শনিবার, ১ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

গণতান্ত্রিক উত্তরণের ভিত্তি বছর ২০২২

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

রুহুল আমিন রাসেল

গণতান্ত্রিক উত্তরণের ভিত্তি বছর ২০২২

দেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণের ভিত্তি বছর ২০২২ সাল হতে পারে বলে মনে করেন খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেছেন, নতুন বছরে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতার প্রয়োজনীয়তা মুখ্য হয়ে উঠবে। নতুন বছরের মূল চ্যালেঞ্জ হবে বাংলাদেশের ৫০ বছরের অর্জন টেকসই ও সাম্যভিত্তিক করা এবং টিকিয়ে রাখা। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন দেশে থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক খ্যাত বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। অর্থনীতির এই নিবিড় পর্যবেক্ষক বলেছেন, দেশে বৈষম্য বাড়ছে। সুশাসনের অভাব হচ্ছে। গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এতে বাংলাদেশের অর্জনসমূহ হুমকিতে পড়েছে। রাষ্ট্রের কার্যক্ষমতা বিকল হয়ে পড়েছে। বাজার ব্যবস্থাপনা ও টাকার মূল্যমান দুর্বল হয়েছে। করোনার দুই বছরে বেকার সমস্যাসহ অর্থনীতি চাপে পড়েছে। সমাজসচেতন এই রাজনৈতিক-অর্থনীতির বিশ্লেষক বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও রোহিঙ্গা সমস্যা এবং হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িকতা উপচে পড়েছে। নারী নির্যাতন ও পরিবহনে নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে। সাম্প্রতিককালের অর্জন টেকসই ও মজবুত করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমরা ২০২২ সালে প্রবেশ করছি। কিন্তু সাধারণভাবে ২০২১ সাল বাংলাদেশের জন্য গর্বের বছর, গৌরবের বছর ও অর্জনের বছর। বাংলাদেশের জন্য এটা একটি অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের বছর।

জাতিসংঘে কাজ করা অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, দেশের ৫০ বছরের অর্জন সবাই সমানভাবে ভোগ করতে পারছে না। বৈষম্যের বিষয়টি সবার সামনে একটি বড় উৎকটভাবে এসেছে। করোনা মহামারির সময়ে বৈষম্য আরও প্রকটভাবে প্রকাশ পেয়েছে। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন, এমনকি নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও ব্যাপকভাবে দেখা যাচ্ছে। বৈষম্য একটা কাঠামোগত রূপ পেয়েছে। আগে যেটা ঘটনাক্রমে উপসর্গ হিসেবে আসত, এখন সেটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়ে বৈষম্যটা গভীরতর রূপ নিচ্ছে। অর্থাৎ যে কারণে বৈষম্যের সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ক্ষমতার অপব্যবহার যেন তাদের কাছে অনেক বেশি পেশাদারিত্বের সঙ্গে ব্যবহৃত হচ্ছে।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, বৈষম্যকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়েছে, এটার বড় কারণ সুশাসনের অভাব। আরেকটি বিষয় আমরা দেখতে পারছি, প্রশাসন রাজনীতির চেয়ে একটা বড় ভূমিকায় এসেছে। যে কোনো জেলা বা উপজেলায় গেলে দেখা যায় উর্দি পরিহিত প্রশাসন আর উর্দি ছাড়া প্রশাসন। এদের ভিতরে দ্বন্দ্ব ক্রমান্বয়ে প্রকট হয়ে উঠছে এবং মনে হয় দুটি সমান্তরালভাবে কাজ করছে। কোনো একটি রাজনৈতিক সরকারের অধীনে তারা কাজ করছেন বলে অনেক সময় মনে হয় না। আবার উর্দি পড়া প্রশাসনের ভিতর আরেক ধরনের টেনশন আছে, এটাও বড় চিন্তার বিষয়। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান-বিআইডিএসের সাবেক এই সিনিয়র রিসার্চ ফেলো বলেন, দেশে যে রাজনৈতিক দলগুলো ছিল, তারাও আবার রাজনৈতিক দল হিসেবে কার্যকর নেই। বিরাজনীতিকরণ শব্দটা ব্যবহার করা হয়, এর চরম উদাহরণ হিসেবে সাম্প্রতিককালে দেশের ভিতরে গণমানুষের আস্থাহীনতার জায়গায় চলে গেছে। আগে আমরা রাজনৈতিক নেতৃত্ববৃন্দের কাছে যে সমাধানের জন্য দৌড়ে যেতাম, সেই সমাধান এখন তাদের কাছে নেই। আর গেলে পরে তারা বলেন, আমাকে বলে কী হবে, আমি তো কিছু করি না। রাজনৈতিক নেতৃত্ববৃন্দ তাদের দায়িত্ব পরিত্যাগ করেছেন বলে মনে হয়। অর্থনীতিবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, গণতন্ত্রহীনতা বা জবাবদিহিতা না থাকা এবং জনমানুষের কথা বলার জায়গাটা নিরপেক্ষভাবে, ভীতিহীনভাবে না থাকলে মুশকিল হবে। এ জন্য ২০২২ ও ২০২৩ সালের দুই বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা চলছে। এর সঙ্গে নির্বাচনী পরিবেশের আলোচনাও আমাদের কাছে আসা উচিত।  

সর্বশেষ খবর