সোমবার, ৩ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

বিয়েতে রাজি না হওয়ায় তিন সন্তানের মাকে হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক

রুনা আক্তার ও আবুল কালাম মিয়া দম্পতির ১১ বছরের সংসারে তিনটি সন্তান রয়েছে। তিন বছর আগে গ্রামের বিভিন্ন এনজিও থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে শ্রমিক ভিসায় সৌদি আরব যান আবুল। সেখানে গিয়ে পরিবারের খরচ দেওয়া বন্ধ করে দেন। কিন্তু ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য চাপ আসে রুনার ওপর। শ্বশুরবাড়ি থেকে নিয়ে এই ঋণের টাকা তাকেই পরিশোধ করতে চাপ দেন আবুল। যদিও রুনার পরিবার ছিল অস্বচ্ছল। একপর্যায় রুনার ওপর শুরু হয় নির্যাতন। এতে বাধ্য হয়ে নারী নির্যাতনের একটি মামলাও করেন রুনা। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে আবুল সম্প্রতি তালাক দেন রুনাকে। এতে রুনা তার তিন সন্তানকে নিয়ে বাপের বাড়িতে এসে বাধ্য হয়ে কাজ শুরু করেন গ্রামের সবজি খেতে। গত ১৩ ডিসেম্বর নরসিংদীর রায়পুরার চর মরজালের একটি ধানখেত থেকে রুনার (২৮) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। কে বা কারা এবং কি কারণে এই হত্যাকা টি ঘটিয়েছে তা নিয়ে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ১৭ ডিসেম্বর রুনার বাবা মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া বাদী হয়ে রায়পুরা থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন। ঘটনাক্রমে শ্বশুরবাড়ির লোকদের ওপর সন্দেহ হলেও গুরুত্বের সঙ্গে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ঘটনাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে। এতে পাওয়া যায় হত্যাকাে র চাঞ্চল্যকর তথ্য। রুনার দূর-সম্পর্কে এক মামা আব্দুর রাজ্জাক তাকে নতুন করে বিয়ের প্রলোভন দেখায় খোরশেদ মিয়া নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। এজন্য খোরশেদের কাছ থেকে ৯০ হাজার টাকা নিয়েছিল রাজ্জাক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই বিয়েতে রাজি না হওয়ায় রুনাকে পরিকল্পিতভাবে খুন করেন রাজ্জাক ও খোরশেদ। গতকাল দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মুক্তা ধর। তিনি বলেন, এ হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে ভিকটিমের পরিবার, ঘটনাস্থল ও আশপাশ এলাকার বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পরে সিআইডির একাধিক টিম হত্যাকাে র সঙ্গে জড়িত আসামিদের শনাক্ত করে। খোরশেদকে নেত্রকোনার কলমাকান্দা এবং রাজ্জাককে নরসিংদীর রায়পুরা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

তিনি বলেন, গত ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রুনা বাবার বাড়ি থেকে মামার বাড়ি যাওয়ার কথা বলে বের হয়। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। রাত ৮টার দিকে পরিবারের সদস্যরা তার মোবাইলফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার নম্বর বন্ধ পায়। ১৩ ডিসেম্বর সকালে স্থানীয় লোকজন গ্রামের ধানখেতে রুনার লাশ পড়ে থাকতে দেখে। শ্বশুরবাড়ি থেকে রুনা সন্তানদের নিয়ে যখন বাবার বাড়িতে যায়, তখন সবাই জেনে যায় রুনাকে তার স্বামী তালাক দিয়েছে। রুনা জীবিকার জন্য সবজিখেতে কাজ শুরু করেন।

এরই মধ্যে নতুন করে বিয়ের জন্য প্ররোচনা দিতে থাকেন দূর-সম্পর্কের মামা পোল্ট্রি ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর চার সন্তানের জনক বৃদ্ধ খোরশেদের সঙ্গে বিয়ে ঠিক করেন। এজন্য ৯০ হাজার টাকা খরচাও আদায় করেন রাজ্জাক। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বিয়ের জন্য অমত জানান রুনা। এ নিয়ে রাজ্জাক ও খোরশেদ ক্ষিপ্ত হয়। রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে ধানখেতে নিয়ে গিয়ে হাত-পা বেঁধে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে ও চোখ উপড়ে ফেলে। এই ঘটনায় আরও দুজন জড়িত। তাদের ধরতে অভিযান চলছে।

সর্বশেষ খবর