের ভোট কমেছে। দ্বিতীয় ধাপের ৮৩৩টি ইউপির মধ্যে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন ৪৮৫টিতে। এর মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৮১ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৪০৪ জন জয়ী হন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন ৩৩০টিতে। এ ছাড়া এ ধাপে জাতীয় পার্টি ১০, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চারটি এবং জাতীয় পার্টি (জেপি), খেলাফত মজলিশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি একটি করে ইউপিতে জয়ী হয়েছে।

প্রথম ধাপে ২১ জুন ও ২০ সেপ্টেম্বরের ভোটে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা ৭৩.৪৮ শতাংশ ইউপিতে জয়ী হন। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছিলেন ২৪.২২ শতাংশ ইউপিতে। ওই নির্বাচনে ৩৬৫টি ইউপির মধ্যে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা ২৬৯টিতে জয়ী হন। এর মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৭২ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১৯৭টিতে জয়ী হন। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হন ৮৮টি ইউপিতে। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি তিনটি, জাতীয় পার্টি (জেপি) তিনটি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি একটি করে ইউপিতে জয়ী হয়।

সর্বশেষ খবর