সোমবার, ৩ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

ফের দূষিত নগরীর শীর্ষে ঢাকা

৩৫ গুণ বিষাক্ত বাতাস! ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখার পরামর্শ

শামীম আহমেদ

ফের দূষিত নগরীর শীর্ষে ঢাকা

নতুন বছরের দ্বিতীয় দিনে দূষণে পৃথিবীর সব শহরকে ছাড়িয়ে গেল ঢাকা। বিশ্ব বায়ু মান পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এয়ার ভিজুয়ালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গতকাল দুপুর ১২টায় বায়ুমান সূচকে (একিউআই) ২০৮ স্কোর নিয়ে খুবই অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে রাজধানীর বাতাস। বিকাল ৩টায় স্কোর বেড়ে হয় ২২৪। দূষণে শীর্ষ বিশ্বের ৯১টি শহরের মধ্যে এক নম্বরে উঠে আসে ঢাকার নাম। সন্ধ্যা ৬টায় স্কোর বেড়ে হয় ২২৬। এ সময় বাতাসে দূষণের মূল উপাদান পিএম ২.৫ (অতি সূক্ষ্ম বস্তু কণা) ছিল প্রতি ঘনমিটারে ১৭৫.৮ মাইক্রোগ্রাম, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেঁধে দেওয়া সীমার চেয়ে ৩৫.১৬ গুণ বেশি। গতকাল দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অধিকাংশ সময় শীর্ষ দূষিত নগরী ছিল ঢাকা। দ্বিতীয় দূষিত শহর হিসেবে কখনো ভারতের দিল্লি, কখনো উঠে আসে চীনের উহানের নাম। সন্ধ্যার পর সবাইকে ছাড়িয়ে দূষণে শীর্ষে উঠে আসে দুবাই। এদিকে বিষাক্ত বাতাস থেকে রক্ষা পেতে ঢাকাবাসীকে ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখা, ঘরের বাইরে শরীরচর্চা না করা, মাস্ক ছাড়া বাইরে বের না হওয়া ও ঘরের বাতাস দূষণমুক্ত করতে বায়ু বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র চালিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছে এয়ার ভিজুয়াল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী, প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ক্ষতিকর অতি সূক্ষ্ম বস্তু কণা (পিএম ২.৫) ৫ মাইক্রোগ্রাম থাকলে তাকে নিরাপদ ধরা যায়। আর এই সূক্ষ্ম কণা ফুসফুসের গভীরে পৌঁছে মারাত্মক ক্ষতি করে। তৈরি করে দীর্ঘমেয়াদি নানা রোগ। এয়ার ভিজুয়ালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গতকাল দুপুর ১২টায় ঢাকার বাতাসে পিএম-২.৫ ছিল ১৫৭.৬ মাইক্রোগ্রাম, ১টায় ১৬৯.২ মাইক্রোগ্রাম, ২টায় ১৬০.১ মাইক্রোগ্রাম, ৩টায় ১৭৩.৮ মাইক্রোগ্রাম, ৪টায় ১৬৫.৯ মাইক্রোগ্রাম, ৫টায় ১৭১.৪ মাইক্রোগ্রাম ও সন্ধ্যা ৬টায় ১৭৫.৮ মাইক্রোগ্রাম। এদিকে অনেক মাস পর গত ২০ ডিসেম্বর একিউআই স্কোর ২০০ পার করে খুবই অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে ঢাকার বাতাস। একই অবস্থা বজায় ছিল ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরে দূষণ কিছুটা কমে। গতকাল আবারও খুবই অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে ঢাকার বাতাস। দূষণে বিশ্বের সব শহরকে ছাড়িয়ে যায়। কোনো এলাকায় বায়ু মান সূচকে (একিউআই) স্কোর ৫০ এর নিচে থাকলে তাকে স্বাস্থ্যকর ধরা হয়। স্কোর ৫১ থেকে ১০০ হলে সহনীয়, ১০১ থেকে ১৫০ বিশেষ শ্রেণির মানুষের জন্য অস্বাস্থ্যকর, ১৫১ থেকে ২০০ হলে অস্বাস্থ্যকর, ২০১ থেকে ৩০০ খুবই অস্বাস্থ্যকর ও ৩০১ থেকে ৫০০ হলে তা বিপজ্জনক।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীজুড়ে চলছে অনেক মেগা উন্নয়ন প্রকল্প। চলছে ব্যক্তিগত ও বেসরকারি নির্মাণ কাজ। কোথাও ধুলা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেই। সম্প্রতি ডিজেলচালিত বাসের ভাড়া বৃদ্ধির পর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি জানিয়েছে যে, ঢাকা মহানগর এলাকায় ১২০টি পরিবহন কোম্পানির ৬ হাজার যাত্রীবাহী বাসের মধ্যে মাত্র ১৩টি কোম্পানির ১৯৬টি বাস-মিনিবাস সিএনজিতে চলে। অর্থাৎ, অনেক বাস সিএনজি থেকে তরল জ্বালানিতে ফিরেছে। এ ছাড়া কালো ধোঁয়া নির্গমনকারী অসংখ্য মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি চলছে রাজধানীতে। এসব কারণে দূষণ বাড়ছে। সরেজমিন গতকাল দুপুরে রাজধানীর বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প এলাকায় দেখা যায়, ধুলার কারণে কাছের গাড়ির নম্বর প্লেট স্পষ্ট বোঝা যায় না। গাছের পাতার সবুজ ঢেকে গেছে ধুলার আস্তরে। একটি যানবাহন গেলেই পেছনের পুরো এলাকা ধুলায় ঢেকে যাচ্ছে। রাজধানীর অলিগলিগুলো ইট-বালু-পাথরের দখলে। বালুর ওপর দিয়ে দ্রুতগামী যানবাহন ছুটে যাচ্ছে ধুলো উড়িয়ে। এ ছাড়া গত কয়েকদিনের পর্যবেক্ষণে কালো ধোঁয়া নির্গমনকারী উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাস-ট্রাকের দেখা মিলেছে সড়কে। রাজধানীর বাসিন্দারা বলছেন, দরজা-জানালা বন্ধ রাখার পরও ঘরের আসবাব-ফ্লোর দিনের মধ্যে কয়েকবার মুছতে হচ্ছে। মোছার এক-দুই ঘণ্টার মধ্যেই ফের ধুলার আস্তর পড়ছে।

সর্বশেষ খবর