সোমবার, ৩ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

ডলারে নির্ভরতা কমাবে সরকার

আন্তর্জাতিক লেনদেন হবে কারেন্সি সোয়াপে

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ভবিষ্যতের ঝুঁকি মোকাবিলায় মার্কিন ডলারের পাশাপাশি বিকল্প আর্থিক লেনদেনের কথা ভাবছে সরকার। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক লেনদেন, দায় ও ঋণের সুদ পরিশোধে ডলারের পরিবর্তে ইউরোপিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ইসিবি) এবং ব্যাংক অব রাশিয়ার ফিন্যান্সিয়াল মেসেজিং সিস্টেম ব্যবহারের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি কারেন্সি সোয়াপের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় লেনদেন করার বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে।

এলডিসি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় ডলার নির্ভরতা কমিয়ে বিকল্প লেনদেন ব্যবহারের এ বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বেশির ভাগ দেশই আন্তর্জাতিক লেনদেন সম্পন্ন করে থাকে ইউএস ডলারে। এমনকি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যও সম্পন্ন হয়ে থাকে মার্কিন ডলারে। এই একটি মাত্র মুদ্রায় লেনদেন নির্ভরতার কারণে একদিকে যেমন খরচ বাড়ছে, তেমনি ভবিষ্যতের ঝুঁকিও বাড়ছে। নানাবিধ কারণে সরকার এই মুহূর্তে এ ঝুঁকির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রায় ৯০ ভাগ  লেনদেন হয় মার্কিন ডলারে। গত এক দশকে আমদানির ক্ষেত্রে লেনদেনের প্রায় ৮৫ শতাংশ মার্কিন ডলারের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ছে, আর রপ্তানির  ক্ষেত্রে লেনদেনের প্রায় ৯৭ শতাংশ। মার্কিন ডলারের এই একক আধিপত্যে বাড়ছে বাণিজ্যিক ঝুঁকি। আমদানি ও রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে সরাসরি নিজেদের মুদ্রা বিনিময়ের সুযোগ (কারেন্সি সোয়াপ) থাকলে ঝুঁকি ও বাণিজ্যিক খরচ দুটোই কমে আসে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)-এর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, মার্কিন ডলারের বিকল্প কোনো মুদ্রা এ মুহূর্তে নেই। তবে নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশের  ক্ষেত্রে সেসব দেশের নিজস্ব মুদ্রা ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে, যা লেনদেনের খরচ অনেকাংশে কমিয়ে আনবে।

সূত্র জানায়, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণের ফলে বাংলাদেশের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা প্রস্তুতি, পরিকল্পনা গ্রহণ, বাস্তবায়ন ও মনিটরিং বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি জাতীয় কমিটি রয়েছে। ওই জাতীয় কমিটিকে সহায়তা করতে বিষয়ভিত্তিক আরও ৭টি উপকমিটি করা হয়েছে। ইনভেস্টম্যান্ট, ডমেস্টিক মার্কেট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট ডাইভারসিফিকেশন এই সাব-কমিটির একটি। গত ৫ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে ওই সাব-কমিটির বৈঠক হয়। সেখানেই ডলারের বদলে বিকল্প আর্থিক লেনদেন ব্যবহারের বিষয়টি উঠে আসে। সভার কার্যবিবরণী পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ডলার নির্ভরতা কমানোর জন্য দুটি সুপারিশ উঠে এসেছে। এক. খরচ কমানো এবং ভবিষ্যতের ঝুঁকি কমানোর জন্য ইউএস সুইফটের পাশাপাশি বিকল্প আর্থিক লেনদেনের নেটওয়ার্ক হিসেবে ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক (ইসিবি) এবং রাশিয়ান ব্যাংকের মেসেজিং সিস্টেম বিবেচনা করা; এবং দুই. মার্কিন ডলারে বাণিজ্যিক লেনদেনের পাশাপাশি প্রধান বাণিজ্যিক সহযোগীদের সঙ্গে কারেন্সি সোয়াপে লেনদেন বিবেচনা করা। ইনভেস্টমেন্ট, ডমেস্টিক মার্কেট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট ডাইভারসিফিকেশন সংক্রান্ত সাব-কমিটিতে আছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (গবেষণা) ড. মো. হাবিবুর রহমান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, বিশ্বের বেশির ভাগ দেশই ডলারে লেনদেন করে থাকে। এমনকি আমাদের আমদানি-রপ্তানির সিংহভাগ সম্পন্ন হয় মার্কিন ডলারে। সে কারণে এ মুহূর্তে বিকল্প লেনদেনে যাওয়ার চিন্তা করলেও ব্যবস্থাপনাগত জটিলতার কারণে সেটি সম্ভব হবে না।

কারেন্সি সোয়াপের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কর্মকর্তা জানান, এটি এমন একটি পদ্ধতি যেটি দুটি দেশের ঐকমত্যের ভিত্তিতে ডলারের বদলে অন্য একটি মুদ্রা ব্যবহারে সুযোগ থাকে। বাংলাদেশের সঙ্গে যেসব দেশের আমদানি-রপ্তানি প্রায় সমান বা কাছাকাছি সেসব দেশের সঙ্গে কারেন্সি সোয়াপ করলে সেটি ফলপ্রসূ হবে। এক্ষেত্রে লেনদেনের খরচও কমে যাবে।  যেমন, সম্প্রতি শ্রীলঙ্কাকে কারেন্সি সোয়াপ পদ্ধতিতে রিজার্ভ থেকে ডলারে ঋণ দিয়েছি আমরা।

সর্বশেষ খবর