মঙ্গলবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

করোনা রোগী বাড়ার শঙ্কা প্রস্তুত হাসপাতাল

চালু আছে দুই ফিল্ড হাসপাতাল

জয়শ্রী ভাদুড়ী

বিশ্বজুড়ে উৎকণ্ঠা তৈরি করছে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন। বিভিন্ন দেশে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ওমিক্রনের সংক্রমণ ঠেকাতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। বন্দরগুলোতে স্ক্রিনিংয়ে দেওয়া হয়েছে জোর। করোনা রোগী বাড়লে সেবা নিশ্চিত করতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে হাসপাতাল।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. ফরিদ হোসেন মিঞা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী কমে আসায় হাসপাতালগুলোতে অল্প সংখ্যক শয্যা নির্দিষ্ট রেখে নন-কভিড রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। করোনা আক্রান্ত রোগী বাড়লে আবার আগের মতো হাসপাতালগুলোতে কভিড রোগীদের সেবা দেওয়া হবে। প্রস্তুতি সবই রয়েছে। অক্সিজেন সিলিন্ডার, সেন্ট্রাল অক্সিজেন, শয্যা সবই রয়েছে।

ডিএনসিসি কভিড হাসপাতাল এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব ফিল্ড হাসপাতাল চালু আছে। তিনি আরও বলেন, প্রায় দুই বছরে রোগী ব্যবস্থাপনায় আমাদের অভিজ্ঞতা হয়েছে। অন্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে সংক্রমণ ও মৃত্যু অনেক কম ছিল। এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমরা রোগীদের পর্যাপ্ত সেবা নিশ্চিত করতে পারব।’

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৩৭৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে, মারা গেছেন একজন। শনাক্ত হার ২ দশমিক ১৬ শতাংশ।  ৮৫১টি পরীক্ষাগারে ১৭ হাজার ২৭১টি নমুনা পরীক্ষা করে শনাক্ত নির্ণয় করা হয়েছে। সুস্থ হয়ে ফিরে গেছেন ৩২৩ জন। গত ২৫ ডিসেম্বর শনাক্তের হার ছিল ২ দশমিক ০৭ শতাংশ। করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন ২৭৫ জন। ২৪ ডিসেম্বর শনাক্তের হার ছিল ২ দশমিক ০২ শতাংশ। আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩৪২ জন। ডিসেম্বরের শুরু থেকেই ঊর্ধ্বমুখী করোনা সংক্রমণের হার। এর মধ্যে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় দেখা দিয়েছে দুশ্চিন্তা। এর মধ্যেই দেশে তিনজনের শরীরে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। ডেল্টা এবং ওমিক্রন একসঙ্গে হাইব্রিড ধরন ডেলমিক্রনে রূপ নিচ্ছে। এটি নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্ট নয়। ডেল্টা ও ওমিক্রন দুটি ভ্যারিয়েন্টেরই জিন অদল-বদল করার ক্ষমতা থাকায় ডেলমিক্রনে দুই ভ্যারিয়েন্টের স্পাইক প্রোটিন থাকে। এই প্রক্রিয়াকে রিকম্বিনেশন বলে। ওমিক্রনের উচ্চ সংক্রমণ ক্ষমতা ও ডেল্টার মারাত্মক রোগ তৈরির ক্ষমতা মিলেমিশে ডেলমিক্রন ভয়ংকর রূপ ধারণ করতে পারে। যুক্তরাজ্য ও উত্তর আমেরিকায় ইতিমধ্যে ডেলমিক্রন ছড়িয়ে পড়েছে। গত ২৫ ডিসেম্বর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি ইউরোপের বর্তমান অবস্থার মতো হোক তা সরকার চায় না। কভিড সংক্রমণের হার ফের ২ শতাংশের ওপরে উঠেছে, যা ১ শতাংশের ঘরে ছিল। এটা আশঙ্কাজনক, গত এক দিনে প্রায় ৪০০ নতুন আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। আমি সবাইকে অনুরোধ করব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে। নইলে আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়ে যাবে, একইভাবে মৃতের সংখ্যাও আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাবে।’

দেশে আক্রান্তের হার কম থাকায় সংক্রমণ হার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীদের জন্য রাখা শয্যার অধিকাংশই ফাঁকা রয়েছে। রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৪ হাজার ৭২৮টি শয্যার মধ্যে ৪ হাজার ৩৮৪টিই ফাঁকা রয়েছে। কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ৬৪ শয্যার মধ্যে ৫৭টিই ফাঁকা রয়েছে। ১৬টি কভিড আইসিইউর মধ্যে ফাঁকা রয়েছে ১২টি। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২৭৫ শয্যার মধ্যে ১৯৮টি ফাঁকা রয়েছে। ১০টি আইসিইউর একটি ফাঁকা আছে। শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে ১৭৪টি শয্যার সবগুলোই ফাঁকা রয়েছে। কভিড আক্রান্ত কমে আসায় নন-কভিড রোগীদের সেবায় জোর দিয়েছে হাসপাতালগুলো।

সর্বশেষ খবর