রবিবার, ২ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
পূর্বাচলে বাণিজ্য মেলা উদ্বোধন

এখন বাংলাদেশের সময় : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

এখন বাংলাদেশের সময় : প্রধানমন্ত্রী

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্ব বাণিজ্যে বাংলাদেশের সামনে অনেক সুযোগ রয়েছে। সময় কিন্তু এখন আমাদের। সময় বাংলাদেশের। কথাটি মনে রাখতে হবে।

গতকাল সকালে পূর্বাচলে নতুন ভেন্যুতে ২৬তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তিনি।

গত বছর কভিড-১৯ মহামারির কারণে মেলার আয়োজন করা সম্ভব না হলেও এবার প্রথমবারের মতো স্থায়ী ভেন্যু পূর্বাচল নতুন শহরে নবনির্মিত বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে মাসব্যাপী ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা’ (ডিআইটিএফ)-২০২২ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ বছর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং সরকারের উন্নয়ন কর্মকা সামনে রেখে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পণ্যের বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে গুণগত মান বাড়াতে হবে। অর্থাৎ নিজস্ব ব্র্যান্ডিং সৃষ্টি করে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, একটা দেশ উন্নতি করতে পারে ব্যাপকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটিয়ে। আমরা সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিচ্ছি। আন্তর্জাতিকভাবে নতুন বাজার খুঁজে বের করা, রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য পণ্য উৎপাদন বহুমুখীকরণ একান্তভাবে অপরিহার্য। বর্তমান বিশ্বে করোনার পর আমাদের যে অভিজ্ঞতা, এখন খাদ্যপণ্যের চাহিদা বিভিন্ন দেশে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এটা কখনই কমবে না। আবার আমার নিজের দেশেও বাজার সৃষ্টি হচ্ছে। কৃষিপণ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাণিজ্য মেলার সুবিধা হলো দেশ-বিদেশ থেকে যারা আসেন তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করা যায়। অনেক পণ্যের চাহিদা সম্পর্কে জানা যায়। পার্টনারও খুঁজে পাওয়া যায়। ব্যবসা-বাণিজ্য করতে গেলে দেশে-বিদেশে পার্টনারশিপ খুব প্রয়োজন। তিনি বলেন, করোনায় ব্যবসা ধরে রাখতে এবং এগিয়ে যেতে নানা প্রণোদনা দিয়েছি। করোনায় ব্যাংকের সুদ ৫০ ভাগ আপনাদের দিতে হবে, বাকিটা আমরা ভর্তুকি দিয়ে দিচ্ছি। এ করোনায় অনেক দেশের অর্থনীতি স্থবির হয়ে গেছে। আমাদের অর্থনীতি চালু রাখতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তবে কিছুটা ধাক্কা লেগেছে। তা-ও অতিক্রম করতে পারব বলে বিশ্বাস করি। যে আদর্শ নিয়ে জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করেছেন তা অবশ্যই পূরণ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় রপ্তানি খাতের ভূমিকা অনেক। বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নারীর ক্ষমতায়ন ও দারিদ্র্য বিমোচন এবং বাংলাদেশকে আরও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এ অর্থনৈতিক অগ্রগতি। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের সময় মোট রপ্তানি আয় পেয়েছিলাম ১৫ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত ১৩ বছরে আমরা অর্জন করেছি ৪৫ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই ব্যাপক উন্নতি আমরা করতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আমাদের আগামী প্রজন্ম পাবে একটা সুন্দর সমাজ, সুন্দর দেশ, উন্নত দেশ। যে দেশ হবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আত্মনির্ভরশীল, আত্মমর্যাদাশীল, উন্নত ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। শ্রমিক-মালিক-উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার মধ্যেও আমাদের অর্থনীতি কিন্তু একেবারে স্থবির হয়নি। যেভাবে হোক আমরা কিছুটা চালু রাখতে সক্ষম হয়েছি। পৃথিবীর বহু দেশ আজ ভীষণভাবে অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। হয়তো কিছুটা ধাক্কা আমাদের লেগেছে। আমাদের প্রবৃদ্ধি ৮ ভাগের ওপরে তুলতে সক্ষম হয়েছিলাম, যদিও তা কমে গিয়েছিল। ইনশা আল্লাহ আমরা তা-ও অতিক্রম করতে পারব বলে বিশ্বাস করি। কারণ আমরা একটা লক্ষ্য স্থির করেছি। আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। কিন্তু আমাদের আরও সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যিক সুযোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, করোনাকালেও আমাদের রপ্তানি বেড়েছে। ডিজিটাল ডিভাইস রপ্তানিতে আমরা ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছি। ২০২০-২১ অর্থবছরে করোনাকালেও ৪৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের রপ্তানি করতে সক্ষম হয়েছি। তা ছাড়া আমাদের সার্বিক রপ্তানি বেড়েছে। তিনি বলেন, রপ্তানি উৎসাহিত করার জন্য আমি প্রতি বছর একটি পণ্যকে বর্ষপণ্য ঘোষণা করি। ২০২২ আইসিটি পণ্য সেবাকে জাতীয়ভাবে বর্ষপণ্য হিসেবে ঘোষণা করছি। প্রধানমন্ত্রী নিজে গবেষণাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেন জানিয়ে বলেন, আমার মনে হয় ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমাদের আরও গবেষণা দরকার। আমাদের পণ্যের চাহিদা এবং মান বিশেষভাবে নিরূপণ করা এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে পণ্যের মান ধরে রাখার বিষয়ে প্রতিটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিল্পমালিক ও উদ্যোক্তাদের আমি অনুরোধ করব নিজের দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য আপনাদেরই উদ্যোগ নিতে হবে। ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সরকারে আসার পর যে বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্ব নিয়ে উদ্যোগ নিয়েছিলাম তা হলো উৎপাদন বাড়ানো। আমাদের দেশে আর্থসামাজিক উন্নয়ন করতে হলে উৎপাদন বাড়াতে হবে; যেটা আমাদের জাতির পিতারই নীতিমালায় ছিল। সেটা আমরা অনুসরণ করি, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সৃষ্টি করি, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রটা উন্মুক্ত করে দিই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশটা যেন শিল্প-বাণিজ্যে এগিয়ে যেতে পারে, উৎপাদন বাড়াতে পারে সে উদ্যোগ নিয়েছি। বিশেষ করে নিজস্ব বাজার তৈরিতে আমরা মনোনিবেশ করি। কারণ শিল্পায়নের ব্যাপক প্রসার ঘটবে তখনই যখন আমাদের নিজস্ব বাজার তৈরি হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপনকান্তি ঘোষ ও এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য দেন ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এবং সিইও এ এইচ এম আহসান।

সর্বশেষ খবর