বুধবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ

রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতি করা কঠিন হয়ে যাবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতি করা কঠিন হয়ে যাবে

রাজনীতিতে গুণগত মান নিশ্চিত করা না গেলে ভবিষ্যতে রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতি করা কঠিন হয়ে যাবে বলে মনে করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। গতকাল বঙ্গভবনে নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনায় তিনি এমন আশঙ্কার কথা জানান। নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানায় প্রতিনিধি দলটি।

প্রতিনিধি দলকে বঙ্গভবনে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, রাজনীতি হচ্ছে জনগণের কল্যাণের জন্য। রাজনীতিতে গুণগত মান নিশ্চিত করা না গেলে ভবিষ্যতে রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতি করা কঠিন হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোকে তৃণমূল পর্যায়ে সঠিক জনমত গড়ে তুলতে হবে। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম, রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন, সচিব (সংযুক্ত) মো. ওয়াহিদুল ইসলাম খান।

বিকাল সাড়ে ৩টার পরে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিনিধি দলের নেতারা বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন। এরপর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় সাংবিধানিক কাউন্সিলসহ ছয় প্রস্তাব দেয় দলটি। রাষ্ট্রপ্রধান একটি স্বাধীন নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ইসি গঠনের ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা কামনা করেন। বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের সঙ্গে ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক, মাহমুদুল হাসান মানিক, নুর আহমদ বকুল, কামরুল আহসান, আলী আহমেদ, এনামুল হক এমরান ও নজরুল ইসলাম হক্কানী। সংলাপ শেষে বেরিয়ে এসে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন সাংবাদিকদের বলেন, যদিও আইনমন্ত্রী বলছেন আইন প্রণয়নের যথেষ্ট সময় নেই, তবে পার্লামেন্টেই উদাহরণ আছে যে এর চেয়েও কম সময়ে আইন প্রণয়ন কেবল নয়, সংবিধানও সংশোধন হয়েছে। যেটা প্রয়োজন সেটা হলো সংবিধানকে অনুসরণ করা। যদি একান্তই আইন প্রণয়ন না করা হয়, তবে যে সার্চ কমিটি গঠনের কথা বলা হচ্ছে সেক্ষেত্রেও সার্চ কমিটির দেওয়া নামগুলো সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির যাচাই-বাছাইয়ের পর রাষ্ট্রপতিকে পাঠাতে হবে এবং তিনিই সেই তালিকা থেকে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ করবেন। মেনন জানান, ওয়ার্কার্স পার্টি রাষ্ট্রপতিকে নাগরিক নেতাদের সঙ্গেও সংলাপ করার প্রস্তাব দিয়েছে। ওয়ার্কার্স পার্টির প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদের নতুন বছরের প্রথম অধিবেশনের শুরুতেই এই আইন উত্থাপন করে জরুরি ভিত্তিতে তা পাস করা যেতে পারে। নির্বাচন কমিশন নিয়োগ সংক্রান্ত সংবিধান বর্ণিত বিধি পরিপূরণে আপনি (রাষ্ট্রপতি) সরকারকে এই নির্দেশ দিতে পারেন। অন্যথায় প্রতিবারের মতো এবারও নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিতর্ক জন্ম দেবে এবং এ ধরনের আস্থাহীনতার পরিবেশে নির্বাচন কমিশন যথাযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারবে না বলে উল্লেখ করে ওয়ার্কার্স পার্টি। ওয়ার্কার্স পার্টি বলেছে, এই আইন অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারগণ নিয়োগের জন্য নিম্নোক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে একটি সাংবিধানিক কাউন্সিল থাকবে। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেলকে নিয়ে এই সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠিত হবে। এই সাংবিধানিক কাউন্সিল রাষ্ট্রপতির কাছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের জন্য নাম প্রস্তাব করবে। রাষ্ট্রপতি তাদের পরামর্শমতো প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারদের নিয়োগ করবেন। এর আগে গতকাল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা করেছে বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন এবং খেলাফত মজলিস। এ আলোচনায় নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা কামনা করেছেন রাষ্ট্রপতি। তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বঙ্গভবনের দরবার হলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেয়। ২০ ডিসেম্বর সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলোচনা দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছেন রাষ্ট্রপতি। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে। সংবিধানে কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের কথা উল্লেখ আছে। তবে এ সংক্রান্ত আইন দেশে হয়নি। এ পরিস্থিতিতে গত দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সার্চ কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটি সম্ভাব্য ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করার পর রাষ্ট্রপতি সেখান থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনারদের নিয়োগ দেন। এবার সংবিধান অনুযায়ী আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে আসছিল বিভিন্ন সংগঠন ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।

 

সর্বশেষ খবর