সোমবার, ৩ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

দুর্নীতির বিষয়ে নো কম্প্রোমাইজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুর্নীতির বিষয়ে নো কম্প্রোমাইজ

হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী

দুর্নীতিকে ক্যান্সার উল্লেখ করে নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, দুর্নীতির বিষয়ে নো কম্প্রোমাইজ। তিনি বলেন, আঙুলে ক্যান্সার হলে যেমন কেটে ফেলতে হয়, দুর্নীতিও তেমনি। গতকাল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এক নম্বর এজলাসে অনুষ্ঠিত এক সংবর্ধনায় এসব কথা বলেন প্রধান বিচারপতি। প্রথা অনুসারে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের পক্ষ থেকে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন এবং পরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষে সম্পাদক মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রধান বিচারপতিকে সংবর্ধনা  জানিয়ে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতি, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, আইন কর্মকর্তা ও আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। পরে শুক্রবার নতুন প্রধান বিচারপতিকে শপথও পড়ান তিনি। গতকাল প্রধান বিচারপতি হিসেবে প্রথম এজলাসে বসেন হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। রীতি অনুযায়ী এজলাসে বসার প্রথম দিনই এই সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।

প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘বিচার কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এই অভিপ্রায় জানাতে চাই, বিচার বিভাগে কোনো দুষ্ট ক্ষতকে আমরা ন্যূনতম প্রশ্রয় দেব না। দুর্নীতি একটি ক্যান্সার। কোনো আঙুলে যদি ক্যান্সার হয়, সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে আঙুলটি কেটে ফেলা। দুর্নীতির ব্যাপারে আমি কোনো কম্প্রোমাইজ করব না। চিহ্নিত হলে সঙ্গে সঙ্গে স্টাফ বা অফিসার যে-ই হোক না কেন, সাসপেন্ড করে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। এ ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের সব শাখার অস্বচ্ছতা, অনিয়ম ও অযোগ্যতাকে নির্মূল করতে সবাইকে পাশে পাব, এই আশা ব্যক্ত করছি।’ মামলাজট নিরসন, বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা- গতিশীলতা আনা ও অনিয়ম অনুসন্ধানে পৃথক কমিটি গঠন করার কথাও বলেন প্রধান বিচারপতি।

প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আরও বলেন, দেশের সব অধস্তন আদালতে মামলাজট নিরসন ও বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা-গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে আটটি বিভাগের জন্য সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতিকে প্রধান করে একটি করে মনিটরিং সেল গঠন করা হবে। প্রতি মাসে তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে প্রতিবেদন গ্রহণ করা হবে। পুরনো মামলাগুলো সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে নিষ্পত্তির বিষয়ে সুপারভাইজ ও মনিটরিং করা হবে।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বার ও বেঞ্চ হলো একটি পাখির দুটি ডানা। আর জুডিশিয়ারি হলো সমস্ত দেহ। পাখা দুটি সমানভাবে শক্তিশালী করার মাধ্যমে এ দেশের সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যেতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি। বারের সহযোগিতা ছাড়া কোনোভাবেই কোর্ট পরিচালনা করা সম্ভব নয়।’

হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘বিচার বিভাগে অনেক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করলে সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারব ইনশা আল্লাহ। রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের একটি অঙ্গ দুর্বল বা সমস্যাগ্রস্ত হলে রাষ্ট্র শক্তিশালী হতে পারে না। এ কারণে আমি বিশ্বাস করি, রাষ্ট্রের অপর দুটি বিভাগ তাদের নিজ নিজ অবস্থানে থেকে বিচার বিভাগের সমস্যা সমাধানে দৃশ্যমান ও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।’ তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে যে ন্যায়বিচার জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া জনগণের প্রতি দয়া নয়, বরং এটি তাদের সহজাত অধিকার। দেশের সব বিচারককে নিরপেক্ষতার সঙ্গে, নির্ভয়ে ও স্বাধীনভাবে মানুষের ন্যায়বিচারপ্রাপ্তির সহজাত অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালন করতে হবে।

সর্বশেষ খবর